নেত্রকোনায় বিলুপ্তির পথে কুইচ্চা,কাছিম, কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক

Share the post
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় বর্তমান সময়ে খাল, বিল, ডোবা, নালা ও পুকুরসহ নানা রকম প্রতিকুল পরিবেশের কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে জীববৈচিত্র। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগণের আমিষের চাহিদা মেটানো কাঁকড়া, শামুক,  ঝিনুক প্রায় বিলুপ্তির পথে। ফলে এই সব ক্ষুদ্র নৃ- জনগোষ্ঠী আমিষের অভাবে পুষ্টিহীনতায় পড়ছে।কিছু অসাধু চক্র নির্বিচারে প্রকৃতি ধ্বংসে মেতে উঠেছে। সরকারী খাল, বিল, ডোবা নালা গুলো প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। প্রভাবশালীরা এ গুলো দখল করে ভরাট করে দিচ্ছে। আবার কেউ কেউ পুকুর খনন করে বাণিজিকভাবে মাছ চাষ করছে। এতে করে কুইচ্চা কাছিম কাঁকড়া, শামুক ও ঝিনুকের আশ্রায়স্থল হারিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও জমিতে কিটনাশক ব্যবহারের ফলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগণের খাদ্য কুইচ্চা কাছিম কাঁকড়া, শামুক ও ঝিনুক প্রায় বিলুপ্তির পথে। জানা গেছে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে আমিষের চাহিদা মেটাতো কুইচ্চা কাছিম কাঁকড়া,শামুক-ঝিনুক ও বিভিন্ন পোকামাকড় খেয়ে আমিষের চাহিদা মেটাতো। এটি তাদের জনপ্রিয় খাবার হিসেবে প্রায় প্রতিদিনই খেত। আদিকাল থেকেই বিভিন্ন খাল, বিল, ডোবা, নালা ও পুকুর থেকে এসব খাবার আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করত তারা। প্রকৃতি দিত তাদের খাদ্যের জোগান।
বর্তমানে নানা প্রতিকুলতার কারণে পানি উৎসের স্তর কমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন আর পানি উৎসের সংকটের কারণে বিপন্ন হচ্ছে কুইচ্চা কাছিম কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, বিভিন্ন পোকামাকড় আর অনেক প্রজাতির মাছ ও প্রাকৃতিক শাকসবজি। জেলার বিভিন্ন গ্রামে বসবাসরত কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা তাদের খাদ্যের জোগান করত খাল, বিল, ডোবা, নালা ও পুকুর থেকে। বর্তমানে কিছু অসাধু চক্র এ গুলো দখল করে নির্বিচারে প্রকৃতি ধ্বংসে মেতে উঠেছে। পানি থেকে পাওয়া যেত কুইচ্চা কাছিম কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, কুচিয়া বিভিন্ন পোকামাকড় আর অনেক প্রজাতির মাছ ও প্রাকৃতিক শাকসবজি। এগুলো নির্বিচারে ধ্বংসের কারণে তাদের নিত্যদিনের খাদ্যাভ্যাস বিলুপ্তির পথে। আদিবাসী ছাত্র অপুর্ব কুমার সিং বলেন, কুইচ্চা কাছিম কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, কুচিয়া প্রজননের সময় অসাধু মৎস্য শিকারীরা চায়না দুয়ারী সহ বিভিন্ন প্রকৃতির জাল দিয়ে মাছ ধরার সাথে এগুলো ধ্বংস করছে। এতে আমিষ জাতীয় খাদ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনগন। এখন থেকে এ গুলো রক্ষা না করলে ভবিষ্যতে আমিষ জাতীয় খাদ্য-সংকটের পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে যাবে।
আদিবাসী রাম প্রসাদ মাহাত বলেন, সরকারী ডোবা নালা ও পুকুর গুলো লিজ দেওয়ায় কুইচ্চা কাছিম কাঁকড়া,শামুক, ঝিনুক ও কুচিয়া প্রায় বিলুপ্তির হয়ে যাচ্ছে। আমাদের (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) নিত্যদিনের খাদ্যের তালিকার মধ্যে রয়েছে কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, কুচিয়া বিভিন্ন পোকামাকড় আর শাকসবজি। কিন্তু বর্তমানে প্রকৃতি থেকে উৎসারিত এসব জিনিস (খাদ্য) হারিয়ে যাচ্ছে। এতে করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিত্যদিনের খাদ্যের তালিকা থেকে বাদ পড়ছে আমিষ জাতীয় খাদ্য। তাই আমাদের দাবি অচিরেই তাদের খাদ্যের স্থল গুলো রক্ষা করা সহ বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় প্রজাতির মাছ, শামুক ও ঝিনুকের প্রজনন বৃদ্ধি করে এবং কৃত্রিমভাবে কুইচ্চা কাছিম শামুক ও ঝিনুকের চাষাবাদের ব্যবস্থা করতে হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের বাসভবনে ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মুছে ফেলা হয়েছে

Share the post

Share the post হৃদয় আহমেদ ভালুকা, ময়মনসিংহ: রক্তাক্ত জুলাই আগষ্ট চেতনার গ্রাফিতি। গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর বিপ্লবী চেতনা ধরে রাখতে শিক্ষার্থীরা ময়মনসিংহ নগরীর বাসা বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি অফিস ও আদালতসহ জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবনের দেয়াল জুড়ে জুলাই-আগষ্ট চেতনার গ্রাফিতি অঙ্কন করেছি। বিপ্লবী শিক্ষার্থীদের আঁকা সেই রক্তাক্ত জুলাই আগষ্ট […]

ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় এর উদ্যোগে গাজায় চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল

Share the post

Share the postনিউজ রিপোর্ট:৮ এপ্রিল ২০২৫, মঙ্গলবার – ময়মনসিংহ মহানগরের অধীনস্থ ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় ছাত্রদল গাজায় চলমান ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার প্রতিবাদে একটি অবস্থান কর্মসূচি এবং বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে তারা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানায়, গাজায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে।   মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রদল সদস্যরা সকাল ১১ টার দিকে মিছিলটি শুরু […]