সৈকতে পর্যটকের ভিড়, নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই
শীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল শনিবারও সারা দেশে ৬৮৪ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ২৩ জন। সংক্রমণ রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর চিত্র উল্টো। সেখানে বাড়ছে পর্যটকদের সংখ্যা। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এবং চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও পারকি সৈকতে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদ্যাপনে পর্যটকের ঢল নেমেছিল। চারটি সৈকতে গতকালও পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় । অধিকাংশ পর্যটক স্বাস্থ্যবিধির না মেনেই বেড়াতে গিয়েছেন। ব্যবহার করেননি মাস্কসহ সুরক্ষাসামগ্রী।করোনার কারণে ১৯ মার্চ থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল কটেজ ও অতিথিশালা বন্ধ ছিল। ১৭ আগস্ট হোটেল-মোটেল খোলার অনুমতি দিলেও ৫০ শতাংশ কক্ষ খালি রাখার শর্ত দিয়েছিল প্রশাসন। পর্যটন শুরু হওয়ার পর গত চার মাসে তেমন ভিড় ছিল না। তবে গত চার দিনে পর্যটকদের ভিড় বাড়ায় অর্ধেক কক্ষ খালি রাখার বাধ্যবাধকতা মানেনি অনেক হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষ। খ্রিষ্টীয় নববর্ষকে ঘিরে গত চার দিনে পাঁচ লাখ পর্যটক জেলায় এসেছেন বলে হোটেল-মোটেল ও পরিবহন সংস্থাগুলোর হিসাব বলছে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশে এখন লকডাউন নেই। এ কারণে পর্যটকদের সৈকতে আসতে বাধাও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবু সংক্রমণ রোধে হোটেল-মোটেলগুলোতে কক্ষ ৫০ শতাংশ খালি রাখাসহ সৈকতে লোকসমাগম কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।গতকাল সকালে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, সৈকতে স্বাভাবিক সময়ের ছুটির দিনের আমেজ। সমুদ্রস্নানের পাশাপাশি, ঘোড়া, স্পিডবোট বা বিচবাইকে চড়ে আনন্দ নিচ্ছেন পর্যটকেরা। অধিকাংশের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ব্যবসায়ী নবাব মিয়া (৫৫) বলেন, সৈকতে এত মানুষ হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি। ভিড়ের কারণে গত দুই দিন সৈকতে নামা হয়নি তাঁর।ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের এসপি মো. জিললুর রহমান বলেন, মাস্ক পরা ছাড়া কাউকে সৈকতে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। নিয়ম না মানলে লোকজনকে জরিমানা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না।পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতেও লক্ষণীয় ভিড় ছিল গত কয়েক দিন। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই পর্যটকেরা বেড়িয়েছেন। মাস্ক দেখা যায়নি বেশির ভাগেরই মুখে।
পর্যটকদের অনেকেই বলেছেন, ভুল করে মাস্ক ব্যবহার করেননি তাঁরা।কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, ‘হোটেল-মোটেলের প্রবেশদ্বারে হাত ধোয়ার জন্য সাবান, স্যানিটাইজার রাখা হয়েছে। আমরা একা সচেতন হলেই হবে না। সবাইকেই এসব বিষয় সচেতন হতে হবে।’
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র ও আনোয়ারার পারকি সৈকতেও মাস্ক ছাড়া লোকজন ভিড় করছেন প্রতিদিন। গত বৃহস্পতিবার খ্রিষ্টীয় বর্ষবিদায়ের দিন সমুদ্রসৈকতে সাধারণের প্রবেশে বিধিনিষেধ ছিল। পরদিন শুক্রবার এই দুই সৈকতে ভিড় লেগে যায়।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাজীব হোসেন বলেন, প্রতিদিনই একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালাচ্ছেন। মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জরিমানাও করা হচ্ছে, কিন্তু কিছু মানুষ উদাসীন মাস্কের বিষয়ে।