কৃষি ও প্রকৃতির পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখতে নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে সহজে জৈব সার তৈরি

Share the post
সোহেল খান দূর্জয়,নেত্রকোনা : প্রতিবছর নেত্রকোনায় প্রচুর পরিমাণে নারিকেল উৎপাদিত হয়। নেত্রকোনার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নারিকেল পাঠানো করা হয়। খুব সহজেই নারিকেলের ফলন পাওয়া যায়। প্রাচীন আমল থেকে নারিকেল চাষ হয় বাড়ির আঙিনায়। এখন বাণিজ্যিকভাবে নারিকেল চাষ হচ্ছে। শুধু নারিকেল নয় এর ছোবড়াও অনেক কাজে লাগে। বিশেষ করে নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে জৈব সার তৈরি করা যায়। নারিকেলের খোসা থেকে আঁশ তৈরির সময় খোসার ৬৬% তুষ বের হয়। নারিকেলের তুষে ৩১% সেলুলোজ ও ২৭% লিগনিন জাতীয় জৈব পদার্থ আছে এবং এর কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত ১০৪:১। সেলুলোজ খুব শক্ত পদার্থ এবং এ কারণে নারিকেলের তুষ ১০-১৫ বছর পরও মাটিতে অক্ষত অবস্থায় থাকে। লিগনিন পচন-সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বা অণুজীবের কার্যক্ষমতা কমায়। নারিকেলের তুষে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় সব রকম পুষ্টি থাকে বলে তুষ পচালে উৎকৃষ্ট জৈব সারে রূপান্তরিত হয়। ভারত, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে নারিকেলের তুষের সাথে চুন (প্রতি ১০০০ কেজি তুষে ৫ কেজি চুন) ও মাশরুম স্পন বা বীজ মিশিয়ে পচানো হয়। নারিকেলের তুষের মধ্যে মাশরুম চাষ করেও তা পচানো যায়।
মাশরুমে ক্লোরোফিল না থাকায় সূর্যের আলো ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদন করতে পারে না। দৈহিক বাড়-বাড়তির জন্য মাশরুম নারিকেলের তুষের সেলুলোজ হতে শর্করা জাতীয় খাদ্য সংগ্রহ করে, ফলে নারিকেলের তুষের সেলুলোজ কঠিন পদার্থ হতে সরলতম পদার্থে রূপান্তরিত হয় ও সহজে পচে যায়। তুষে মাশরুম ও চুন প্রয়োগ করলে ১ মাসের মধ্যে হিউমাস জাতীয় কালো পদার্থে পরিণত হয়। হিউমাস রাসায়নিক সারের মতো পুষ্টি সমৃদ্ধ নয়, তবে মাটিতে দীর্ঘদিন সক্রিয় থেকে মাটির অণুজীবের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, মাটির ভৌত গুণাবলি ধরে রাখে এবং গাছের জন্য প্রয়োজনীয় মুখ্য ও গৌণ সব ধরনের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে। হিউমাস মাটির ধাতব আয়ন ধরে রাখতে সাহায্য করে। এসব আয়নগুলো গাছের আয়ন বিনিময় ক্ষমতা বাড়ায়, মাটি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করার ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিকেল অপসারণ করে গাছের বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। ফ্রি-রেডিকেল এক ধরনের ক্রিয়াশীল যৌগমূলক যা গাছের ক্লোরোফিল নষ্ট করে দেয়।
