নেত্রকোনা শহরের প্রধান রাস্তার পাশে জমজমাট সবজির বাজার, রয়েছে জীবনের ঝুঁকি
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : নেত্রকোনা শহরের প্রধান সড়কে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে গৃহস্থালি কৃষিতে উৎপাদিত তাজা শাক-সবজির বাজার।এসব ভাসমান সবজির বাজারে বিকেল থেকেই পারিবারিক দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার প্রিয় দেশিয় শাক-সবজি কিনতে মধ্য রাত পর্যন্ত ভিড় করেন স্থানীয় ও শহরের বাসিন্দারা। প্রতিদিন নেত্রকোনা শহরের প্রধান সড়কে মোক্তারপাড়া, ছোট বাজার সহ শহরের প্রতিটি সড়কে বিকেলে থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত চলে এই সব ভাসমান সবজির বাজার। শহরের অনেকেই বিকেলে ঘুরতে বের হয়ে ঘরে ফেরার সময় প্রয়োজনীয় কাঁচা বাজার সরে ফেলেন এই সব ভাসমান সবজির বাজার থেকে। সল্প সময়ের অল্প আলোর বাজারে মেলে নানান ধরনের শাক-সবজি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খুবই কম দামে দেশিয় নানান ধরনের সুস্বাদু সবজির সমাহার। এক একজন গৃহকর্তা নিজের উঠান, বাগান, পুকুর পাড় বা সবজি বাগানে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের প্রয়োজনের অতিরিক্ত অংশটুকু ছোট ব্যাগ, বস্তা বা সাজিতে পসরা সাজিয়ে বসেন শহরের প্রধান সড়কে এবং তাঁরা খুব ভালো দামে বিক্রি ও করেন এই সব ভাসমান সবজি। শুধু শাক-সবজিই নয় নানান ধরনের মৌসুমী দেশিয় ফলেরও উপস্থিতি ভালো থাকে প্রতিদিন রাস্তার ধারে বসা এই সব বাজারে। বিলুপ্ত প্রজাতির দেশি ফল কিনতে বাজারে আসা লোকদের আগ্রহও থাকে অনেকটাই বেশি। এছাড়া গৃহস্থালিতে পালন করা দেশি মুরগি, কবুতর ও হাস দেখা যায় শহরের এই সব ভাসমান বাজারে। সেখানে মনের মতো তাজা সবজি কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা। একটু দরদাম করে অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় শাক-সবজি ও দেশি ফলমূল কিনতে পারেন তারা। সব বিক্রেতাই সামান্য কিছু সবজি নিয়ে এসে দরদামে মিললেই দিয়ে দেন সেগুলো। অনেকে কেজি ওজন ছাড়া ঠিকা বিক্রি করেন। আবার অনেকে বিক্রি করেন কেজি দরে। এক কথায় নেত্রকোনা শহরের এই সব ভাসমান বাজারে বাঙ্গালির পূরানো সংস্কৃতির কিছুটা হলেও দেখা মেলে। এই ভাসমান বাজারে সবজি বিক্রেতা আব্দুল মন্নান ফকির বলেন, আমি নিজেদের জন্য কিছু শাকপাতা লাগাই। সেখান থেকে মাঝে মধ্যে অতিরিক্ত অংশ এখানে নিয়ে এসে বিক্রি করি।
আরেক বিক্রেতা আব্দুল বারেক বলেন, আমরা এমনে কৃষি কাজ করি। এহনতো অবসর সময় চলে, আমনের জমি চাষ করতে আছি। এই ফাঁকে বাড়ির পুকুর পাড়ে কিছু শাক-সবজি লাগাইলাম। নিজেরাও খাই, বেশি টুকু এখানে নিয়ে এসে বিক্রি করি। বিক্রেতা মোতাহার মৃধা বলেন, নিজেরা নতুন বাড়ি করেছি। বাড়িতে আমরা পেয়ারা ও কলাগাছ লাগাইছি। ফলন ভালো হওয়ায় নিজেরা খেয়ে অতিরিক্ত টুকু এখানে নিয়ে এসে বিক্রি করছি। বাজারের নিয়মিত ক্রেতা মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম আরিফ বলেন, আমরা শহরে থাকি। শহরের বাজার গুলোতে চার থেকে পাঁচ দিন পুরোনো সবজি পাওয়া যায়। আর এখানে ক্ষেত থেকে তাৎক্ষণিক নিয়ে আসা তাজা সবজি পাওয়া যায়। তাই আমরা এখানে এসে বাজার সেরে নেই। শহরের ছোট বাজার এলাকার বাসিন্দা স্থানীয় জোবায়ের আহমেদ বলেন, শহরের প্রধান সড়কে রাস্তার পাশে বাজারটি হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে বেচা-কেনা করেন। বাজারের জন্য পাশে সুন্দর করে একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা আছে, সেখানে গেলে সেটি আরও ভালো হবে। মোক্তারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোজ্জাম্মেল হক বলেন, শহরের প্রধান সড়কে নেত্রকোনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বাজারটি এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এরকম ফ্রেশ সবজির বাজার খুবই কম দেখা যায়। এটাকে অন্য জায়গায় কিভাবে স্থায়ী রুপ দেওয়া যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া খুবই জরুরি। কারণ এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতারা চলাচল করে। এই ভাসমান সবজির বাজার বিষয়ে জানতে চাইলে নেত্রকোনা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া তাবাসসুম বলেন, এই ভাসমান সবজির বাজার বিষয়ে আমার জানা নেই, তবে এরকম হলে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং তাদের জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা করা হবে।