করোনা কালীন মোবাইল আসক্তি বাচ্চাদের জন্য আশীর্বাদ নাকি সর্বনাশ
মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার,হেড অব অপারেশন,ড্যাফোডিল ইনসটিটিউট অব আইটি, চট্রগ্রাম:করোনা বদলে দিলো আমাদের প্রাত্যহিক জীবন জীবিকার সবকিছু। মোবাইল শিশুদের জন্য নয় এই কথায় আমরা আর থাকতে পারলাম না। আপদকালীন পরিস্থিতিতে আমাদেরকে অনেক কিছুই পরিবর্তন পরিবর্ধন করতে হয় তেমনি বিশ্বব্যাপী করোনা কালীন সময়ে
ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থায় মোবাইল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রূপে আবির্ভ’ত হয়।দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে অর্থাৎ ১৭ই মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হলে আমরা এক প্রকার গৃহবন্ধি হয়ে পড়ি এবং আমরা অমাবস্যার কালো
হতাশার মধ্যে আবর্তিত হই। তখনই মোবাইল প্রযুক্তি আমাদের পরিবারের সকল সদস্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠে। এই মোবাইল ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি আমাদের হতাশার জায়গায় আশার আলো যুগিয়েছে। সবার মনেই প্রশ্ন, সংশয়, ভয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার হাল কি হবে, বাচ্ছাদের পড়াশুনা কি অধুনাই থেকে যাবে। না এই ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদেরকে আশার আলো যুগিয়েছে। আমরা সকলেই বাধ্য হয়ে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছি। অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেল। বাচ্ছারা কি করবে, শুরু হলো নতুন প্রযুক্তিকে আপন করে নেওয়ার পালা, মোবাইলফোন, টিভি,রেডিও সহ সকল তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যম এখন সচল। যদিও কিছুদিন আগেও এইসব প্রযুক্তির মাধ্যম ছিল কিন্তু আমাদে কে সেভাবে আকৃষ্ট করতে পারেনি। করোনাকালে আমরা ফেসবুক,ইউটিউব,জুম,মিটসহ সব মাধ্যমে চলছে ছোটদের ক্লাস পুরোদমে। আবার বড়রাও পিছিয়ে নেই চলছে অনলাইন অফিস, প্রশিক্ষন, কর্মশালা,ওয়েবিনার আরো অনেককিছু। অমরা আগে বাচ্ছাদের হাতে মোবাইল দেখলে বাকা চোখে তাকাতাম কিন্তু এখন আমরা আর দেখিনা, সেখানে নিয়মিত পড়াশুনার পাশাপাশি ছবি আঁকা, নাচ,গান,ব্যায়াম, রান্নাবান্না,বাগান চর্চা সবকিছুই শিশুরা শিখছে ও বানাচ্ছে। তার পরও তাদের মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্র ব্যবহার করার ব্যপারে সচেতন থাকতে হবে।অন্যথায় বাচ্চারা অপব্যবহার করতে পারে এবং আমাদের নতুন প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার
সমূহ সম্ভাবনা থাকবে।
বর্তমান আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। মোবাইল ও ইন্টারনেট অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তিবিজ্ঞানের একটি মহা আবিস্কার। এটি সমগ্র পৃথিবীকে তার কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য একটি নির্দিষ্ট প্লাটফরমে নিয়ে এসেছে। এক্ষেত্রে শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থনীতি,
রাজনীতি, সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্র বিকাশে তথ্য প্রযুক্তি ও আধুনিত মোবাইল গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। পৃথিবী তাবৎ বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি কার্যক্রম থেকে শুরু করে শিক্ষাক্রমও প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালনা করছে। উচ্চশিক্ষার তাবৎ তথ্য উপাত্ত এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের হাতের নাগালে পাই। ছাত্রছাত্রীরা তাদের গবেষনা ও পড়াশুনার যাবতীয় তথ্য উপাত্ত, লাইব্রেরী সুবিধা এই প্রযুক্তির কল্যানেই ঘরে বসে ব্যবহার করতে পারে। বিশ্বের যে কোন দেশের শিক্ষার্থীরা তাদর প্রয়োজনীয় তথ্য চোখের পলকেই সংগ্রহ করতে পারে। বর্তমান আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা শুধুমাত্র পাঠ্যবই কেন্দ্রিক নয় । পাঠ্য বইয়ের বাইরেও জ্ঞান বিজ্ঞানের অনেক তথ্যাদি শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন হয়। তাই এ সকল তথ্য এই ইলেক্ট্রনিক্স ডিবাইসের মাধ্যমে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই
