‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে’ নাটোরে পররাষ্ট্র মন্ত্রী অাব্দুল মোমেন
নাটোর প্রতিনিধি: পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে এম আব্দুল মোমেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক দশকে বহির্বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক তথা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নয়নে ‘অভাবনীয়’ সাফল্য এসেছে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষায় বৈদেশিক বাজারে দক্ষ জনশক্তিসহ রপ্তানীযোগ্যে পণ্যের বাজার সৃষ্টিতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। করোনাজনিত বিশ্বমন্দার ক্ষতি কাটাতে বাংলাদেশ এখন ‘ডিপ্লোমেটিক ইকোনমি’তে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করছে। শনিবার(১৪ই নভেম্বর) দুপুর আড়াইটায় নাটোর সার্কিট হাউসে জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে এসব মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে এম আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনশক্তি, প্রাকৃতিক সম্পদ ও পর্যটন খাতে উন্নত দেশগুলোকে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। একই সাথে রফতানী বাণিজ্য ও এর পরিধি সম্প্রসারণে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি উজবেকিস্তান, পোল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এই তিনটি দেশে দক্ষতা ও সুনামের সাথে বাংলাদেশের শ্রমিকরা কাজ করছে। আমরা এই সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনা করে নতুন ও দক্ষ জনশক্তি তৈরীতে গুরুত্ব দিচ্ছি।’ ড. মোমেন বলেন, ‘প্রবাসী শ্রমিক ভাই-বোনদের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়রাণিমুক্ত গুণগত সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে একটি এ্যাপস তৈরী করে সম্পর্কিত সেবাগুলো প্রদানের চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদুতদের প্রবাসী শ্রমিক-ভাই বোনদের প্রতি বিশেষ মনোযোগি হতে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।’ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘বর্তমান সংকটকালেও দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ। বিগত ১১ বছর ধরে জিডিপি অন্যুন ৭ শতাংশ। বর্তমানে দেশে দারিদ্রের হার ২০.৫ শতাংশ এবং অতিদারিদ্রের হার ১০ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্রের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চেষ্টা করছেন এবং এ উপলক্ষ্যে যে কর্মপরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, তাতে ২০৩০ সালে দারিদ্রের হার ৩ শতাংশ এবং ২০৪১ সালে দারিদ্রের হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। তবে এজন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক চাঙ্গাভাব তরান্বিত করবে।’ পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘পাবলিক ডিপ্লোমেসি বা গণকূটনীতি এই মুহুর্তে দরকার। সরকার তার কাজের জন্য জনগণের ফিডব্যাক চায়। জনগণ সরকারের উদ্যোগগুলোর প্রচার ও প্রসার ঘটালে আমাদের এই ঘাটতি পূরণ হবে। একদি নির্দিষ্ট অঞ্চলে যদি বৈদেশিক বিনিয়োগ আসে, তবে সেখানকার অধিবাসীদেরও তা ইতিবাচকভাবে নিতে হবে। জনমত যদি বিনিয়োগসহিষ্ণু হয় তবে দেশ উপকৃত হবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডিলেও দেশের ভাবমূর্তি বাড়বে।’ করোনাকালে দেশের রপ্তানী বাণিজ্যের আংশিক চিত্র তুলে মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু করোনার সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পিপিই মাস্কসহ প্রায় ১ কোটি সুরক্ষা উপকরণ রপ্তানী করেছে বাংলাদেশ। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ২২ টি সুরক্ষা উপকরণের চাহিদা এলেও বাংলাদেশ ১৪টি উপকরণ সরবরাহ করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে তৈরী সুরক্ষা উপকরণ প্রতিবেশি দেশগুলোকেও উপহার দিয়েছেন। তবুও দেশের কিছু গণমাধ্যম এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারকে বিব্রত করেছে।’ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মডেল হিসেবে মন্তব্য করে ডা. মোমেন বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা পরাস্পরিক সুসম্পর্কের দ্বারা দুই দেশের বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সুরাহা করে চলেছেন। আমরা কারো সাথেই বৈরী আচরণ করবো না, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো সৌহাদ্যপূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ককে অনুসরণ করেই আমরা এগিয়ে যাবো।’ জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল, পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা প্রমুখ। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাটোরের উত্তরা গণভবন ও বঙ্গজ্জ্বল রাজবাড়ি পরিদর্শন করেন।