স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে আবারো ফিরতে মরিয়া সাবেক প্রধান শিক্ষক রোকসানা আহমেদের নানা অপতৎপরতা
ইয়াসিন আরাফাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ:গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্র আন্দোলনের মুখে ব্যক্তিগত কারন দেখিয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি নেয়ার পর আবারো স্বপদে ফিরতে মহিয়া হয়ে উঠেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গ্রীণ ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক রোকসানা আহমেদ। বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিদ্যালয়ের ২৭ জন শিক্ষক তাকে ফেরালে পদত্যাগের হুশিয়ারী দেয়ার পরেও আবারো ফিরে আসতে বিভিন্ন অপতৎপরতা শুরু করেছেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, পুনরায় স্বপদে ফিরতে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষকদের বিভিন্ন উপায়ে নানারকম ভয়ভীতি ও চাপ প্রয়োগ করছেন রোকসানা আহমেদ। এমনকি সদ্য বিদায়ী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তরিকুল ইসলামকে দিয়ে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। তাকে না ফেরালে বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত খন্ডকালীন শিক্ষকদের চাকুরি স্থায়ীকরন না করার হুমকি দেয়া হয়।
প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আবারো স্বৈরাচার সরকারের দোসরকে স্বপদে ফেরানোর পায়তারাকে কঠোরভাবে দমনের দাবি সচেতন মহলের। অভিযোগ উঠেছে, বর্তমানে বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদেরকেও নানাভাবে শোকজ ও বরখাস্তের হুমকি দিয়ে ফেরানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, গ্রীণ ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক রোকসানা আহমেদের এক ঘনিষ্ঠ শিক্ষকের সহপাঠী ছিলেন সদ্য বিদায়ী চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তরিকুল ইসলাম। এরই জের ধরে নিজের শেষ কার্য দিবসের দিনে গ্রীণ ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ডেকে সাবেক প্রধান শিক্ষক রোকসানা আহাম্মেদকে পুনরায় ফেরালে শিক্ষার্থীরা যাতে কোন ধরনের আন্দোলন না করে এমন প্রতিশ্রুতি দেয়ার জন্য চাপ প্রদান করেন। এমনকি সাবেক প্রধান শিক্ষক রোকসানা আহমেদকে না ফেরালে খন্ডকালীন শিক্ষকদের চাকুরী স্থায়ীকরণ না করার হুঁশিয়ারি দেন তিনি৷ বিষয়টি ছাত্রদের একান্ত বিষয় ও ও সাবেক শিক্ষক রোকসানা আমাদের স্বেচ্ছা পদত্যাগের কথা উল্লেখ করে তাতে রাজি হননি বেশিরভাগ শিক্ষকরা।
জানা যায়, নিয়োগ কার্যক্রমকে অবৈধ ও বিগত দিনে আ.লীগের প্রভাব খাটানোর কথা উল্লেখ করে শ্রেণীকক্ষে ফ্যান খুলে নেয়া, চেয়ার সরিয়ে নেয়া, হিজাব-বোরখায় আপত্তি জানানো, অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে স্বেচ্ছায় অবসর নেয়া প্রধান শিক্ষক রোকসানা আহমেদকে পুর্নবহাল না করতে আবেদন করেছেন গ্রীণ ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৭ শিক্ষক। গত ০৭ নভেম্বর তারা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর তারা এই লিখিত অভিযোগ করেন। পাশাপাশি অভিযোগ দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসককেও। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
অভিযোগকারী শিক্ষকরা বলেন, তার অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বৈরাচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারতো না। কারন সবসময়ই তিনি প্রশাসন ও চাকুরিচ্যুত করার ভয় দেখাতেন। যা শিক্ষকদের প্রতি মুহূর্তে আতংকের মধ্যে রাখতো। শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহারের কারনে সাবেক জেলা প্রশাসক সরদার সরাফাত আলী একটি সভায় তাকে চরমভাবে ভৎর্সনা করেন। ফলে তিনি সভা ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। খন্ডকালীন শিক্ষকদেরকেও বেতন না দিয়ে বৈষম্য করে রেখেছিলেন রোকসানা আহমদ।
এবিষয়ে কালেক্টরেট গ্রীণ ভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। তদন্ত কমিটি হয়েছে, তারা তদন্তকাজ শেষও করেছে। তদন্তের ভিত্তিতে তাকে (সাবেক প্রধান শিক্ষক রেকসানা আহমেদ) ফেরা বা না ফেরার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের হাতে। এনিয়ে আমাদের মন্তব্য করা উচিত নয়।
তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন, গত ২১ আগষ্ট স্বেচ্ছায় অবসর নেয়া প্রধান শিক্ষক রোকসানা আহমেদ। তিনি বলেন, কাগজে কলমে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেয়ার বিষয়টি থাকলেও বাস্তবতা তা নই। আশা করি, বিষয়টি সবাই জানে। ষড়যন্ত্র করে জোরপূর্বক স্বেচ্ছায় অব্যাহতি গ্রহণ করানো হয়েছিল। আবারো ফিরতে চান কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ফেরার কোন আবেদন করিনি। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য আবেদন করেছিলাম। তদন্তে যা পাওয়া যাবে, এবিষয়ে তারা সীধান্ত নিবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন বলেন, তদন্তকাজ শেষ হয়েছে। আগেই খসড়া প্রতিবেদন দেয়া হয়েছিল। গত ৮-১০ দিন আগে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এবিষয়ে জেলা প্রশাসন সীধান্ত নিবেন বলেও জানান তিনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আনিসুর রহমান জানান, এবিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিক্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে যেসকল বিদ্যালয়ের শিক্ষককে জোরপূর্বক অপসারণ করা হয়, তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। তবে গ্রীণ ভিউ উচ্চ বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান না হওয়ায় এই নির্দেশনার আওতামুক্ত বলে জানান শিক্ষকরা।
এদিকে, এই ইস্যুতে রোকসানা আহমেদের অব্যাহতির আবেদন ও অব্যাহতি প্রদানের পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগের মতো মিমাংসীত ঘটনায় এনিয়ে তদন্ত বা পরবর্তীতে যেকোন ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিব।