নেত্রকোনায় ভরা মৌসুমে বাজারে পাটের সরবরাহ কম পাটের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না চাষিরা

Share the post
সোহেল খান দূর্জয় নেত্রকোনা : পাট উৎপাদনের রাজধানী খ্যাত নেত্রকোনায় চাষীদের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে চোখে মুখে নেই কোনো হাসি। উৎপাদন মৌসুমেও বাজারে রপ্তানিযোগ্য এই পণ্যটির উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো নয়। কৃষকের চোখে মুখে চিন্তার কালো ভাজ। কারণ যে দোকানেই পাট যাচ্ছে, প্রত্যাশিত মূল্যের খবর নেই তাদের কাছে।নেত্রকোনায় জনপ্রিয় পাটের বাজার হিসেবে বিখ্যাত নেত্রকোনার পাটপট্টি,বারহাট্টা বাজার।বারহাট্টা বাজার সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার এখানে বসে হাট, মোহনগঞ্জ বাজার বসে বুধবার।  এই হাটে দূর দুরান্ত থেকে আসে মানুষ কেনাকাটার জন্য। এই বারহাট্টা বাজারে যেকোনো মৌসুমে এ সময় বাজারে ভরা ছিলো কৃষকের পাট কিন্তু হাটের দিনও শনিবার ও মঙ্গলবার পাট বেচা কেনায় ছিলো মন্দা ভাব।
সরেজমিনে বারহাট্টা বাজারটিতে গিয়ে দেখা ও জানা যায়, অল্প কিছু চাষী তাদের পরিবারের চাহিদা মেটাতে কেউ ভ্যানে করে, কেউ মাথায় করে,তাদের কষ্টার্জিত কৃষি পণ্যটি বিক্রয় করতে নিয়ে এসেছেন এই বাজারে। নেত্রকোনা বারহাট্টা উপজেলার এ অঞ্চলে পাটের গুনগত মান ভালো হওয়ার পরও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশ চাষীরা। এদিকে জেলার বিভিন্ন বাজার ও আড়ত গুলোতে ভাল মানের এক মন পাট ২ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।খরার কারণে পাট গাছ বড় ও মোটা হতে পারেনি। যে কারণে পাটের আশঁ কম হওয়ায় ফলন অনেক কমে গেছে। এছাড়া বীজ, সার, তেল, ওষুধ আর মুজুরীর খরচ বেশির কারণে এই দামে পাট বিক্রি করে লোকসানের মুখে পড়েছেন বেশীর ভাগ পাট চাষীরা।
জেলার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে বেশ কয়েকজন পাট চাষী ও ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই চলতি মৌসুমে সার,ওষুধ ও মুজুরীর মুল্য বেশি হওয়ায় পাটের উৎপাদন খরচ বেড়েছে অনেক। তার ওপর আবার সঠিক সময় মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনও হয়নি তাদের।জেলার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা স্থানীয় পাট চাষী বেলাল মুন্সী,শাহেদ ফকির,দবির মোল্লা,হান্নান শাহ জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও লোকসানের আশংকা নিয়েই নিজেদের চাষ যোগ্য সবটুকু জমিতেই পাট বুনেছেন তারা। এবার পুরো বর্ষাকাল ছিলো অনাবৃষ্টি। সে সময় ডিজেল পুড়িয়ে ক্ষেতে সেচ দিতে হয়েছে, পাট কাটার পর আশ পাশের খাল নালায় পানি না থাকায় জাগ দিতে ভ্যানে করে দুরে নিতে হয়েছে পাট গাছের আটি,  জাগ দেবার পরও লেবার দিয়ে আঁশ ছাড়ানো ও শুকনোর জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে,পরিবারের সকল সদস্য মিলে যে পরিমান শ্রম ও সময় ব্যায় করেছে,সেটা ধান বা মৌসুমের অন্য যে কোনো ফসলের জন্য করলে অনেক লাভ হতো।আগামী বছর আর পাট চাষ করবেন না বলে জানান তারা।
জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার পাট চাষীরা বলছেন,বর্তমানে বাজারে যে দরে পাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে তাতে তাদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। উৎপাদন ভালো না হওয়ায় এবার চলমান এই মুল্যে পোষাচ্ছে না তাদের। বারহাট্টা উপজেলার গোপালপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী জলিল জানান, ভরা মৌসুমে বাজারে পাটের উপস্থিতি অনেক কম, হাটের দিন যেখানে একজন ব্যবসায়ী পাঁচ থেকে সাত ট্রাক পাট ক্রয়  করতো, সেখানে এখন দুই থেকে তিন ট্রাক পাট পাওয়া মুশকিল হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রমতে, এবছর নেত্রকোনা জেলায় ৮৬ হাজার ৫শ ২৪ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৬১ মে.টন। শনিবার (২১ ই সেপ্টেম্বর) নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: নূরুজ্জামান জানান, এবছর উৎপাদন কম হলেও পাটের গুণগতমান যে কোনো জেলার তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। তিনি জানান, জেলার মাটি ও আবহাওয়া পাট চাষে উপযোগী হওয়ায় এ অঞ্চলে উন্নত মানে পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। বর্তমানে মন প্রতি ২৮শ থেকে ৩২শ টাকা দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। যদিও উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক বেড়েছে, তবু পাট চাষে আগ্রহ এখনও আছে চাষিদের। সরকার তাদের বিভিন্ন প্রনোদনা দিয়ে আসছে। এছাড়া আমরা সব সময় তাদের পাশে যে কোনো কাজ করছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

তেঁতুলিয়ায় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী টিসিবি’র পণ্য বিতরণ করছেন না টিসিবি ডিলারগণ

Share the post

Share the postপঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ক্যালেন্ডার অনুযায়ী টিসিবি পণ্য বিতরণ করছেননা কতিপয় টিসিবি ডিলারগণ। সময়মত টিসিবি পণ্য না পেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কার্ডধারীদের। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) তেঁতুলিয়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে খোঁজখবর নিলে এমন তথ্য পাওয়া যায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও উপজেলা […]

রাবির ইংরেজি বিভগের নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তা : গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও আল্টিমেটাম

Share the post

Share the post সৈয়দ মাহিন ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্থা ও মারধরের ঘটনার পুলিশ ২৪ ঘন্টা সময় চেয়েও আসামি তন্ময়কে গ্রেপ্তার করতে না  পারায় ২ ঘন্টার আল্টিমেটাম বেধে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্যারিস রোডে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল (১২মার্চ) কাজলার পুলিশ ফাড়ি সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় গেটের সামনে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও মারধরের […]