সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট কিছুটা তলিয়ে যাওয়ায় হাওর ও বিলপাড়ে মানুষ কিছুটা পানিবন্দি হয়ে পড়ায় নৌকার চাহিদা বেড়েছে। পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় নৌকার চাহিদাও বেড়েছে বেশ। জানা যায়,খালিয়াজুরী উপজেলায় বন্যার পানি অনেকটা বৃদ্ধি পাওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ। অনেক রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বসতঘরেও পানি ছুঁই ছুঁই। এছাড়া হাওর অঞ্চলের মানুষেরা পারাপার হওয়ার পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে হাতে তেমন কাজ না থাকায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ কারণে নৌকা কিনে মাছ ধরার কাজও করেন। তাই নৌকা বিক্রিও বেড়েছে কয়েকগুণ।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার খালিয়াজুরী উপজেলার লেপসিয়া হাটে নৌকা ব্যবসায়ীরা ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতির রঙের ও ঢঙের নৌকা নিয়ে হাজির হন। আকার ও কাঠের মান ভেদে একেকটি নৌকা বিক্রি হয় পাঁচ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকায়। তবে চাহিদা মোতাবেক আরও বড় নৌকাও সরবরাহ করা হয়ে থাকে এ হাট থেকে। সকাল থেকেই শুরু হয় নৌকা বিকিকিনির কাজ। বর্তমানে নদ-নদী ও খালে-বিলে পানি বৃদ্ধির কারণে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে নৌকা কিনতে। এলাকার ক্রেতারা এই হাট থেকে নৌকা কিনে নিয়ে যান। হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণে এবং চাহিদা মোতাবেক নৌকা সরবরাহ না থাকায় বর্তমানে নৌকার দাম কিছুটা বেশি বলে জানান বিক্রেতারা। নৌকা বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, ভালো কাঠের নৌকা পাওয়া যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকা কিনে নিয়ে যায়। এখন বর্ষাকাল। নৌকার চাহিদা বেড়েছে। এখন বর্ষা মৌসুম। আমাদের দিনরাত পরিশ্রম করতে হয়। নৌকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কাজ বেড়ে গেছে। এদিকে নেত্রকোনায় অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌকা তৈরির ধুম পড়েছে। মৌসুমী কাঠমিস্ত্রিরা এখন এ কারণে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। দিনরাত হাতুরি-বাটালের শব্দে মুখর নেত্রকোনার নৌকা বিক্রির জন্য পরিচিত হাটগুলো।
জানা যায়, নেত্রকোনার ১০টি উপজেলায় বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতে নৌকার প্রয়োজন হয়। ফলে এ সময় প্রতি বছর স্থানীয় কাঠমিস্ত্রীরা নৌকা বানানোর প্রস্ততি নেন। এ জন্য অনেকে নৌকার হাটের কাছাকাছি জায়গা বেছে নেন। অনেকে অন্য সময় কৃষিকাজ করলেও এ সময় কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কাঠমিস্ত্রি বলরাম সূত্রধর, বিশ্বজিৎ সূত্রধর, স্বপন সূত্রধর, পলাশ সূত্রধর, হরিমোহন সূত্রধরসহ অনেকেই জানান, এখন প্রায় প্রত্যেক এলাকার বড় রাস্তা পাকা। ফলে দূরের যাত্রার জন্য কেউ বড় নৌকা তৈরি করে না। বর্ষায় এপাড়া থেকে ওপাড়া যাতায়াতের জন্য ছোট নৌকার প্রয়োজন হয়। তাই ছোট নৌকার কদর বেশি। অধিকাংশ কাঠমিস্ত্রি জানান, বর্ষা মৌসুমে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেই তাদের সংসার চলে। ছোটবেলা থেকে অনেকে বংশ পরম্পরায় এ কাজ করছেন। একটি ছোট নৌকা তৈরিতে তিনজনের ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগে। খরচ হয় ৮ থেকে ১৮ হাজার টাকা। হাটে তারা ওই নৌকা ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। খালিয়াজুরী উপজেলার নগর ইউনিয়নের প্রফুল্ল সূত্রধর (৬৫) জানান, তিনি দীর্ঘ ৫৫ বছর কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন। ছোটবেলা থেকেই হাতুড়ি বাটালের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব। বলাবাহুল্য এটি তার বাপ-দাদার পেশা। তাদের কাছেই হয়েছে হাতেখড়ি। এখন বর্ষা মৌসুমে তিনি নৌকা তৈরি করছেন। শুকনো মৌসুমে ঘর, খাট, চেয়ার, টেবিল ড্রেসিং টেবিল, আলনা. আলমারি ইত্যাদি তৈরি করে হাটে বিক্রি করে সংসার চালান। কাঠমিস্ত্রি রমেন স্যানাল জানান, তিনি চুক্তিতে বায়নায় নৌকা তৈরি করেন। প্রতিদিন ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা মজুরি পান। বর্ষার সময় এ কারণে আয়-রোজগার ভালো হয়। শুকনো মৌসুমে তিনি কৃষিকাজ করেন।