যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা, নেত্রকোনায় ঝুঁকিপূর্ণ রেল সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল

Share the post
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনায় ঝুঁকিপূর্ণ রেল সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রেন। যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা করছে যাত্রী সাধারণ। এই অঞ্চলের যাত্রী পরিবহন ও পণ্য পরিবহনের কথা চিন্তা করে তৎকালীন বৃটিশ সরকার ১৯২৭ সালে ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পর্যন্ত ট্রেন লাইন স্থাপন করে। এই রেল পথে নেত্রকোনা সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা এলাকায় কংশ নদীর উপর একটি এবং মোহনগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় একটি নদীর উপর আরেকটি রেল সেতু রয়েছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনী যাতে রেল পথে সৈন্য ও গোলাবারুদ পরিবহন করতে না পারে তার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা ঠাকুরাকোনা রেল সেতু বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। স্বাধীনতার পর রেল সেতু সংস্কার করে রেল চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও রেল সেতু দুটি যথাযথ সংস্কার না করায় তা হয়ে পড়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে ঠাকুরাকোনা ও মোহনগঞ্জ সেতুর পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে পিলারের ইট। যে কোনো সময় পিলার ভেঙে পড়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে রেল পারাপারের সময় সেতু গুলোতে যে কম্পনের সৃষ্টি হয় তাতে আশপাশের লোকজনের মাঝে এক ধরনের আতংক দেখা দেয়।
এদিকে কদম দেওলী গ্রামের আবুল কালাম আজাদ জানান, খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এই রেল সেতুটি। কিছুদিন আগে রেল লাইন সংস্কার হলেও রেল সেতুটি সংস্কার করেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে ছোট বড় দুর্ঘটনা।মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আনিছুর রহমান বলেন, ঝুকিপূর্ণ সেতুটির কাঠের স্লীপার গুলোতে চিকন চিকন কাঠের চটি দিয়ে কোন রকমে জোড়া তালি দিয়ে রাখা হয়েছে। এতে যে কোনো মুহুর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। সাংস্কৃতিকর্মী জিয়াউর রহমান খোকন বলেন, সেতুর উপর দিয়ে ট্রেন যাওয়ার সময় ব্যাপক কাঁপন ধরে। এতে যাত্রীরা আতংকিত হয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে বারহাট্টা রেল স্টেশন মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি রেলসেতু ঝুকিপূর্ণের কথা স্বীকার করে বলেন, রেলসেতু সংস্কার ও নিমার্ণ করার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব রেলের প্রকৌশল বিভাগের। আমরা শুধু ঠিক মতো ট্রেন আসছে যাচ্ছে কী-না এবং যাত্রীরা টিকেট করছে কিনা তা দেখ ভাল করি। আরো জানা গেছে, ময়মনসিংহের সঙ্গে মোহনগঞ্জের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল ১৯২৭ সালে। তখন ট্রেন চলাচলের সুবিধার জন্য ঠাকুরাকোনা ধনাইখালী নদীর ওপর একটি রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে এই রেলসেতু নির্মিত হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিক্রম করার পর আজও এই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে নিয়মিত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেতুটির একটি অংশ বোমা বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেতুটির পুনর্নির্মাণের কাজ শেষে পুনরায় সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল বলে জানান হানিফ আহমেদ নামে স্থানীয় প্রবীণ এক ব্যক্তি। সেতুটি অনেক পুরোনো হলেও এটির রক্ষণাবেক্ষণ হয় না বললেই চলে। তাই দিন দিন সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে ট্রেন চলাচলের জন্য। ট্রেন পারাপার হতে গিয়ে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ব্যক্তি ও রেলওয়ের কর্মীরা। এ জন্য সেতুটির সংস্কারকাজ জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ এখনো সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তাঁরা হতাশা প্রকাশ করেন।
সম্প্রতি ঠাকুরাকোনা এলাকা সংলগ্ন লোহার পাতের তৈরি এই রেল সেতুতে গিয়ে দেখা যায়, অনেক স্থানেই রং উঠে গিয়ে মরচে পড়েছে। নিচের পিলারগুলোতে কিছু স্থানে ইটের ওপর পলেস্তারা নেই। আবার কিছু অংশে দুটি ইটের সংযোগস্থলে সিমেন্ট সরে গিয়ে ফাঁকা হয়ে আছে। তবে সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হলো, অনেক স্থানে ক্লিপ নেই, কিছু অংশে নাটবল্টু নেই। কাঠের স্লিপারগুলো বেশির ভাগই ক্ষয় হয়ে গেছে। রেললাইনের মাঝে মাঝে কিছু অংশে স্লিপারই নেই। তারপরও এর ওপর দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন ট্রেন চলাচল করছে। প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তোলার সময় মহুয়া কমিউটার এবং মোহনগঞ্জ লোকাল নামে দুটি ট্রেন তুলনামূলক ধীরগতিতে সেতু পার হচ্ছিল। তখন সেতুতে ঝাঁকুনি অনুভূত হয়েছে। এছাড়াও এই সেতু দিয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস এবং হাওর এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন চলাচল করে। ময়মনসিংহ রেলস্টেশন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরাকোনা রেলসেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন হাওর এক্সপ্রেস ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন, মহুয়া কমিউটার এবং একটি লোকাল ট্রেন চলাচল করে। দুজন ট্রেনচালক বলেন, পুরোনো এই সেতুর ওপর দিয়ে তাঁরা সাবধানে, ধীরগতিতে ট্রেন চালান। গতি থাকে ২৫-৩০ কিলোমিটার। এরপরও এটি কেঁপে ওঠে। দুর্ঘটনার শঙ্কা তাঁরাও করেন। সেতুর তদারকি ও সংস্কার হলে এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হতো না। রেলওয়ের ময়মনসিংহ অঞ্চলের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সেতুটির দুরবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, এই সেতুটি পুরোনো হয়েছে; তাই অনেক স্থানে পলেস্তারা ক্ষয় হয়েছে এবং অনেক স্থানে সিমেন্ট সরে গিয়ে ফাঁকা হয়ে গেছে। তিনি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল প্রধান কার্যালয়ে সংস্কারের আবেদন করেছেন। সেখান থেকে দরপত্র আহ্বান ও অর্থ ছাড় হলেই সেতুটির সংস্কারকাজ শুরু হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

নেত্রকোনায় আওয়ামী নেতা কর্মীরা জামিন না পাওয়ায় আদালত চত্বরে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : বিশেষ সূত্রে জানা যায় গত (২৪ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার নেত্রকোনায় আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গিয়ে জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় আদালতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়েছেন আসামিরা। এসময় হট্টগোল সৃষ্টি হয়। এই ঘটনার সময় আসামিদের পাশে থাকা এক যুবককে মারধর করার অভিযোগও ওঠেছে। গত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে এমনই ঘটনা ঘটেছে […]

নেত্রকোনায় বোরো আবাদে ব্যস্ত হাওরাঞ্চলের কৃষক, দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : নেত্রকোনার ১০ উপজেলার মধ্যে তিনটি হাওরাঞ্চল। এই তিন উপজেলা হলো মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী ও মদন। এ তিনটিতে বর্তমানে পুরোদমে চলছে বছরের প্রধান ফসল বোরো ধানের আবাদ। প্রতিদিনই তীব্র শীত উপেক্ষা করে বোরো আবাদে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে বোরো আবাদ করতে […]