গাছের স্বাভাবিক রেচন প্রক্রিয়া থেকেই ফ্রি-রেডিকেল তৈরি হয়। জমিতে বেশি বেশি রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে ফ্রি-রেডিকেলও বেশি তৈরি হয়। ফল জাতীয় সবজি যেমন টমেটো, করলার ক্ষেত্রে ফ্রি-রেডিকেলের কারণে একবার ফল আসলেই গাছের পাতা শুকিয়ে মারা যায়। এসব ধাতব আয়নগুলো নামে এক ধরনের এনজাইম তৈরির মাধ্যমে ফ্রি-রেডিকেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। নারিকেলের তুষের বিশেষ গুণ হচ্ছে ওজনের ৮-১০ গুণ পানি ধারণ ক্ষমতা। তাই সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি জানা থাকলে নারিকেলের অব্যবহৃত এ তুষ সরাসরি নার্সারি ব্যবসা ও ফুল চাষে ব্যবহার করে যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র নেত্রকোনায় কর্মরত গবেষকরা ২০০৮ সালে নারিকেলের আঁশ তৈরি ও তুষ পচানোর ওপর এক গবেষণা পরিচালনা করেন। ওই গবেষণায় গবেষকরা মাশরুমের বীজ ও চুন প্রয়োগ করে দ্রুত নারিকেলের তুষ পচানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। হাইড্রোলিক মেশিনে নারিকেলে তুষের ব্লক তৈরি করে তাতে চারা লাগানোর ওপরও গবেষকরা গবেষণা করেন।
তাছাড়া নারিকেল থেকে তৈরি জৈব সারে আছে অনেক রকমের এনজাইম ও কোষীয় পদার্থ যা শিকড় দিয়ে গাছের মধ্যে প্রবেশ করে ও গাছের রোগ প্রতিরোধ ও পোকার আক্রমণ প্রতিহত করার বাড়তি ক্ষমতা প্রদান করে। নারিকেল থেকে তৈরি জৈব সারে আছে ৬০৭৫% জৈব পদার্থ, ০.৭৬/ নাইট্রোজেন, ০.৪% হারে ফসফরাস ও পটাশ, ০.২% সালফার ও ০.০০৪ বোরন। ক্রমবর্ধমান হাইড্রোপোনিকউপায়ে সবজি চাষের জন্য কোকোপিট ব্যবহার করা হয় যেন কোনোভাবেই গাছ বা চারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়; কোকোপিট উদ্ভিদের শিকড় উন্নয়নের জন্য একটি চমৎকার স্তর এবং গাছ বা চারা রোপণ করার সময় কোনো এজেন্ট প্রয়োজন হলে জৈব সারের সাথে কোকোপিটের সংমিশ্রণে একটি গ্রোয়ার মিডিয়া তৈরি করে সরাসরি চারা তৈরি করা যেতে পারে।নিত্য প্রয়োজনীয় সব চাহিদার জোগান দিলেও নেত্রকোনায় নারিকেল অনেকটা অবহেলিত রয়ে গেছে। নারিকেল গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদার করার মাধ্যমে নারিকেলের ফলন ও উৎপাদন বাড়ানো জরুরি। একই সাথে নার্সারির চারা তৈরি কলম লাগানোর ক্ষেত্রে নারকেলের ছোবড়া নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। একে কাজে লাগিয়ে কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

ইউনাইটেড চ্যারিটি ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বিভাগীয় নতুন কমিটি ঘোষণা।

Share the post

Share the postমোঃ রুবেল: ইউনাইটেড চ্যারিটি ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ।স্বেচ্ছায় রক্তদান নিয়ে কাজ করছে সামাজিক সংগঠন’ ইউনাইটেড চ্যারিটি ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলায় ও ৮ বিভাগের চলোমান কর্যক্রম। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি নিয়ে নতুন পথ চলার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল। একের কাঁদে অন্য হাত,মানবতার বাঁধন টিকে থাক,এই স্লোগানকে বুকে লালন করে একদণ তরুণ স্বেচ্ছাসেবক মানবতার […]

চন্দনাইশে মানবতার ফেরিওয়ালার পক্ষ থেকে এক নারীকে সেলাই মেশিন উপহার

Share the post

Share the postমোঃ রুবেল খান, চট্টগ্রাম:চন্দনাইশের মধ্যম হাশিমপুর ৪নং ওয়ার্ডের মোজাহের পাড়ার বাসিন্দা মুন্নি নামে এক নারীকে সেলাই মেশিন উপহার দিয়েছে মানবতার ফেরিওয়ালা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নারী উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।