২০২২ সালকে স্বাগত কক্সবাজার সৈকতে

Share the post
স্বাগত ২০২২ সাল। বিদায় ২০২১ সাল। বছরের শেষ সূর্যাস্ত বিদায় দিয়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করেছেন পর্যটকরা। দেখেছেন নতুন বছর, প্রথম সূর্যোদয়। মুহূর্তটি বন্দি হয়েছে ক্যামেরায়। ধরে রেখেছেন হৃদয়ের মণিকোঠায়। এ দৃশ্য নতুন নয়। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের হিসাবে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখার আকুতি পুরাতন। তবুও বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ও দেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটনকেন্দ্রের এ সঞ্চয় পর্যটকের ব্যক্তিগত। এর আবেদন চিরন্তন, একটি বিশেষ সময়কে উপভোগ করার প্রয়াস মাত্র।
শুক্রবার সকাল থেকেই পর্যটন নগরীতে যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেট কার ও বিমানে পৌঁছেন ভ্রমণপিপাসু দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। বেশির ভাগ হোটেল-মোটেল বুকিং হয়ে গিয়েছিল অনেক আগে থেকেই। দুপুর ১২টার পর থেকে জেলার পর্যটন স্পটগুলোতে চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি দেখা গেছে। তাদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ। তবে অন্য বছরের তুলনায় নানা কারণেই এ বছর পর্যটক কম বলে দাবি করেছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর এবার পর্যটকদের জন্য ৭ দফা বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি সৈকত এলাকা ও হোটেল-মোটেল জোনে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। মাঠে থাকছে ২০৮ জন পুলিশ সদস্য। হোটেল,রেস্তোরাঁ ও পর্যটন স্পটে বাড়ানো হয়েছে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি।
বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও থার্টিফার্স্ট নাইটে সৈকতের বালিয়াড়ি বা উন্মুক্ত কোনো স্থানে হচ্ছে না কোনো অনুষ্ঠান। তবে তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইজ, সায়মন বিচ রিসোর্ট, কক্স-টু-ডে এবং সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’র নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইনডোর প্রোগ্রামের আয়োজনের প্রস্তুতি ছিল অনেক আগে থেকেই। হোটেলের অতিথি, বিদেশি পর্যটক এবং বিশেষ মেহমানরা এসব অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন বলে জানালেন আয়োজকরা।পর্যটনসংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর থার্টিফাস্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষ্যে পর্যটন নগরী কক্সবাজার লোকারণ্য হয়ে ওঠে। এবারও সৈকত ও আশপাশের পর্যটন এলাকায় অতিথি ও স্থানীয় মিলিয়ে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছে। তবে সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনার প্রভাব পড়েছে। উন্মুক্ত কোনো আয়োজন না থাকায় থার্টিফার্স্ট নাইট বা নতুন বর্ষবরণকে ‘প্রাণহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন সিলেট সুনামগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক দম্পত্তি কামাল উদ্দিন পাশা।
কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ হোটেল ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, এক দিকে সাপ্তাহিক ছুটি, অন্য দিকে থার্টিফার্স্ট নাইট। নতুন বর্ষবরণে কক্সবাজার সৈকত পর্যটকে ভরে উঠেছে। যদিও কয়েক দিন আগের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় পর্যটন নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পেয়েছেন পর্যটকরা। তবুও গ্রুপ ও পরিবার নিয়ে এসেছেন তারা।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী রাশেদ রিপন বলেন, বিজয় দিবস থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজারে কম-বেশি পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে। থার্টিফার্স্ট নাইটে শুক্রবার আর শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কক্সবাজারে প্রচুর পর্যটক এসেছেন। সৈকতের মতো সমানতালে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, ইনানী, হিমছড়িসহ পুরো জেলার পর্যটন স্পটে পর্যটক এসেছেন। তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইজের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, পর্যটন বিকাশে আমরা শুরু থেকেই বাংলা নববর্ষ, থার্টিফার্স্ট নাইটসহ নানা দিবসকে পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য করে তুলি। পর্যটক চাহিদার কারণে এবারও বলরুমে ইনহাউজ গেস্টদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। ব্যুফে ডিনারের সঙ্গে ছাদে থাকছে স্টেজ প্রোগ্রাম। সায়মন বিচ রিসোর্টের হিসাব ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান নূর জানান, বিদেশি ও ইনহাউজ অতিথিদের জন্য ব্যুফে খাবার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে কর্তৃপক্ষ। অন্য সময় বাইরের অতিথি ব্যুফে খেতে আসতে পারলেও থার্টিফার্স্ট নাইটের অনুষ্ঠানে বাইরের অতিথির প্রবেশ বন্ধ থাকবে। তারকা হোটেল কক্সবাজার সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) নাভিদ আহসান চৌধুরী বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষ্যে দুই রাত তিন দিনের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছি আমরা। বৃহস্পতিবার-শুক্রবার হোটেলে অবস্থানরতদের জন্য ডিজে একেএসের ডিজে এবং মাইলসের শাফিন গানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। যেহেতু ইনহাউজ প্রোগ্রাম, তাই নিরাপত্তার খাতিরে শুক্রবার বাইরের কোনো গেস্ট প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপেও থার্টিফার্স্ট নাইটের কোনো অনুষ্ঠান নেই। তবে, কয়েক হাজার পর্যটক নতুন বছরকে বরণে দ্বীপে অবস্থান করছেন বলে তিনি জানান।
জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বলেন, নানা কারণে এবারও ‘থার্টিফার্স্ট নাইটে’ ওপেন অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পর্যটকরা চাইলে রাত পর্যন্ত বিচে ঘুরতে পারবেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কয়েকটি টিম মাঠে থাকবে। কিন্তু রাত ১০টার পর হোটেলের সব বার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, কোনো হোটেল-মোটেল ইনডোর প্রোগ্রামের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি নেয়নি। এর পরও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইনডোর প্রোগ্রাম করলে নিরাপত্তার বিষয়টি সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব এখতিয়ার। কোথাও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার অভিযোগ এলে হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে কোনো আতশবাজি, পটকা ফুটানো বা কোনো উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠান করা যাবে না। পাশাপাশি রাত ১২টার পর উচ্চস্বরে কোনো মাইক কিংবা সাউন্ড বাজানো নিষেধ। থার্টিফার্স্ট নাইট ও বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। একইভাবে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

ফের রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে ঝটিকা মিছিল

Share the post

Share the postরাজধানী রাস্তায় ব্যাটারি/মোটরচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করাসহ ৭ দাবিতে কাকরাইল সড়ক অবরোধ করে ঝটিকা মিছিল করেছেন প্যাডেলচালিত রিকশাচালকরা।শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে কাকরাইল মোড়ে এমন চিত্র দেখা যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে রমনা থানা পুলিশ পৌঁছানোর আগেই সরে যান রিকশা চালকরা।রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, রাজধানীর সড়কে ব্যাটারি/মোটরচালিত রিকশা […]

মান্দার জয় বাংলা বাজারে দোকানঘর ভাংচুর ও মালামাল লুটের অভিযোগ

Share the post

Share the postমির্জা তুষার আহমেদ,নওগাঁ : নওগাঁর মান্দা উপজেলার জয় বাংলা বাজারারে ১০ বছরের দখলকৃত কীটনাশক দোকানঘর ভাংচুর ও মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষ দোষীরা জানান, প্রকাশ্যে দিবালোকে কীটনাশক দোকান ঘর ভাংচুর করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মালামাল লুটের করে নিয়ে যায় বলে জানা। এ ঘটনায় মান্দা থানায় […]