হাত-পায়ের রক্তনালিতেও ব্লক হয়
অনেক সময় রোগীরা বলে থাকে আমার হার্টে আমার রক্তনালীতে দুইটা, তিনটা বা চারটা ব্লক হয়েছে। কিন্তু আসলে ব্লক হয় কোথায়? হার্টে যেমন রক্তনালী থাকে তেমনি সারা শরীরে রক্তনালী থাকে। যদি হার্টের রক্তনালীতে ব্লক হয় তাহলে সেটিকে বলা হয় হার্ট অ্যাটাক। আর ব্রেইনের রক্তনালীতে ব্লক হয় তাহলে সেটিকে বলা হয় স্ট্রোক। আর এ ব্লক যেকোনো জায়গায় হতে পারে। যেমন হাতের রক্তনালীতে বা পায়ের রক্তনালীতেও হতে পারে।
হাত ও পায়ের রক্তনালীর ব্লক ও চিকিৎসা নিয়ে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাকলায়েন রাসেল।
হাত ও পায়ের রক্তনালীতে ব্লক দুইভাবে হতে পারে। যদি হঠ্যাৎ করে ব্লক হয় সেটিরও কিছু কারণ থাকে। যেমন: হার্টের রক্তনালীগুলোতে হার্টের ভেতর রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। আর এ রক্ত জমাট বাঁধা যদি হাত বা পায়ের ভেতর চলে যায় তখন হঠ্যাৎ করে রক্তনালী বন্ধ হতে পারে। এছাড়া অনেকের গলার ভেতর একটি অতিরিক্ত হাড় থাকে তখন সেটি রক্তনালীতে চাপ দিতে পারে। আর তখন হাতের ভিতর রক্তনালীগুলোকে ব্লক করে দিতে পারে।
হাত ও পায়ের রক্তনালীতে ব্লক হলে এটি হঠ্যাৎ হয় আবার ধীরে ধীরে হয়। হঠ্যাৎ হলে আমরা তাকে বলি হ্যান্ড অ্যার্টাক বা লেগ অ্যার্টাক।
হ্যান্ড অ্যার্টাক বা লেগ অ্যার্টাক:
হঠ্যাৎ করে হাত বা পায়ে তীব্র ব্যথা হচ্ছে। আর এতোটাই ব্যথা যে ওষুধে কমছে না। আর যদি পরীক্ষা করে দেখা যায় পায়ে পার্লস নেই। আস্তে আস্তে হাত বা পা কালো হয়ে যাচ্ছে। এক সময় ব্যথা চলে যাচ্ছে কিন্তু হা বা পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আর যখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন চিকিৎসক বলছে হাত বা পা জীবিত নেই। এটি কেটে ফেলতে হবে। যদি হঠ্যাৎ করে কারোর হাত বা পায়ের রক্তনালী ব্লক হয়ে যায় তখন মাত্র ৬-৮ ঘণ্টা সময় থাকে হাত বা পা-টি ভালো করার।
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস, রক্তে অতিমাত্রায় চর্বি ইত্যাদি কারণে পায়ে দীর্ঘস্থায়ী ব্লক হতে পারে। এ ক্ষেত্রে হাঁটতে গেলে পায়ে খিল ধরে এবং ব্যথা হয়, বিশ্রাম নিলে কিছুটা কমে। রোগের তীব্রতা বাড়লে বিশ্রামরত অবস্থায়ও ব্যথা হতে থাকে। রক্ত চলাচল কম থাকায় সামান্য আঘাতে পায়ে ঘা কিংবা গ্যাংগ্রিন হয় এবং সহজে তা সারতে চায় না।
হার্টের মতো পায়েরও এনজিওগ্রাম করা যায়। ডুপ্লেক্স পরীক্ষায় পায়ে ব্লক ধরা পড়লে এনজিওগ্রাম করে রক্তনালীর ব্লকের অবস্থান নিশ্চিত করা যায়। এনজিওপ্লাস্টির মাধ্যমে রক্তনালীর ব্লক অপসারণ করা হয়। যখন এনজিওগ্রাম করা হয়, তখনই সরু বা বন্ধ রক্তনালী প্রথমে বেলুন দিয়ে মোটা করে ওই স্থানে একটি রিং, আংটি বা স্টেন্ট বসিয়ে দেয়া হয়। ফলে রিংয়ের মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচল করতে পারে। এর সুবিধা হলো, এতে কাটাছেঁড়ার দরকার হয় না এবং হাসপাতালে কম সময় থাকতে হয়। এতে ইনফেকশনের আশঙ্কা কম।
হার্টের ব্লক দূর করার মতোই পায়ে রিং পরানো যায় বা স্টেন্টিং করানো যায়। আবার বাইপাস সার্জারি করানো যায়, প্রয়োজনে আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার করে দেয়া যায়। ইনজেকশন প্রয়োগেরও সুযোগ রয়েছে। তবে পায়ে ব্লক মানেই বার্জাজ ডিজিজ নয়। কেউ কেউ আবার পায়ের রক্তনালীর সমস্যা জনিত ব্যথায় অহেতুক ব্যথানাশক ওষুধ খান, এক্স-রে কিংবা এমআরআইয়ের মতো ব্যয়বহুল পরীক্ষা করিয়ে সময় নষ্ট করেন। এতে অকালে অঙ্গহানির আশঙ্কা থাকে। পায়ে হাত দিয়ে পালস বা নাড়ি না পেলে কিংবা স্পন্দন ক্ষীণ অনুভব করলেই বোঝা যায়, রোগীর রক্তনালীতে কোনো না কোনো সমস্যা আছে। সে ক্ষেত্রে সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা নেয়া উচিত।