সফল জুটি রাজনীতির মাঠ থেকে বিয়ের মঞ্চে অসিম -অপু

Share the post
সোহেল খান দূর্জয়,নেত্রকোনা প্রতিনিধি : নেত্রকোনার গর্ব অসিম কুমার উকিল ও – অধ্যাপিকা অপু উকিল, নেত্রকোনার আটপাড়া ও কেন্দুয়া উপজেলার উন্নয়নের জন্যে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন অসিম কুমার উকিল ও অপু উকিল, সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে নিজের বিলিয়ে দিচ্ছেন এই মহান জুটি।দু’জনের জীবনের লক্ষ্য , উদ্দশ্য ও আদর্শ অভিন্ন। প্রিয় মাতৃভূমি ও মানুষের  কল্যানে মঙ্গল প্রদীপ প্রোজ্জ্বলিত করার জন্যই তাদের রাজনীতি। দু’জনারই আদর্শিক চেতনার অনুপ্রেরণা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ‍্য কন্যা দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের পরিচয় হয় রাজপথে, কথা হয় মিছিলে। সংগঠনের কাজের আঙিনায় জননেত্রী শেখ হাসিনার আশির্বাদে, জননেতা ওবায়দুল কাদেরের উদ্যোগে, অন্য নেতা কর্মীদের সহযোগিতায় ঘটে তাদের শুভ পরিণয়। বিয়ের দিন ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা “অপু অসীম পরিষদ” এই শিরোনামে ব্যানার বানিয়ে মিছিল করে ভাটি বাংলার অগ্নি কন্যা অধ্যাপিকা অপু উকিলের বাবার বাড়ি শরীয়তপুর গিয়েছিল। এক কথায় বলা যায়, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক জীবন থেকে প্রেম ও শেষে বিয়ের পরিণয়ের ইতিহাস।
বলছিলাম বাংলাদেশের রাজনীতির অতি পরিচিত মুখ নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কৃতি সন্তান অসীম কুমার উকিল ও শরীয়পুরের মেয়ে নেত্রকোনার পুত্রবধু ভাটি বাংলার অগ্নি কন্যা অমিত সাহসী সংগ্রামী বীর অধ্যাপিকা অপু উকিলের কথা।
নেত্রকোনা-৩(আটপাড়া-কেন্দুয়া)আসনের সংসদ সদস্য জননেতা এমপি অসিম কুমার উকিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম রূপকার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক। ও তার সহধর্মিনী অধ্যাপিকা অপু উকিল বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য।
এই আলোকিত দম্পতি দুই ছেলে সন্তানের জনক-জননী। বড় ছেলে সায়ক উকিল আমেরিকায় ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত । ছোট ছেলে শুদ্ধ উকিল স্কলাস্টিকা স্কুলে এ পড়ছে।
যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের এক হওয়া, দু’জনকে এক করা- তাতে সফল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এই জুটির প্রেম ও বিয়ের সেতু বন্ধনের মূল দ্বায়িত্বটা মূলত তিনিই পালন করেছিলেন।
অপু উকিল বলেন, আমি যখন পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি, তখন থেকেই লেখালেখি করতাম। গল্প ছাপানোর জন্য বাংলার বাণীতে যেতাম। কাদের ভাই তখন বাংলার বাণীতে বসতেন। আমি তার লেখার ভক্ত ছিলাম। আমাকে খুব স্নেহ করতেন তিনি। ছোট গল্প কবিতা বাংলার বাণীর সাহিত্যের পাতায় ছাপিয়ে দেবার জন্য কবি সোহরার হাসান ভাইকে বলে দিতেন। এরপর ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ি। এস এস সি পরীক্ষার পর কাদের ভাই  একদিন বললেন প্রেমটেম করবে না। আমি তোমার জন্য পাত্র ঠিক করে রেখেছি।
আমি যখন অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ি, তখন কাদের ভাই একদিন বললেন- আমি কিন্তু তোমার জন্য পাত্র ঠিক করে ফেলেছি। তখন নাম বললেন- অসীম কুমার উকিল। তিনি তখন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। আমি কিছুই বললাম না। আসলে তখনও এগুলো নিয়ে ওইভাবে কিছু ভাবিনি। কাদের ভাই বললেন, দেখ আমি চাই না তুমি রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাও। হিন্দু মেয়েরা তো রাজনীতিতে আসেই না। বেশিরভাগই আবার বিয়ের পরে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যায়। তুমি রাজনীতিতে যাতে থাকো; সেজন্য আমি চাই সেই রকম একটা ছেলে। যার সঙ্গে বিয়ে হলে তোমার রাজনীতিতে সে বাধা না হয়। আবার সে নিজেও রাজনীতি করবে।
