বাংলাদেশে এখনও করোনা সংক্রমণের চূড়ায় পর্যায়ে পৌঁছায়নি

Share the post

অনলাইন ডেস্ক

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার পরই করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করবে৷ এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে ধীরে ধীরে লকডউন তুলে নেয়া যেতে পারে৷ নয়তো পরিস্থতি হঠাৎ খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷

তবে এরইমধ্যে দোকান ও শপিং মল খুলে দেয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার৷ যদিও ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে বেশ কিছু শপিং মল কর্তৃপক্ষ নিজেদের সিদ্ধান্তে দোকান বন্ধ রাখছে৷

রোববারই বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮৮৭ জন  করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন ১৪ জন৷ তবে সংক্রমণের প্রবণতা দেখে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এখনও বাংলাদেশ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি৷ এই বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা পেতে টেস্ট বা পরীক্ষার পরিমান আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মত দিয়েছেন তারা৷

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৮ মার্চ৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে৷ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা তেমন বাড়েনি৷ যেমন ৭ এপ্রিল শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিলো ৪১ জন৷ সেদিন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছিলো ১৬৪ এবং মারা যান ১৭ জন৷ কিন্তু এরপর থেকে শনাক্ত রোগী এবং মৃত্যু বাড়তে থাকে৷ মে মাসে তা আরো দ্রুত গতিতে বাড়ছে৷ 

অবশ্য টেস্টের পরিমান যত বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েও শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে চলছে৷ এখন গড়ে যাদের পরীক্ষা করা হয় তাদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ ভাগ আক্রান্ত পাওয়া যায়৷ তবে মৃত্যুর হার এখনো শতকরা দুই ভাগের নিচে আছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান খান বলেন, ‘‘আমাদের এখানে এখন করোনা টেস্ট বেড়েছে৷ তাই রোগীও বাড়ছে৷ এখন প্রতিদিন পাঁচ হাজার বা তার কিছু বেশি টেস্ট করা হচ্ছে৷ কিন্তু বাস্তব অবস্থা বুঝতে প্রতিদিন ২০-২৫ হাজার টেস্ট দরকার৷ তবে যে টেস্ট

হচ্ছে তাতেও প্রতিদিন আক্রান্ত রোগী বাড়ছে৷ এই বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত আছে৷ মৃত্যুও বাড়ছে৷ আবার অনেকে মারা যাচ্ছেন করোনার উপসর্গ নিয়ে৷ যারা পরীক্ষার বাইরে থাকছেন৷ ফলে বাস্তব অবস্থাটা বোঝা মুশকিল৷’’

বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সেসব দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একটা সময়ে চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছায় ।  এরপর সেখান থেকে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে৷ চীন আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও একই ঘটনা ঘটেছে৷ বাংলাদেশে এখনও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে কীনা বা কবে পৌঁছাতে পারে সেটি যথেষ্ট পরীক্ষা না হলে বলা সম্ভব নয় বলে জানান জাহিদুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা স্পষ্ট যে করোনা সংক্রমণ অব্যাহতভাবে বাড়ছে৷ আর চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার পর সংক্রমণ কমতে শুরু করবে৷ এই কমা এক-দুইদিনের রেকর্ড দেখে বলা সম্ভব নয়৷ এটা যদি অব্যাহতভাবে কয়েক সপ্তাহ ধরে কমতে থাকে তাহলে আমরা কমছে সেটা বলত পারি৷ কিন্তু সেই পরিস্থিতি আমরা দেখছি না৷’’

সংক্রমণের হার কমায় ইউরোপের দেশগুলো এখন লকডাউন তুলে নিতে শুরু করেছে৷ রোববার থেকে বাংলাদেশেও ঈদ কেনাকাটার জন্য শপিং মল, দোকান খোলা হয়েছে৷ তবে তার মতে, ‘‘এই পরিস্থিতিতে লকডাউন তুলে নেয়া বা দোকানপাট খুলে দেয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷’’ 

