বদলে যাওয়া একটি থানার গল্প “চট্টগ্রামের কোতোয়ালী মডেল থানার কারণে পাল্টে যাচ্ছে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা”
সীমানা প্রাচীরের দেয়ালে লেখা আছে, ‘পুলিশ জনতা, জনতাই পুলিশ’সহ নানা স্লোগান। রয়েছে জাতীয় পতাকাসহ নানা চিত্রকর্ম। ফটক দিয়ে ঢোকার সময় হাতের ডান দিকে একটি বাগান। লাগানো হয়েছে নানা ফুলের গাছ। গাছগুলোতে ফুলও এসেছে। রয়েছে একটি ছাউনি। যেটি ‘সেবা ছাউনি’ নামে পরিচিত, জরুরি সেবা দেওয়া হবে সেখানে। মূল ভবনে ঢুকতে ঝোলানো ব্যানারে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘জিডি করতে টাকা নয়; মিষ্টি হেসে ধন্যবাদ দিন’।
এসব দৃশ্য চোখে পড়বে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী মডেল থানায় ঢুকলে। অথচ বছর খানেক আগেও নগরের ব্যস্ততম অনেকের বিরক্তির কারণ ছিল এই থানা প্রাঙ্গণ। সারাক্ষণ জটলা লেগে থাকার পাশাপাশি পরিবেশ ছিল নোংরা। দুর্গন্ধ থাকতো নিয়মিত। ওই এলাকা পাড়ি দিতে দুর্ভোগে পড়তে হতো পথচারীদের। কিন্তু সেই দৃশ্য এখন উধাও। এখন থানার পাশ দিয়ে গেলেই মন জুড়িয়ে যায়। প্রায় ৬০টি নান্দনিক চিত্রকর্ম ও দেয়াল লিখন দিয়ে কোতোয়ালি থানার ভেতরে-বাইরে সাজানো হয়েছে।

প্রবাদে ছিল, ‘বাঘে ছুঁলে আঠেরো ঘা, আর পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ!’ কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালি থানার অনন্য পুলিশিং বদলে দিচ্ছে পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ধারণা।
এই থানায় যোগ দিয়ে বর্তমান ওসি মোহাম্মদ মহসীন শুরু করেন ‘হ্যালো ওসি’ প্রোগ্রাম। এটি এখন সিএমপির প্রত্যেক থানায় চালু হয়েছে। ‘হ্যালো ওসি’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এখন ‘হ্যালো কমিশনার’ চালু করেছে সিএমপি।
সরেজমিনে দেখা যায়, থানার ভেতরে খালি জায়গা লাগানো হয়েছে হরেক রকমের ফুলের গাছ। যেটি প্রকৃতিপ্রেমীদের মন ছুঁয়ে যাবে। জরাজীর্ণ ওয়ার্ক স্টেশন বদলে গেছে। সংস্কারের পর একসঙ্গে ২৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে বসে সেবা দিতে পারেন। সেবাপ্রার্থীদের জন্য আনা হয়েছে নতুন চেয়ার।
থানায় সেবা নিতে আসা আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘‘আদালত এলাকায় অবস্থান হওয়ায় কোতোয়ালি থানার প্রায়ই আসা হয়। কিন্তু এই কোতোয়ালি থানাকে আমি আগে দেখিনি। সত্যি বদলে গেছে কোতোয়ালি থানা।’’
থানা সংলগ্ন ফিরিঙ্গবাজারে বসবাস করেন ইরফানুল আলম। তিনি বলেন, আগে থানার পাশ দিয়ে আমরা ভয়ে হাঁটতাম না। ওই এলাকাটা সবসময় নোংরা থাকতো।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু এখন আমরা থানার পাশে আড্ডা দিই। দেয়ালে লেখা বাণীগুলো প্রায়ই পড়ি। আসলে কোতোয়ালি থানা এখন নগরের অন্য থানাগুলোর রোল মডেল।

ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, পুলিশ জনগণের বন্ধু সেই কথাটার বাস্তব রূপ দিতে সিএমপি কমিশনার স্যারের নির্দেশে কোতোয়ালি টিম কাজ করছে।
‘একটি সেবা ছাউনি করেছি। সেখানে জরুরি সেবা দেওয়া হবে। সীমানা প্রাচীরের স্বাধীনতা, ইতিহাস, পুলিশিং এর বিভিন্ন বাণী লেখা হয়েছে। এর মাধ্যমে থানায় যারা আসবেন তাদের ভেতর একটি ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে বলে আশা করছি।’
ওসি বলেন, থানার অফিসাররা যাতে ভালো পরিবেশে কাজ করতে পারেন সেজন্য অত্যাধুনিক ওয়ার্ক স্টেশন করা হয়েছে। জরুরি সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’