ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ নেত্রকোনা পৌরবাসী, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ বাড়ছে রোগজীবাণু

Share the post
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : নেত্রকোনা পৌরসভায় বর্জ্য নিষ্কাশনে অব্যবস্থাপনার ফলে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনায় পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে। পৌর শহরের ব্যবসায়ী ও বাসাবাড়ির নিত্যদিনের ময়লা-আবর্জনা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী মগড়া নদী সহ যেখানে-সেখানে ফেলায় শহরের পরিবশে নোংরা হচ্ছে। এ সব বর্জ্য অপসারণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ময়লা আর্বজনার গন্ধে অতিষ্ঠ নেত্রকোনা পৌরবাসী। স্থানীয়রা জানান,পৌরসভায় জনবল কাঠামোসহ নানা সংকটে শহর পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শহরের প্রতিদিনের ময়লা অপসারণের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় দুর্গন্ধে বাতাস দূষিত হয়ে পড়ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে মগড়া নদীর পানিতে প্রচুর কচুরিপানা জমেছে। কচুরিপানার কারণে নদীর মধ্যে ফেলা আর্বজনা পানির তোড়ে ভেসে যেতে না পেরে জমে থাকা আর্বজনা পচেঁ দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন পশুর বর্জ্য নদীতে ফেলায় যত্রতত্র ফেলার কারণে তা পচেঁ দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দুর্গন্ধে বিশেষ করে নেত্রকোনা শহরের মানুষ, শিক্ষার্থী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অফিস-আদালতগামী মানুষ ভোগান্তির শিকার বেশি হচ্ছেন।
১৮৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ পৌরসভায় এখনও সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। পৌরসভার সাধারণ মানুষের দাবি, ময়লা ফেলার ডাম্পিং গ্রাউন্ড (ময়লা ফেলার ভাগাড়) না থাকার কারণে পৌরসভার বেশির ময়লাই ফেলা হচ্ছে মগড়া নদী সহ যত্রতত্র। যে কারণে ময়লা পচেঁ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তবে, পৌরসভা পরিচ্ছন্নকর্মীদের দাবি-তারা নির্দিষ্ট সময়েই ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেন।সরেজমিন দেখা গেছে, নেত্রকোনা পৌরসভার পাশ দিয়ে প্রবাহমান মগড়া নদীর দুই পাশেই রাস্তার মুখে অস্থায়ীভাবে ময়লার স্তূপ করে রাখছেন পরিচ্ছন্নকর্মীরা। বৃষ্টির পানিতে এ সব ময়লার স্তূপ যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে মশা-মাছি সৃষ্টি হচ্ছে। শহরের প্রতিটি বাজারের পাশেই ময়লার ভাগাড় ও কচুরিপানার কারণে নৌযান চলাচল অনেক দিন আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। অপরদিকে শহরের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া মগড়া নদীতে কচুরিপানার কারণে নদীতে ফেলা ময়লার স্তূপ জমে থাকার কারণে পুরো শহরে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। দুর্গন্ধের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না ব্যবসায়ী ও পথচারীরা। এ সব ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলার কারণে গন্ধ আরও তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়ছে শহরজুড়ে ফলে ছড়াচ্ছে রোগজীবাণু। নেত্রকোনা শহরের নাগড়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ মরম আলী বলেন, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধের কারণে পৌর এলাকার নাগড়া এলাকার মানুষ এখন অতিষ্ঠ, নদীতে গোসল করার কারণে ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগজীবাণু। রাস্তা-ঘাটে যত্রতত্র ময়লা ও আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, পৌর শহর থেকে দূরে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা মজুদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা জরুরি। নেত্রকোনা পৌরসভার এক পরিছন্নতা কর্মী জানান, বাসা-বাড়ির ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে পৌরসভায় শ্রমিক ও সুইপার রয়েছে অনেক। এ ছাড়া ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে নিতে পৌরসভার ট্রাক ও ছোট ভ্যানগাড়ি রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের চাহিদার চেয়ে অনেক কর্মচারী ও ভ্যান কম রয়েছে। অপরদিকে, যানবাহন কম থাকায় ও আধুনিক যানবাহনের অভাবে শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে নেত্রকোনা পৌরসভার কাউন্সিলর ফরিদ ঢালী বলেন, ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য পৌরশহরের ময়লা-আবর্জনা ডাম্পিং করতে চাই। কিন্তু জমি না পাওয়ায় এটি সম্ভব হচ্ছে না। শহরের রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও আবর্জনা ডাম্পিং করতে না পারায় পৌরবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে, ফলে নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে রোগজীবাণু ও বাড়ছে। আমরা ডাম্পিং জোনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরকারি জমি চেয়ে আসছি। কিন্তু নানা জটিলতায় এখন পর্যন্ত তা আমরা পাইনি। তাই আমাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে জমি পাওয়ার চেষ্টা চলছে। আশা করি জায়গাপ্রাপ্তি সাপেক্ষে কিছু দিনের মধ্যে ডাম্পিং জোন নির্মাণ করা হবে।শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

নেত্রকোনায় গুলিতে একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান হারিয়ে অকুল পাথারে রাসেলের পরিবার

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : গুলিতে নিহত রাসেল মিয়া। গাজীপুরের মাওনায় মোরগের গাড়িতে হেলপারের কাজ করতেন রাসেল মিয়া (১৯)। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ভরণপোষণের জন্য কিশোর বয়স থেকেই এ কাজে যোগ দিয়েছিলেন। গত ৫ আগস্ট বিকেলে মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের পোশাক পরা ভারতীয়দের আটক করে জনতা। এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে ভগ্নীপতির […]

নেত্রকোনায় বিদ্যালয়ের কাজ না করেই বরাদ্দের টাকা ৫০ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোণা : নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার বরইতলা এন আই খান উচ্চ বিদ্যালয়ের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হলেও প্রকল্পের কাজ এখনো শুরু হয়নি।২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে উন্নয়ন সংশোধিত বাজেটে ‘ইউনিয়ন পরিষদ উন্নয়ন সহায়তা’ খাতের আওতায় ইউনিয়নের অনগ্রসরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং […]