যুবলীগের নেতৃত্বে বাধ্যতামূলক “ডোপ টেস্ট”
চট্টগ্রাম সংবাদ: সমাজে মাদকের বিস্তার এতটাই ভয়াবহ যে, এর থেকে মুক্তি লাভ কিংবা মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতিতে নেতৃত্ব নির্বাচন, গাড়ি চালককে লাইসেন্স প্রদানসহ সমাজের নানা ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট এত দাবি দিনদিন জোরালো হয়ে উঠেছে, এবং অনেক ক্ষেত্রে তা কার্যকরও হচ্ছে।
এর ধারাবাহিকতায় বেশিরভাগ পদপ্রত্যাশীসহ তৃণমূল থেকে দাবি উঠেছে যে, চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগে আসন্ন নেতৃত্ব নির্বাচনে ‘ডোপ টেস্ট’বাধ্যতামূলক করা হোক।
এজন্য আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক, সাম্প্রতিক সময়ে যুবসমাজের ‘মধ্যমণি’ হয়ে ওঠা ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাইমকে উদ্যোগী ও কাণ্ডারির ভূমিকায় দেখতে চেয়েছিলেন চট্টগ্রাম যুবলীগে বেশিরভাগ পদপ্রত্যাশী ও তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
ব্যারিস্টার নাইম বলেছিলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে যদি বলি বিষয়টা খুবই ভালো। তবে বিষয়টি অনেকের জন্যই অসম্মানজনক। অনেকেই হয়তো এটাকে ভালোভাবে নেবে না। যারা রাজনীতি করে তাদের একটা আত্মসম্মানবোধ আছে। তবে এটাও সত্যি যে, এখানে খারাপ লোকজনও আছে। আমাদের মাদার কনসার্ন আওয়ামী লীগ যদি বিষয়টা চায়, তাহলে আমরাও বিষয়টা সুন্দরভাবে করে দেব। এতে কোনো সমস্যা হবে না।’
এর প্রেক্ষিতে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির পদপ্রত্যাশীরা বলছেন, এ প্রসঙ্গে যুবসমাজের ‘আইকন’ হিসেবে পরিচিত ব্যারিস্টার নাইমের জোরালো ভূমিকা ও অবস্থান প্রত্যাশা করি আমরা। একুশে পত্রিকায় তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটিতে কোথাও যেন একটু গ্যাপ আছে। এবং এটি নাইমের বক্তব্য বলে আমাদের মনে হয়নি।
নাইম বলেছেন, ‘বিষয়টি অনেকের জন্যই অসম্মানজনক। অনেকেই হয়তো এটাকে ভালোভাবে নেবে না। যারা রাজনীতি করে তাদের একটা আত্মসম্মানবোধ আছে।’
তৃণমূলের প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনীতির আড়ালে তারা যখন মাদক সেবন করেন এবং অনুগত নেতা-কর্মীদের মাঝে মাদকের বিস্তার ঘটান, তখন কোথায় যায় তাদের আত্মসম্মানবোধ?
‘প্রকৃতপক্ষে মাদকসেবনকারী নেতারাই এটিকে অসম্মানের মনে করবে। কারণ ডোপ টেস্ট হলে সমাজের কাছে তার প্রকৃত মুখোশ উন্মোচিত হবে, এবং যেনতেনভাবে তাদের নেতৃত্বে আসার পদ রুদ্ধ হবে। মাদকাসক্ত যারাই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, তারাই এটিতে অনীহা প্রকাশ করবে, তা-ই স্বাভাবিক। কিন্তু মাদকমুক্ত স্বচ্ছ, সৎ ও ত্যাগী ভাবমূর্তির পদপ্রত্যাশীরা এটিকে কখনো অসম্মানের মনে করবেন না; বরঞ্চ বুক উচিয়ে ‘ডোপ টেস্ট’ পরীক্ষায় হাজির হবেন তারা।’
ডোপ টেস্টকে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়ে মহানগরের সভাপতি পদপ্রত্যাশী বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক দিদারুল আলম দিদার বলেন, ‘সকল প্রার্থীর সিভি যাচাই-বাছাই করে নেতিবাচক চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ডোপটেস্ট করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করবো কেন্দ্র সুদক্ষ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এবারের কমিটি থেকে বিতর্কিতদের দূরে রাখবে।’
আরেক সভাপতি পদপ্রত্যাশী বর্তমান কমিটির সিনিয়র সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আসলে আমরা তো তৃণমূল পর্যায়ে রাজনীতি করে এসেছি। মনেপ্রাণে দলের আদর্শকে লালন করেছি। কিন্তু বর্তমানে মাদক সংশ্লিষ্টরা নানাভাবে দলে আসতে তৎপরতা চালাচ্ছে। এমনটা হলে আমাদের সম্মান নিয়ে রাজনীতি থেকে অবসর নিতে হবে। কারণ তাদের সাথে আমরা রাজনীতি করতে পারবো না। এক্ষেত্রে বিতর্ক এড়াতে ডোপটেস্ট হওয়া উচিত। কেন্দ্রের চাইলে আমিও এই টেস্টে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক।’
নগর যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম বলেন, ‘আমি চাই মাদকাসক্ত ও বিতর্কিতদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স থাকুক। ডোপটেস্ট হলে যে নেতৃত্ব বাছাইয়ে স্বচ্ছতা বাড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এতে বিতর্কিত কারো অনুপ্রবেশের সুযোগ থাকবে না। আমি চাই নগর যুবলীগে যোগ্য নেতৃত্ব আনতে অবশ্যই ডোপটেস্ট করা হোক।’
উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু তৈয়ব বলেন, ‘শুধু ডোপটেস্ট না, ইতিবাচক সবকিছুকে আমি সবসময়ই স্বাগত জানাই। একজন মাদকাসক্ত কখনো মানবিক যুবলীগের কান্ডারি হতে পারে না। আপনারা দেখে থাকবেন অনেক বড় ও গুণী খেলোয়াড়রা ডোপটেস্টর কারণে ছিটকে পড়েছে। রাজনীতিতেও এই চর্চাটা শুরু হোক। এমনটা হলে তা নিসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ হবে বলে আমি মনে করি।’