

জলিলুর রহমান জনি, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : শরতের হাওয়ায় ভেসে আসছে কাশফুলের দোল আর ঢাকের শব্দ। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার সোনামুখী গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকে থাকা এই সোনামুখী মেলা এখনো মানুষকে টানে তার ঐতিহ্যের টানে।
দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই মেলা আজও কাজিপুরের মানুষের আনন্দ, ঐক্য ও সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে আছে।
স্থানীয়দের ভাষায়, প্রায় তিন শত বছর আগে শুরু হয় এই মেলার যাত্রা। তখন ছিল নদীনির্ভর জীবন—মানুষ নৌকা চেপে দূরদূরান্ত থেকে আসতো সোনামুখীতে। তাই একে অনেকে ডাকেন “কাঠের মেলা” নামে।
আজও সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যায়নি। শুধু বদলেছে সময়ের রূপ—এখন মেলার চারপাশে বৈদ্যুতিক আলো, মাইক, ও আধুনিক বিনোদনের আয়োজন।ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ সরগরম। আশপাশের ১০-১২টি গ্রামের মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে মেলায় ছুটে আসছেন।শিশুদের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, মিনি ট্রেন, ম্যাজিক শো, মোটর রাইড ও ঝুলন।
মেলায় বসেছে শতাধিক দোকান—দেশজ পণ্য, খেলনা, পোশাক, হস্তশিল্প, মাটির হাঁড়ি, গয়না, পিঠা-পায়েস, মিষ্টান্নসহ নানা ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে।
মানুষের মুখে আনন্দের হাসি “আমাদের দাদাদের সময় থেকে এই মেলা হয়ে আসছে। তিন বছর বন্ধ থাকার পর আবারও ফিরে আসায় সবার মনে আনন্দ।”— আবদুল গফুর, স্থানীয় শিক্ষক গ্রামের তরুণরা বললেন, “এই মেলা আমাদের সংস্কৃতির পরিচয়। বছরের একবার এই সময়টাই আমরা সবচেয়ে বেশি অপেক্ষা করি।”
মেলা প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও আয়োজক কমিটি একসঙ্গে কাজ করছে। রয়েছে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প, স্বাস্থ্যসেবা বুথ ও বিশ্রাম কেন্দ্র।
এছাড়া থাকছে নৌকা বাইচ, পিঠা উৎসব, হস্তশিল্প প্রদর্শনী ও সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আগামী ১০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে সপ্তাহব্যাপী এই আয়োজন।
সোনামুখী মেলা কেবল ব্যবসা-বাণিজ্যের নয়, এটি গ্রামীণ আত্মার উৎসব। এখানে মিশে আছে স্মৃতি, ভালোবাসা ও ঐতিহ্যের গাঁথা।
তিন শত বছরের পুরনো এই মেলা আজও প্রমাণ করে—সময়ের পরিবর্তন হলেও, বাংলার লোকজ সংস্কৃতি এখনো জীবন্ত সোনামুখীর মেলার ভেতরেই।