নেত্রকোনার দুর্গাপুরে মাল্টা চাষ করে সফল কৃষক আলাল উদ্দিন

Share the post
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামের আলাল উদ্দিন মাল্টা চাষে সফলতা পেয়েছেন। তার বাগানে যেদিক চোখ যায় সে দিকেই শত শত গাছে ঝুলে আছে বারি-১ জাতের মাল্টা। ভরপুর মাল্টায় নুয়ে পড়ছে ডালপালা। সবুজ অরণ্যে পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে লেবু জাতীয় এ রসাত্মক ফল মাল্টা।দেখতে কাঁচা মনে হলেও বেশ সুমিষ্ট ও রসাল এ মাল্টা।গতকাল আরাফাত এগ্রো ফার্মের মালিক আলাল উদ্দিনের মাল্টার বাগানে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। জানা যায়, অনাবাদি পতিত এক একর জমিতে ২০২১ সালে মাল্টার গাছ লাগিয়েছিলেন আলাল উদ্দিন। এই জমি মাল্টা চাষের উপযোগী করতে এখন পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। বর্তমানে ৩ শতাধিক মাল্টার চারা রয়েছে বাগানে।চারা রোপণের দুই বছরেই মাল্টার বাজারজাত করে বিক্রি করেছেন ১ লাখ টাকার বেশি। এ বছর যে পরিমান মাল্টার ফলন হয়েছে তাতে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন। এ বছরই জমিতে মাল্টা চাষ করতে যে খরচ হয়েছিলো সেটা উঠে আসবে।
আলাল উদ্দিন বলেন,আমি ঢাকায় ফার্মাসিউটিক্যাল চাকরি করছি। আমাকে এ চাষে উদ্ধত করেছে আমাদের কৃষি অফিসের লোকজন। গ্রামে আমার পতিত জায়গায় কৃষি অফিস থেকে কিছু চারা নিয়ে প্রথমে শুরু করি। পরবর্তীতে দেখি গাছের ধরন বেশ ভালো। পরপরই আর কিছু চারা কিনে আনি ভালোভাবে যত্ন নিয়েছি এক বছরই গাছে মুকুল আসে গাছে যে পরিমাণ মুকুল আসে তাতেই আগ্রহ আরো বেড়ে যায় ভালো ফলন হবে ধারনায় চিন্তা করলাম জমি ফাঁকা না রেখে পুরো এক একর জমি পুরোটাই মাল্টা বাগান করি। বাগানের অনেক যত্নে করেছি এবং আমি সফলতাও পেয়েছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর যে পরিমাণ ফলন হয়েছে তাতে আমার সব খরচ মিটিয়ে লাখ টাকা লাভবান হবো বলো আশা করছি। মাল্টা বাগানের পরিচর্যাসহ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন আলাল উদ্দিনের বোন জামাই এমদাদুল হক। তিনি জানান,শুরু থেকেই খুব যত্ন নিয়েছি। গত বছরেও ভালো ফলন হয়। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর মাল্টার আকারও বড় এবং রসালোও হবে। এ মাসের শেষের দিকে মাল্টার বাজারজাত করা হবে। মাল্টা বাগান দেখতে আসা আল নোমান শান্ত নামে এক যুবক বলেন, ‘আমি আলাল উদ্দিন ভাই এর বাগান দেখে অভিভুত হয়েছি। এখানকার মাটিতে এতো ভালো মাল্টার ফলন হবে সেটা ভাবতে পারি নাই। মাল্টা খেলাম যা খুবই সুস্বাদু ও মিষ্টি।
দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার নিপা বিশ্বাস জানান,চাষি আলাল উদ্দিন মাল্টা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।উনার মাল্টা বাগানে বেশ ভালো ফলন হয়েছে। প্রত্যেক গাছেই ভালো ফল এসেছে। ওনার মাল্টা বাগানের গাছ প্রতি ১৫-২০ কেজি হারে বাজারজাত করতে পারবে। তার এই সফলতা কারণ যদি বলি সবটাই ওনি আগ্রহ ও যত্ন নিয়েছেন। এদিকে নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন,আলাল উদ্দিনের মাল্টা চাষ দেখে এলাকার যুব সমাজ আগ্রহ প্রকাশ করেছে,পাশাপাশি আমাদের কৃষি অফিস থেকে উনাকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়েছে।এ বছর দুর্গাপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। প্রতি বছরই মাল্টার চাষ বাড়ছে। প্রায় ৩০০ জন চাষি ছোট-বড় বাগানে মাল্টা চাষে সফলতা পেয়েছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

নেত্রকোনায় বাপ দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে চায় শীতল পাটির কারিগররা

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : শীতল পাটি বাংলার সুপ্রাচীন এক কুটির শিল্পের নাম। শীতল পাটি আমাদের সভ্যতা, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের অংশ। এছাড়া বাংলাদেশের শীতল পাটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যেরও অংশ। জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো আনুষ্ঠানিক এ স্বীকৃতি ঘোষণা দেয়। এক সময় সারাবিশ্বে ছিল শীতল পাটির খ্যাতি। আমাদের গৃহস্থালির নানা দরকারি জিনিসের […]

নেত্রকোনায় বন্যায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার আমন ফসলের ক্ষতি, অন্যদিকে ছয়শ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ডুবে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর আমন ফসলের জমি নষ্ট হয়েছে। যেখানে উৎপাদিত ধানের মূল্য সাড়ে ৩শ কোটি টাকা। এই বন্যায় নষ্ট হয়েছে নানা জাতের সবজি খেত। চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। কিছু অঞ্চলে পানি নামলেও নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ভাটি এলাকার […]