

স্বপন রবি দাশ ,হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:একসময় ফেসবুকের ইনবক্সে শুরু হয়েছিল দু’জনের আলাপ। একে অপরের সঙ্গে স্বপ্ন ভাগাভাগি করে এগিয়ে গিয়েছিলেন তারা। কিন্তু সেই ভালোবাসার গল্প খুব দ্রুতই পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে। হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মো. মাহাফুজুর রহমান (২৮) এর সঙ্গে সংসার জীবনে প্রবেশ করা তরুণী মোছাঃ তাছমিনা আক্তার (২৩) এখন অভিযোগের পাহাড় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।
ইনবক্স থেকে হাতিরঝিল: এক অপ্রত্যাশিত বিয়ে
২০২১ সালে পড়ালেখার ফাঁকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাদের পরিচয়। প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর ঘনিষ্ঠতা। একসময় সম্পর্কের চাপ এমন পর্যায়ে যায় যে, ঢাকার হাতিরঝিলে আত্মীয়ের বাসায় আটকে রেখে জোরপূর্বক বিয়ে করেন কনস্টেবল মাহাফুজুর। তাছমিনার ভাষায়, “আমি তখন বুঝতেই পারিনি, এভাবে বিয়ে আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে।”
যৌতুকের দাবি ও ভাঙা স্বপ্ন
বিয়ের পরই শুরু হয় যৌতুকের চাপ। একের পর এক দাবি—স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, এমনকি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দেওয়া অর্থও। কিন্তু স্বপ্নের সংসার গড়ে ওঠেনি। বরং প্রতিবার যৌতুকের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে নেমে আসত নির্যাতন। তাছমিনার অভিযোগ, “যৌতুক না দিলে মারধর করত, অপমান করত। অথচ স্বামী হওয়ার পরও আমাকে কখনো তার পরিবারের কাছে জায়গা দেয়নি।”
নতুন বিয়ে, ভাঙা সম্পর্ক
যখন সংসার টিকিয়ে রাখার লড়াই করছিলেন তাছমিনা, তখনই জানতে পারেন মাহাফুজুর অন্য এক নারী পুলিশ সদস্যের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন এবং পরে বিয়ে করেছেন। নিজের বিয়ে টিকিয়ে রাখার স্বপ্ন তখন আরও ভেঙে যায়। তিনি বলেন, “আমি শুধু অবহেলা পাইনি, প্রতারণার শিকারও হয়েছি।”
হুমকি ও অনিশ্চয়তায় দিনযাপন
তাছমিনা জানান, এখন তিনি ভরণপোষণ থেকেও বঞ্চিত। উপরন্তু নানা হুমকি পাচ্ছেন। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। বাধ্য হয়েই সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া
বাহুবল থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কেউই এই অভিযোগে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, অভিযোগটি তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
প্রশ্নবিদ্ধ এক প্রতীক
একজন পুলিশ সদস্য, যিনি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেবার শপথ নিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাঙনের গল্প নয়; এটি সমাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, “এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, না হলে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচারের আশা হারাবে।”
তাছমিনার শেষ কথা
সবকিছুর পরও তাছমিনা এখনো ন্যায়বিচারের প্রত্যাশী। তার কণ্ঠে কষ্ট মিশ্রিত অনুরোধ, “আমি চাই না অন্য কোনো মেয়ের জীবন এভাবে ধ্বংস হোক। আমি শুধু ন্যায়বিচার চাই।”