বোর্ড সভার নামে চট্টগ্রাম ওয়াসার টিউলিপ-বিলাস

নিজস্ব প্রতিনিধি(চট্টগ্রাম): চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সভা এতদিন ওয়াসা ভবনের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। কিন্তু আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে কক্সবাজারের পাঁচ তারকা হোটেল ‘রয়েল টিউলিপ সী পার্ল বিচ রিসোর্ট এন্ড স্পা’-এ।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, রয়েল টিউলিপে আয়োজিত চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড সভায় ১৩ সদস্য, দেশি ও বিদেশি পরামর্শক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ওয়াসার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে ৩০ থেকে ৪০ উপস্থিত থাকবেন বলে কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলামও বোর্ড সভায় যেতে আমন্ত্রণ পেয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে; যদিও এই তথ্য জানা নেই বলে জানান ওয়াসার ডিএমডি গোলাম হোসেন। এছাড়া বোর্ড সভায় যাওয়া কেউ কেউ তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়েও যেতে পারেন। অনেকেই ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে রয়েল টিউলিপে থেকে পরদিন চট্টগ্রামে ফিরবেন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রয়েল টিউলিপে পুরো আয়োজনে যত টাকা ব্যয় হবে, তার সামান্য অংশ ওয়াসার পক্ষ থেকে দেয়া হবে। খরচের বাকি অংশ ওয়াসার প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারসহ নানা খাত থেকে আসবে।
কী পরিমাণ টাকা এতে খরচ হবে, জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘খরচ ওয়াসা থেকেও হবে। আর যারা ওয়াসায় যুক্ত সবাই মিলে অর্থের সংস্থান করবেন।’ কী পরিমাণ টাকা খরচ হতে পারে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আমি জানি না। যখন খরচ হবে, তখন দেখা যাবে।’
এদিকে বিল আদায়ে অনিয়ম, পানির সংযোগ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর সম্প্রতি ওয়াসার কার্যালয়ে দুদকের হানা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অস্বাভাবিক ভুতুড়ে বিল কিংবা প্রশিক্ষণের নামে কর্মকর্তাদের উগান্ডা ভ্রমণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সমালোচনার মধ্যে আছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
এমন অবস্থায় কক্সবাজারের পাঁচ তারকা হোটেলে বোর্ড সভা করার ঘটনাকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনন্দ ভ্রমণ। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘রয়েল টিউলিপে বোর্ড সভা করা বিলাসিতা, আনন্দ ভ্রমণ ছাড়া কিছুই নয়। বোর্ড সদস্য, মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও দেশি ও বিদেশি পরামর্শকদের খুশি রাখতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এ উদ্যোগ নিয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে ওয়াসার এমডি প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘কতজনে কত কথা বলবে, প্রশ্ন তুলবে, এজন্য তো আমরা কাজ আটকিয়ে রাখতে পারি না। প্রশ্ন তো তুলবেই। ভালো কাজ করলেও প্রশ্ন তুলবে, খারাপ কাজ করলেও প্রশ্ন তুলবে। কাজ তো বন্ধ রাখা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘ওয়াসার ভালো কাজগুলো নিয়ে আলাপ করেন। এগুলো নিয়ে আলাপ করছেন কেন? ওয়াসা কি কোন ভালো কাজ করে না? পাইপলাইন করতেছে, পানি দিচ্ছে, যেখানে সারারাত মানুষ জেগে থেকে পানি টানতো, এখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে, রাতজাগা লাগে না। এখন মানুষের পাম্প চলে গেছে, খরচ কমে গেছে, বিদ্যুৎ লাগে না। এগুলো আপনাদের মনে পড়ে না। এগুলো কী জিজ্ঞেস করেন?’
রয়েল টিউলিপে বোর্ড সভা আয়োজনের ‘যুক্তি’ তুলে ধরে ওয়াসার এমডি বলেন, ‘সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, প্রেজেন্টেশন এগুলো তো হতেই হবে। সেখানে (টিউলিপ) হওয়ার কারণ হচ্ছে, এখানে (চট্টগ্রাম) ডিস্টার্ব হয়। মানুষ আসে, এটা কথা বলে, সেটা কথা বলে। টানা কাজ করা যায় না। সেজন্য বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শ হচ্ছে, এগুলো বাইরে করা। যাতে কোন ঝামেলা না হয়। একটানা কাজ করা যায়।’
প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘এগুলো তো শুধু আমরা করি না। সব ডিপার্টমেন্ট থেকে এগুলো করা হয় মাঝে মাঝে। করতে হয় এগুলো।’ রয়েল টিউলিপে কতজন যাবেন সেটা জানা নেই বলেও জানান ওয়াসার এমডি।