কষ্টে দিন কাটছে ভোলার মানতা সম্প্রদায়ের
মোঃ সামিরুজ্জামান, প্রতিনিধি, চ্যানেল ২১ : স্বাভাবিক জীবনের ছোঁয়া যেন তাঁদের কাছে স্বপ্ন। ঘরবাড়ি, বসতভিটা বা সামান্য জমিজমাও নেই। জীবনযুদ্ধের একমাত্র অবলম্বন তিন তক্তার ছোট্ট নৌকা। নদীতে মাছ পেলে খাবার জোটে, না পেলে উপোস থাকতে হয়। এমনই কঠিন বাস্তবতার মধ্যে দিন কাটছে ভোলার উপকূলের নৌকাভাসি মানতা সম্প্রদায়ের।
মার্চ-এপ্রিল মাসজুড়ে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। ফলে পুরো দুই মাস উপার্জনের পথ বন্ধ মানতা পরিবারের। এর মধ্যে রমজান মাস থাকায় দুর্ভোগ যেন আরও বেড়েছে। অনেকেই ঠিকমতো ইফতার ও সেহরির খাবার জোগাড় করতেও হিমশিম খাচ্ছেন।
মানতা পরিবারের রানী, রেশমি ও ফারজু জানান, “মাছ ধরা বন্ধ থাকায় উপার্জনও বন্ধ। ধার-দেনা করে কোনোভাবে দিন কাটাতে হচ্ছে। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না, কেউ খোঁজ নেয় না।”
এদিকে নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা থাকলেও মানতা সম্প্রদায়ের জন্য তা বরাদ্দ নেই। ফলে চরম সংকটে পড়েছেন তাঁরা। বেদে সর্দার বশির বলেন, “আমাদের প্রতিটি পরিবার এখন অভাবের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। জেলেরা সহায়তা পেলেও আমরা বঞ্চিত থাকি।”
তবে মানতাদের জন্য সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব। তিনি বলেন, “তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে জেলেদের মতো মানতাদেরও সহায়তা দেওয়া হবে।”
প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নদীর বুকে ভাসমান জীবন যাপন করা মানতারা আজও বঞ্চিত মৌলিক অধিকার থেকে। কেউ পূর্বপুরুষদের পেশা আঁকড়ে বেঁচে আছেন, কেউবা শুধুমাত্র অভাবের তাড়নায় এ পথে এসেছেন। সরকারিভাবে জেলেদের মতো তাঁদেরও সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন মানতা সম্প্রদায়ের মানুষ।এই অবহেলিত জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশার অবসান হবে কি? সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগই পারে তাঁদের জীবনে আশার আলো জ্বালাতে।