ইবিতে বিভাগের নাম পরিবর্তন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন
নূর ই আলম ,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত আল ফিকহ এন্ড লিগাল স্টাডিজ বিভাগের সংস্কার নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার্থীদের দুইপক্ষ। একটি পক্ষ বিভাগের নাম পরিবর্তন করে সিলেবাস সংস্কারের দাবিতে এবং অপরপক্ষ বিভাগের স্বাতন্ত্র্যতা রক্ষার্থে মানববন্ধন করেছে৷ মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বেলা ১২ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এই মানববন্ধন করে দুইপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিকহ্ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ দীর্ঘদিন ধরেই গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে আইন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিভাগ হিসেবে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে আসছিলো। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা না করেই রোজার ছুটি শুরু হওয়ার আগে শেষ কর্মদিবসে বিভাগের শিক্ষকরা মিটিং করে ধর্মতত্ত্ব অনুষদের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিভাগীয় সভাপতির সাথে দেখা করে সিদ্ধান্তটি বাতিলের দাবি জানায়। কিন্তু বিভাগ থেকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হবে না বলে জানালে, শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরবর্তীতে প্রশাসনের আশ্বাসে তারা ফিরে যায়। আজকে ভর্তি কমিটির সভা থাকায় আবারো প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হয় তারা।
অন্যদিকে, বিভাগে শরীয় আইনের কোর্স থাকায় এবং আরবি ভাষা জানা না থাকায় অনেক টার্ম বুঝতে সমস্যার সম্মুখীন হন উল্লেখ করে অপর অংশের শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত আরবী কিংবা ফিকহ বিষয়ে জানা শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় আল-ফিকহ সম্পর্কে আলাদা ২০ নম্বরের পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করানো হতো। পরবর্তীতে এই ধারা পরিবর্তন করে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ টি এবং অন্যান্যদের জন্য ৪০ টি আসন নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও। দুই শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত এ ধারা থাকলেও পরে এ নিয়মও পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে বিভাগটিতে ভর্তির জন্য আরবী বা ফিকহ না জানলেও ভর্তি হতে পারেন শিক্ষার্থীরা। এতে করে বিভাগের স্বকীয়তা নষ্ট হচ্ছে এবং আরবি না জানা শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হওয়ায় তারা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বিভাগে প্রায় ২৫০০ নাম্বারের আরবীতে ফিকহের বিষয়ে পড়ানো হয়। কিন্তু বর্তমানে আরবীতে অদক্ষ শিক্ষার্থীদের পক্ষে এসব বিষয়ে পাস করাই কঠিন হয়ে পড়েছে। পরবর্তীতে তাদের জন্য বাধ্য হয়ে বাংলা ভার্সনে লেখার সুযোগ দেন শিক্ষকরা। ফলে প্রচলিত আইনে পারদর্শী হলেও ফিকহের বিষয়ে পারদর্শী হতে পারছেন না তারা।
আইন অনুষদের অভ্যন্তরেই থাকতে চাওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের ৩৪০০ নম্বরের আইন কোর্স পড়ানোর কথা থাকলেও আল ফিকহ বিভাগে পড়ানো হয় ২২০০ নম্বরের কোর্স। ১৩৬ ক্রেডিট পড়ানোর কথা থাকলেও তা পড়ানো হয় না। এছাড়া তীব্র সেশনজটে ভুগছেন শিক্ষার্থীরা। এসব সমস্যা নিয়ে বারবার বিভাগে দাবি জানানো হলেও কোন উন্নতি হয়নি। বার কাউন্সিল চাইলে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের যেখানেই আইন পড়ানো হয় তার মান তদারকি করতে পারে। তাই ইবির আল ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ ধর্মতত্ত্ব অনুষদভুক্ত করা হলে, বার কাউন্সিল চাইলে কোর্টে সনদ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এজন্য আমরা ধর্মতত্ত্ব অনুষদের মাধ্যমে ভর্তি পদ্ধতির বিরুদ্ধে। ‘আমরা চাই বিগত বছরের মতো গুচ্ছের মাধ্যমে এই বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হোক, আইন অনুষদে ভর্তির শর্তাবলী ব্যতীত অন্য কোন শর্তাবলী আরোপ করা না হোক, আইন অনুষদে ভর্তির শর্তাবলী ব্যতীত অন্য কোন শর্তাবলী আরোপ করা না হোক এবং সিলেবাস সংস্কার করে এলএলবি ডিগ্রির উপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন করা হোক।’
এদিকে ধর্মতত্ত্ব অনুষদের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষের শিক্ষার্থী ছালেহ আহমেদ বলেন, আমাদের বিভাগটি আইন অনুসাদের একটি বিশেষ সাহিত্য বিভাগ আর ফিকহ মূলত ইসলামী শরীয়া সংশ্লিষ্ট আর ইসলামী শরীয়া মানেই আরবি। প্রতিটি বিষয়ে পড়াশোনার জন্য বেসিক কিছু জ্ঞান থাকতে হয়। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের যেমন বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হয় তেমনি ফিকহ পড়তে আসা শিক্ষার্থীদেরও আরবি জানা থাকতে হবে। ফ্যাসিস্ট আমলের সিদ্ধান্ত আমরা কোনভাবেই মানব না। বিভাগে যারা পড়াশোনা করতে আসবে তারা যেন ন্যূনতম আরবি দক্ষতা নিয়ে আসে। মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীরা না আসায় বিভাগ স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য হারাচ্ছে।