শুরুতেই বলেছি তাদের প্রেম বা পরিণয় কোনোটাই আর দশজনের মতো নয়। তাদের প্রথম দেখাটাও তেমন। অসীম কুমার উকিল তখন বড় নেতা। তার সঙ্গে সেই ভাবে কথাবার্তা বলেন না অপু উকিল। আসলে বলতে ভয় পান।
অন্যদিকে ওবায়দুল কাদের ভাই একই কথা বলেছেন অসীম কুমার উকিল কেও। ‘আমি তোমার জন্য পাত্রী ঠিক করে রেখেছি। কিন্তু নাম বলেননি। অনেক সময় স্ত্রীরা রাজনীতি করতে দিতে চায় না। তাই আমি এই মেয়েটিকে ঠিক করেছি। দেখো কথা বলে।
প্রথম দিনে দাদার সঙ্গে কী কথা হলো, হেসে জবাব- কী আর হবে। সাংগঠনিক কথাবার্তাই হলো। উনি জিজ্ঞেস করলেন সংগঠনের কী অবস্থা, মিছিল আছে কাল, চলে এসো। আসলে দু’জনই অ্যাবনরমাল হয়ে গিয়েছিলাম। তাই পরিবেশটা নরমাল করার জন্য এগুলো বলছিলো। পরে সেদিনের মতো চলে আসি।
এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সেই সময় ছাত্ররাজনীতিটা সহজ ছিল না ‘আমি তখন নেতা কর্মী সাথে নিয়ে চলতাম। একা কোথাও যেতাম না। তখন রাজনীতি এত সহজ ছিল না। কার কখন কী হয়, কিছুই বলা যায় না। তো সেখানেও (প্রথম দেখা করার দিন) সবাইকে নিয়েই গেছি। ওরা বিষয়টা টের পেয়ে গেছে। এর পরে তো আমি লজ্জায় আর মধুর ক্যান্টিনে যাই না, প্রোগ্রামে যাই।
১০-১২ দিন পরে আলম ভাই (শাহ আলম, ছাত্রলীগের সভাপতি) ফোন দিলেন। তখন তো এখনকার মতো মোবাইল ছিল না। হলের ল্যান্ডফোনে কল দিলেন। পরের দিন পান্না ভাইকে (ইসহাক আলী পান্না) আমার হলের নিচে পাঠান একটা চিরকুট দিয়ে। তাতে লেখেন ৫০ জন নেতাকর্মী নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে আসার জন্য। আমিও তাই করলাম।
প্রোগাম শেষে মেয়েরা রিকশায় উঠছে, চলে আসবে। এর মধ্যে সুজন( বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি) ভাই আমাকে এসে বলেন- ‘এই অপু শোনো, তুমি যেও না। তোমার সঙ্গে কথা আছে।’ আলম ভাই তোমাকে থাকতে বলেছেন, মিটিং এর বিষয়ে কথা বলবেন।
‘তারা তো সিনিয়র নেতা আমি ভয় পেয়ে গেছি। আমি বললাম, আমার সঙ্গে দু’জন থাকুক। বললো, না তুমি ওদের বিদায় করো। পরে দেখি একটা গাড়ির মধ্যে আলম ভাই আর সুজন ভাই বসে আছেন। আমাকে বললেন উঠ, উঠ…উঠালো।
পরে শাহবাগ থেকে অসীম দাকেও তুলে নিল ওরা। তখন ঢাকা তো অনেক ফাঁকা ছিল। এতো রেস্টুরেন্ট  ছিল না। নিউ মার্কেটে একটা চাইনিজ ছিল,ওখানে আমরা খেতাম। আমাকে তারা গুলশানে নিয়ে গেলেন। সি ফুড নামে একটি রেস্তোরায়। আমি তো ভয়ে ভয়ে বললাম আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন, আলম ভাই বললেন, ভয় পেও না, আমি তো তোমার ভাই আছিই।
সেখানেই প্রথম অসিম দাদার সঙ্গে একাকী কথা বললাম। প্রথম দিনেই দাদা তার সম্পর্কে তার পরিবার সম্পর্কে সব কথা খুলে আমাকে বললেন। তিনি আরও বললেন আমি যেন আরও তার সম্পকে জেনে নেই। তবে আমার সম্পর্কে বললেন- তুমি ছাত্রলীগ করো, তাই আর ‘কোনো খোঁজ নেওয়ার দরকার নেই। এটাই তোমার বড় পরিচয়।
সেদিনই আমাকে তার বাসার ব্যক্তিগত ফোন নাম্বার দিলেন। বললেন- (হেসে) দেখো এখন আমার বিয়ের বয়স। প্রেম করার বয়স নেই। আন্দোলন সংগ্রাম করতে করতে প্রেমের বয়স শেষ। এভাবেই চলছিল। ফোনে কথা হতো খুব কম। দেখা যা হওয়ার তা হতো সংগঠনের কর্মসূচিতেই।
এর মধ্যে আমাদের ছাত্রী সংসদের নির্বাচন হলো। ছাত্রদলের সঙ্গে মারামারিও হলো একবার।আমি  অসুস্থ হয়ে পড়লাম। তখন দেখলাম সকল ছাত্র নেতারা আমাকে দেখতে আসছে।নেতা কর্মীদের ভীরে ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তাররা বিরক্ত হচ্ছে। আসলে ভেতরে ভেতরে সবাই জেনে গেছে। আমি তখন ব্যাকওয়ার্ড পজিশনে (হাসি)। এর পরে আস্তে আস্তে আর কী.তবে আমাদের যতটা তার চেয়েও নেতাকর্মীদের মুখে মুখে আরও বেশি।