ব্যবহার করতে পারে। এসব তথ্যাদি বা বই পুস্তক এর ডিজিটাল কপি নষ্ট বা হারিয়ে যাওয়ার ভয় নাই। বাংলাদেশে শিক্ষার আধুনিকায়নে এই মোবাইল ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি তাৎপর্যপূর্ণ বিপ্লব সাধন করেছে। বর্তমানে আমাদের দেশে অনলাইন ভিত্তিক অনেক শিক্ষা পোর্টাল তৈরি হয়েছে যা থেকে আমাদের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে ও আমাদের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষার্থী হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারছে। এইকরোনার কারনে আমদের কাছে প্রযুক্তির গ্রহন যোগ্যতা শতভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের অভিবাবকগনের ও অনেক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রযন্মকে প্রযুক্তি
নির্ভর উন্নত কেরিয়ার গঠনে সহায়ক ভ’ূমিকা পালন করবে। মোবাইল ব্যবহারে কিছু ক্ষতিকর প্রভাব আছে তা আমাদেরকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনূসরন
করে শারিরীক সুস্থতা বজায় রেখে চলতে হবে। আধুনিক মোবাইল অতি মাত্রায় ব্যবহার করলে বাচ্ছাদের ওজন বৃদ্ধি, ক্যানসারের যুকি, পড়াশুনায় অমনোযোগিতা, অনলাইনে গেম খেলা আরো অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমাদের অভিবাবকদেরকে বাচ্ছাদের সাথে সার্বক্ষনিক লেগে থাকতে হবে। ক্লাসের সময় হিসাব করে প্রযুক্তি ব্যবহারের সময়
বেধে দিতে হবে। বাকী সময় স্বাভাবিক নিয়মে পড়াশুনা করবে। আমেরিকান একাডেমিঅব পেডিয়াট্রিকস ্ধসঢ়;এর গাইড লাইন অনুসারে প্রি স্কুল শিশুরা দৈনিক ১ ঘন্টামোবাইল ব্যবহার করতে পারবে। স্কুল পড়–য়া শিশুরা অথ্যাৎ ৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা শিক্ষার প্রয়োজনমত মোবাইল ও অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করবে তবে অভিবাবকগনের জানা থাকতে হবে। আমাদের অভিবাবকদেরকে কিছু কিছু সময় পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে বাচ্চাদের সাথে গল্পগুজব করতে হবে তখন ইলেকট্রিক ডিবাইসের ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে। সৃজনশীল কাজে বাচ্ছাদের উদ্ভুদ্ধ করতে হবে, যেমন: ছবি আঁকা,বাগান করা, বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা ইত্যাদি। অর্থাৎ শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন সমস্যার সমাধান-মুলক ও ক্রিয়েটিব কাজ করতে দিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় উৎসাহ দিতে হবে।
আমরা ইতিমধ্যে যেনে গেছি বিশ্বের তাবৎ প্রযুক্তি নির্মাতারা প্রযুক্তির প্রসার ঘটানোর জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করলেওতাদের নিজেদের সন্তানদেরকে এ থেকে নিরাপদ দুরুত্বে রেখেছেন। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিলগেটস তার সন্তানদের দিনে ৪৫ মিনিটের চেয়ে বেশী ইলেকট্রোনিক্সডিবাইস ব্যবহার করতে দেননা। এছাড়াও সন্তানদের বয়স ১৪ না হওয়া পর্যন্ত বিলগেটস তার সন্তানদের স্মার্টফোনতো দূরের কথা মোবাইল ফোন ও কিনে দেননি। অ্যাপল সামগ্রীর নির্মাতা ও কর্নধার স্টিবজবস তার সন্তানদের আইপ্যাড ব্যবহার করতে দেননি, এক্ষেত্রে আমরা কি করছি? সিদ্ধান্ত নিতে হবে সন্তানের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের জন্য। এক প্রশ্নের জবাবে স্টিব বলেছিলেন তার সন্তানদেরকে প্রযুক্তি কতটা ব্যবহার করবে তার সীমা রেখা নির্ধারন করে দেওয়া আছে। অর্থাৎ প্রযুক্তি নির্মাতারা যেখানে তাদের সন্তানদের কে প্রযুক্তির আগ্রাসী শক্তি থেকে দূরে রেখেছে আর আমরা না বুঝে আমাদের সন্তানদেরকে প্রযুক্তির সর্বশেষ উদ্ভাবন এর সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দিচ্ছি। প্রযুক্তি নির্মাতারা এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানেন কিন্তু আমরা কি করবো, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপদের দিকে ঠেলে দিব? না আমাদের নতুন প্রজন্মকে আমরা শুধু শিক্ষামুলক প্রোগ্রামদেখার ব্যাপারে উৎসাহ দিব। আমাদের এই করোনা কালীন সময়ে সরকারের শিক্ষা সহায়ক ও ডিজিটাল শিক্ষা কার্যক্রম ব্যতিরেকে সকল ব্যবহার সীমিত করা উচিত হবে। তাহলেই আমাদের সন্তানরা ভবিষ্যতে মোবাইল ও তথ্য প্রযুক্তির সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে। প্রযুক্তিকে আমাদের সন্তানদের জন্য আশীর্বাদ হিসাবে রূপান্তর করতে হবে।তাহলেই সুন্দর আগামী ভবিষ্যৎ বিনির্মানে প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভ’ূমিকা পালন করবে।