রাজাপুরে ২০ দফা দাবিতে ডিপ্লোমা কৃষি কর্মকর্তাদের কর্মসূচি পালিত
মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ “ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আমাদের লক্ষ্য কৃষি ও কৃষকের সেবায় ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের ঐক্য গড়তে হবে বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন” এই স্লোগানে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে ঝালকাঠির রাজাপুরের কৃষি কর্মকর্তারা ২০ দফা দাবি জানান। বৃহস্পতিবার (২৯ আগষ্ট) দুপুরে ডিপ্লোমা এগ্রিকালচারিষ্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডি-এ্যাব) রাজাপুর শাখার আয়োজনে রাজাপুর উপজেলা কৃষি অফিসের সামনে তারা ২০ দফা দাবি তুলে ধরেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন রাজাপুর উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান, উপসহকারী কৃষি অফিসার, পলাশ হালদার, মোঃ মেহেদী হাসান খান, মোঃ আশিক মাহমুদ, মোঃ ইব্রাহীম, আশিষ চৌধুরী, এনি আক্তার, আবুল হোসেন আকন, সৌরভ মিস্ত্রী প্রমুখ।
এসময় বক্তব্যে কর্মকর্তার বলেন, বিগত দিনগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বিভিন্নভাবে, বিশেষ একটি গোষ্ঠী দ্বারা শোষণ এবং বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। ঠিক তেমনিভাবে আমরা ডিপ্লোমা কৃষিবিদ/উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও শত বৈষম্যের শিকার হয়েছি। ডিপ্লোমা কৃষিবিদরা দেশের খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দেশের কৃষি এবং কৃষকের উন্নয়নে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে কৃষকের বন্ধু হিসেবে কাজ করে থাকে। সারা বাংলাদেশে প্রতিটি ইউনিয়নে তিনজন করে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ / উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছে। যারা কৃষকের সকল সমস্যার সমাধানে কাজ করে থাকেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সকল প্রকল্প বাস্তবায়নে এই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের ভূমিকা অপরিসীম। মাঠ পর্যায়ে কৃষির উন্নয়নে সরকারের সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এই উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। অথচ এই ডিপ্লোমা কৃষিবিদ /উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বৈষম্যের অন্ত নেই। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ আমাদের কাজে লাগিয়ে আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যায়। মাঠে কাজ করে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ / উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ অথচ বাহবা নেয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কিন্তু এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পর্যন্ত করতে পারিনি। সবচেয়ে কষ্ট লাগার বিষয় হলো আমাদের কোনো পদোন্নতি নেই, একজন পিওনের ও পদোন্নতি আছে অথচ আমাদের জন্ম যেখানে মৃত্যু সেখানে। অন্যায়ভাবে দীর্ঘদিন যাবত আমাদের পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছে। এ রকম শত শত ন্যায়সংগত সুযোগ সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত।
যারা ডিপ্লোমা কৃষিবিদ/ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ তারা আর বৈষম্যের মধ্যে থাকতে চায় না। তাই বৈষম্য নিরসনে তাদের ২০টি দাবি তুলে ধরছেন। ১। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের গেজেটেড কর্মকর্তা ২য় শ্রেণি হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। ২। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ৯ম গ্রেডে ৪০% পদোন্নতি প্রদান করতে হবে। ৩। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের তৃতীয় গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৪। চাকুরীবিধী অনুযায়ী উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিজ জেলায় বাহিরে বদলির অন্যায় এবং অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। ৫। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে প্রশাসন ক্যাডার নিয়োগ প্রদান করতে হবে। ৬। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সকল প্রকল্পে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দের প্রতিনিধি রাখতে হবে। ৭। প্রকল্প তৈরির সময় এসএএওদের প্রতিনিধি এবং প্রতিটি বিভাগীয় মিটিংয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সদস্য রাখতে হবে। ৮। সকল কৃষি অফিসের প্রকল্পের ব্যায়সংক্রান্ত স্বচ্ছতার জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। ৯। খামারবাড়ি, এডি অফিস, ডিডি অফিসে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পদ সৃষ্টি করতে হবে।১০। যত দ্রুত সম্ভব, নিয়োগ বিধিমালা পরিবর্তন এবং গ্রেডেশন তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। ১১। ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ প্রদান করতে হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের জন্য ভর্তির সুযোগ দিতে হবে। ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের জন্য স্বতন্ত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। ১২।ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত করা এবং আলাদা শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। ১৩।প্রতিটি ইউনিয়নে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের স্বতন্ত্র অফিসসহ বাসভবনের ব্যবস্থা করতে হবে। ১৪। নির্ধারিত ভ্রমণ বিল ৫০০০ টাকা প্রদান করতে হবে। ১৫। টাইমস্কেল ও সিলেকশন/উচ্চতর গ্রেড বহাল করতে হবে চাকুরীকাল গণনা করে, আগের মত ৮,১২, ১৬ বছরে করতে হবে। ১৬। ৩/৪ বছরের জটিলতা নিরসন করতে হবে। ১৭। ব্লকের কাজ ত্বরান্বিত করতে সরকারিভাবে মোটরসাইকেল ও স্মার্টফোন+মাসিক ডাটার ব্যবস্থা করতে হবে। ১৮। সর্বস্তরে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। ১৯। হয়রানি/প্রতিহিংসামূলক বদলি বন্ধ করতে হবে। ২০। নিয়োগ পাওয়ার পর ৬ মাসের বাধ্যতামূলক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।