এরই মধ্যে কাদের ভাই নেত্রীকে (আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপাকে) জানিয়েছেন। তিনি শুনে ভীষণ খুশি হলেন। ইডেন কলেজের ছাত্রদলের সাথে একবার সংঘর্ষ হলো। আমাদের ১১ জনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হলো।জামিন পেয়ে আপার (শেখ হাসিনা) সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আপা বললেন “তোমরা হল ছেড়ে এভাবে কষ্ট করছো, আর অসীম দায়িত্বে থেকে কি করছে”। আমার আর বুঝতে বাকী থাকলো না কথাটা আপা পর্যন্ত এসেছে।
আর দশটা প্রেমিক প্রেমিকার মতো রমনায় গিয়ে প্রেম করা হয়নি কখনো। মহিলা হোস্টেলের সামনেও কথা হয়নি কোনো দিন। দেখা কথা বা প্রেম সবই হতো, মিছিল, রাজপথে বা দলীয় কর্মসূচিতে। এ বিষয়ে মৃদু হেসে অপু উকিল বলেন, দাদা আসলে খুব মজার মানুষ। কেউ তাকে নিয়ে কিছু বলুক, এটা তিনি কোন ভাবেই চাইতেন না।
বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হলেও সুতো গাঁথার দ্বায়িত্বটাও পালন করেন রাজনৈতিক সতীর্থরাই। প্রয়াত রাজ্জাক ভাই (আবদুর রাজ্জাক) আমার বাবা-মামার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমার শ্বশুরবাড়ির লোজজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। কাদের ভাই নিজেই আমার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে কথা বলেছেন। পরে দুই পরিবারই রাজি হয়।
তিনি বলেন ১৯৯৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয় আমাদের। বিয়ের দিনের মজার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন,  আমাদের বিয়েটাও ঐতিহাসিক। তখন তো শরিয়তপুরে রাস্তাঘাট তেমন ছিল না। সবাই লঞ্চে করে স্লোগান দিতে দিতে বিয়ে বাড়ীতে গিয়েছিল। তখন ছাত্রলীগের প্রায় সকলেই এবং তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অনেকেই বিয়েতে গিয়েছিল। খাবার যাতে কম না পড়ে সেজন্য অতিরিক্ত খাসি-টাসি কেনা ছিল। তারা আসার সময় এ গুলো ঢাকায় নিয়ে এসেছে। ঢাকায় এনে টিংকু ভাইয়ের বাসায় (পল্টনে) রেখেছে। পরে আবার ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীরা মিলে রান্না করে খেয়েছে। মানে এক কথায় বললে- পুরো রাজিনৈতিক বিয়ে হয়েছিল।
এর পরের ইতিহাস সবারই জানা। অপু উকিল আর অসীম কুমার উকিলকে চেনেন না দেশে তেমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবে না। এই জুটি এখনো আছে অটুট, থাকবে চিরকাল।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোবারকপুরে কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা ও ইফতার মাহফিল

Share the post

Share the postইয়াসিন আরাফাত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ  চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুরে কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোবারকপুর মাঝাটোলা তরুণ সংঘের আয়োজনে শনিবার (১৫ মার্চ) বিকেলে মাঝাটোলা গ্রামে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন মাদরাসার ৩৫ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজাহার আলী। কোরআন […]

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি ইউনিটের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

Share the post

Share the postসুবংকর রায়, ইবি প্রতিনিধি : থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদভূক্ত তিনটি বিভাগ এবং কলা অনুষদের একটি বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত স্বতন্ত্র ‘ডি’ ইউনিটের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বলা হয় আগামী ১৬ মার্চ দুপুর ১২ টা থেকে ২৮ মার্চ রাত ১২টা পর্যন্ত আবেদন করতে […]