‘আমরা সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে যাইনি’

বাংলাদেশে ৬৪ জেলার সবকটিতেই এখন করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে৷ এরমধ্যে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা শহর৷ দেশে মোট আক্রান্তের ৫৮ দশমিক ১৪ ভাগ সেখানে৷ এর বাইরে ঢাকা বিভাগে ২৩ দশমিক ২১ ভাগ, চট্টগ্রামে ছয় দশমিক ছয় ভাগ, সিলেটে এক দশমিক ৪৯ ভাগ, রংপুরে দুই দশমিক ৭৪ ভাগ, খুলনায় এক দশমিক ৯৬ ভাগ, ময়মনসিংহে তিন দশমিক ৭৫ ভাগ, বরিশালে এক দশমিক ২৪ ভাগ এবং রাজশাহীতে এক দশমিক ৪০ ভাগ করোনা আক্রান্ত৷

এখন পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই ছিলেন ঢাকা শহরের৷ ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর  ও রাজশাহীও হটস্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে৷ আইইডিসিআর-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, ‘‘আমাদের এখানে উহানের মত সংক্রমণের কোনো ক্লাস্টার নাই৷ এক জায়গায় হয় আবার কমে যায়৷ নতুন জায়গায় শুরু হয়৷ সংক্রমণের এই নতুন জায়গা বেশি৷ আর সংক্রমণের সংখ্যাও বাড়ছে৷ ফলে আমরা এখানো সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে যাইনি৷ কোনটা চূড়ান্ত পর্যায় তা তখনই বোঝা যাবে যখন সংক্রমণ ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকবে৷’’

তিনি মনে করেন টেস্ট কম হলেও তা যদি সঠিক ‘স্যাম্পলিং’ বা প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা অনুযায়ী হয় তাহলে বাস্তব অবস্থা বোঝা যায়৷ ‘‘মহামারির প্রথম ঢেউ যখন এখানে আসে তখন সারাদেশে একশ’র বেশি কিছু রোগী ছিলো৷ তখন অল্প সংখ্যায় হলেও আমাদের মহামারি বুঝতে কিন্তু অসুবিধা হয়নি,’’ বলেন তিনি৷

তার মতে, করোনায় মৃতের সংখ্যা যা বলা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি৷ কারণ অনেকে পরীক্ষা ছাড়াই মারা গেছেন ।  

জাহিদুর রহমানের মত তিনিও মনে করেন, করোনা আক্রান্ত কমতে শুরু করলে তবেই পর্যায়ক্রমে নিয়ম মেনে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড শুরু করা যায়, খুলে দেয়া যায়, তার আগে নয়৷ ‘‘কোনো হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে পরিস্থতি হঠাৎই খারাপ হয়ে যেতে পারে৷ তাই না বুঝে পরিস্থিতি অনুকুলে আসার আগে দোকানপাট, বাজার খুলে দেয়া ঠিক হবে না,’’ বলেন ডা. মোশতাক৷ সুত্র : ডি ডব্লিউ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

Share the post

Share the postমির্জা তুষার আহমেদ,নওগাঁ: শফিউল আজম টুটুলকে আহ্বায়ক ও মোস্তাফিজুর রহমান মানিককে সদস্য সচিব করে নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানি ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান এই কমিটি অনুমোদন দেন। কমিটির অন্যান্য নেতারা হলেন, যুগ্ম-আহ্বায়ক দেওয়ান কামরুজ্জামান […]

বিএনপি এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর পক্ষ থেকে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

Share the post

Share the postতুহিনুর রহমান তালুকদার  স্টাফ রির্পোটার :বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এর পক্ষ থেকে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ১২ ই রামাদান ১৪৪৬ হিজরি ১৩ ই – মার্চ ২০২৫ ইংরেজি রোজ বৃহস্পতিবার কাজীগঞ্জ বাজার এর আজিজুর রহমান মার্কেট এর ছাঁদের উপরে আয়োজন করা হইয়াছে। উক্ত ইফতার মাহফিলে প্রধান […]