ফায়ার স্টেশন-ডুবুরি সংকটে বরিশাল বিভাগ

Share the post

বরিশাল: বরিশাল বিভাগের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে সন্ধ্যা, সুগন্ধা, আঁড়িয়াল খা, কালাবদর, পায়রা, ইলিশা, বিষখালি, বুড়াগৌড়াঙ্গ, কীর্তনখোলা, মেঘনা, লোহালিয়া, আন্ধারমানিক, তেতুলিয়া ও আগুনমুখাসহ বেশি কয়েকটি নদ-নদী।

নদীবেষ্টিত এ অঞ্চলের ছয় জেলায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর হারও যেমন বেশি, তেমনি প্রায়ই নৌ-দুর্ঘটনায় হচ্ছে প্রাণহানিও। আর এসব দুর্ঘটনায় উদ্ধার কাজে এ অঞ্চলে মুখ্য ভূমিকা রাখছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা। কিন্তু গোটা বরিশাল বিভাগে ফায়ার সার্ভিসের রয়েছে মাত্র দু’টি নদী স্টেশন ও চার জনের ডুবুরি দল।  

আবার এ ডুবুরি দলকে শুধু বরিশাল বিভাগের ছয় জেলাতেই নয় পাশের জেলাগুলোতে গিয়েও উদ্ধার কাজ পরিচালনা করতে হয়। ফলে একই সঙ্গে দু’টি বা তার অধিক দুর্ঘটনার খবর পেলে হিমশিম খেতে হয় ডুবুরি দলটিকে।

সূত্রে জানা যায়, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ফায়ার সার্ভিসের মোট ৩৮টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলায় রয়েছে মাত্র দু’টি নদী ফায়ার স্টেশন। যে স্টেশন দু’টির আওতায় রয়েছে দু’টি হাইস্পিড বোট ও একটি ফায়ার ফাইটিং বা অগ্নিঘাতক বোট। এগুলো শুধুমাত্র বরিশাল নদী স্টেশনের নিয়ন্ত্রণে।
 
হাইস্পিডবোট দু’টি ব্যবহার করা হয় ফায়ার ফাইটারদের বহনের জন্য। আর অগ্নিঘাতক নামের বোটটি ব্যবহার করা হয় আগুন নেভানোর কাজে। যদিও আগুন নেভানোর বোট নিয়ে সন্তুষ্ট নয় বর্তমান যুগের ফায়ার ফাইটাররা। কারণ এটি অটোমেটিক সিস্টেমের কোনো বোট না। এতে নেই আধুনিক কোনো যন্ত্রপাতিও। এটিতে আলাদা পাম্প দিয়ে পানি তুলেই আগুন নেভানোর কাজ করতে হয় ফায়ার ফাইটারদের।

এদিকে এ দু’টি স্টেশনের মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল স্টেশনে রয়েছে চার সদস্যের একটি ডুবুরি দল। যারা শুধু বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় নয়, পাশের জেলা মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর এমনকি গোপালগঞ্জে গিয়েও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে থাকে। এতে উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত ঘটে। তেমনি লোকবল সংকটে মুখ থুবড়ে পড়ছে ফায়ার সার্ভিসের নদীবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের কার্যক্রম।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা বলছেন, জনবল ও স্টেশন সংকটের পাশাপাশি বর্তমানে নদী স্টেশনে থাকা দু’টি যানবাহন পর্যাপ্ত নয়। কারণ বিভাগটিতে এমন এলাকা ও বাজার রয়েছে যেখানে নদীপথ ছাড়া যোগাযোগের আর কোনো মাধ্যম নেই। 

সেসব জায়গাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে যানমালের হেফাজত করা কঠিন হয়। তাই নদীবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলে তাদের অপারেশন পরিচালনার জন্য উচ্চগতির আরও কয়েকটি বোট ও অগ্নিঘাতক আধুনিক বোটের প্রয়োজন রয়েছে। পাশপাশি সড়কপথে যাওয়ার জন্য ছোট-বড় মিলে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনেরও দরকার। আর এসবের অপ্রতুল হওয়ায় এখন উদ্ধার কাজে যেতে সময় লাগে নদী স্টেশনের সদস্য ও ডুবুরিদের। 

মাঠ পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ও সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আয়তন ও সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় কমপক্ষে আট থেকে ১০টির মতো নদী স্টেশনের প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালি ও ভোলার বেশ কয়েকটি উপজেলা পুরোপুরি নদীবেষ্টিত হওয়ায় এগুলোতে নদী স্টেশন স্থাপনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

কারণ এসব উপজেলায় এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে যেতেও নদীপথই একমাত্র মাধ্যম, আবার উপজেলায় সড়ক পথের পরিধিও খুব কম। এছাড়া সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা পটুয়াখালীর পায়রাতে একটি আধুনিক ও স্বতন্ত্র নদী স্টেশনের গুরুত্ব অনেক বেশি। আর প্রতিটি নদী স্টেশনে পর্যাপ্ত ডুবুরি, সরঞ্জাম ও যানবাহন থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের নদী স্টেশনসহ সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ১৬৫ কোটি টাকার প্রকল্প পাস হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। 

যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভোগান্তি অনেকটাই কমে যাবে বলে ধারণা ফায়ার সার্ভিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের। কারণ এ প্রকল্পের আওতায় প্রতি জেলায় অন্তত চার জন ডুবুরি, এক জন লিডার, এক জন চালক, একটি গাড়ি সংযুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক এ বি এম মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, গত ১০ বছরে ফায়ার সার্ভিসে পরিবর্তন এসেছে। আমাদের নতুন নতুন প্রযুক্তি, সরঞ্জাম, যানবাহন প্রতিনিয়ত সংযুক্ত হচ্ছে।  প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের ফায়ার ফাইটাররা আধুনিক বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করছে।

তিনি বলেন, সরকার ফায়ার সার্ভিসের উন্নয়নে যথেষ্ট আন্তরিক। নদীবেষ্টিত বরিশালের প্রতি জেলায় নদী স্টেশন ও ডুবুরি ইউনিটের কাজ চলমান। যেখানে ফায়ার ফাইটার ছাড়াও চারজন করে ডুবুরিসহ মোট ছয়জনের একটি ইউনিট থাকবে। 

এছাড়াও নদী স্টেশনকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আমরা জনবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম চেয়েছি, আশাকরছি এগুলোও দ্রুত পাবো বলেও জানান ফায়ার সার্ভিসের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক মমতাজ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

তেঁতুলিয়ায় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী টিসিবি’র পণ্য বিতরণ করছেন না টিসিবি ডিলারগণ

Share the post

Share the postপঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কর্তৃক উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ক্যালেন্ডার অনুযায়ী টিসিবি পণ্য বিতরণ করছেননা কতিপয় টিসিবি ডিলারগণ। সময়মত টিসিবি পণ্য না পেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কার্ডধারীদের। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) তেঁতুলিয়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে খোঁজখবর নিলে এমন তথ্য পাওয়া যায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও উপজেলা […]

রাবির ইংরেজি বিভগের নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তা : গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও আল্টিমেটাম

Share the post

Share the post সৈয়দ মাহিন ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্থা ও মারধরের ঘটনার পুলিশ ২৪ ঘন্টা সময় চেয়েও আসামি তন্ময়কে গ্রেপ্তার করতে না  পারায় ২ ঘন্টার আল্টিমেটাম বেধে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্যারিস রোডে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল (১২মার্চ) কাজলার পুলিশ ফাড়ি সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় গেটের সামনে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও মারধরের […]