শুরু হলো অগ্নিঝরা মার্চ
শুরু হলো অগ্নিঝরা মার্চ। সত্তরের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পাকিস্তানী শাসকদের কূটচালে ক্ষমতায় যেতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সিদ্ধান্ত ছিল একাত্তরের ৩ মার্চ বসবে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন। কিন্তু ১ মার্চ হঠাৎ অধিবেশন স্থগিত করেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান।
বেতারে ঐ ঘোষণা প্রচারের সাথে সাথে ঢাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন থেকেই শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে চলতে থাকে পূর্ব-বাংলা। ঢাকা স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ ভণ্ডুল হয়ে মাঠে জ্বলে আগুন।
২ মার্চ ঢাকায় এবং পরের দিন সারা দেশে পালন করা হয় হরতাল। পল্টন ময়দানে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু। এ সময় তৎকালীন ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) পাকিস্তান বনাম বিশ্ব একাদশের ক্রিকেট খেলা চলছিল।
ইয়াহিয়া খানের ওই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দর্শক খেলা ছেড়ে বেরিয়ে আসে। ততক্ষণে হাজারো মানুষ পল্টন-গুলিস্তানে বিক্ষোভ শুরু করে দেন। সেই আন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।
সেদিন মতিঝিল-দিলকুশা এলাকার পূর্বাণী হোটেলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা সেখানে গিয়ে প্রথমবারের মতো স্লোগান দেন, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’।
ছাত্ররা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে কর্মসূচি ঘোষণার দাবি জানান। বিক্ষোভ-স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকাসহ গোটা দেশ। এরপরই ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসে স্বাধীনতার ডাক। পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাঙালি।
পঁচিশে মার্চ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা চালায় পাকিস্তানি জান্তারা। শুরু হয় অপারশেন সার্চলাইট। এ প্রেক্ষাপটে ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে ইপিআরের ওয়ারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন শেখ মুজিব। সে রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে সেনারা, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে আসে বিজয়।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল বাংলাদেশ নামে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা হলেও চূড়ান্ত আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল একাত্তরের ১ মার্চ থেকেই।
বছর ঘুরে এক অন্যরকম পরিবেশে এবার বাঙালির জীবনে এসেছে মার্চ। এবারের মার্চটি ভিন্ন আঙ্গিকে পালিত হবে। এবার একই সঙ্গে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে একযোগে।
এই দুটি মাহেন্দ্রক্ষণ একযোগে উদযাপনের কর্মসূচি আগের বছর শুরু হলেও অতিমারি করোনার কারণে জাঁকজমকভাবে উদযাপন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে সরকার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করেছে।