পানি নেই, মাটির নিচে পানি নেই। ৪শ ফুট গভীর নলকূপ থেকেও পানি উঠছে না। যার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন কক্সবাজারবাসী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে করে প্রাকৃতিক পরিবেশে ও ইকোসিস্টেমের ওপর প্রভাব পড়তে পারে চরমভাবে।গ্রীষ্মকালে এ পরিস্থিতি হতে পারে আরও ভয়াবহ।
এছাড়া ই-কোলাই ভাইরাস বৃদ্ধি পেয়ে পানিবাহিত রোগ বাড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে কক্সবাজার এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট-বোরির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া জানান, অধিক হারে পানি উত্তোলন। ভূগর্ভের পানির স্তরের নির্দিষ্ট মাত্রা থেকে অধিক হারে পানি উত্তোলন করা হলে পানির স্বল্পতা দেখা দেয়।
লবণাক্ততার বিষয়ে তিনি বলেন, মহেশখালী চ্যানেল ও বাঁকখালী নদীর পানিতে লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। তাই শহরের যেসব জায়গায় বাকঁখালী নদীর মাধ্যমে পানি প্রবাহিত হয় সেসব পানিতে লবণাক্ততা দেখা যায়।
কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া, নুরপাড়া, মাঝিরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। শহরের বাসিন্দাদের ভাগ্যে জুটছে না বিশুদ্ধ পানি। পৌরসভার সরবরাহ করা পানি পান তো দূরের কথা, গৃহস্থালির কাজেও ব্যবহার করা যাচ্ছে না দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত পানি।
গত ৬ মাস ধরে পানির সমস্যা বেড়েছে উল্লেখ করে টেকপাড়ার বাসিন্দা মো. ফরহাদ বলেন, কক্সবাজার ৪ নং ওয়ার্ডের ৭৫ শতাংশ মানুষ পৌরসভার লাইনের পানি ব্যবহার করে। তবে রমজানের আগে সরাসরি নর্দমার পানিই উঠে আসছে লাইনগুলোতে। পৌর কর্তৃপক্ষকে অবগত করার পরও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয় নি।
শহরের বেশিরভাগ বাসিন্দারা জানান, দূর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি ব্যবহারের ফলে বেশিরভাগ পরিবারে চর্মরোগসহ নানা রোগ দেখা দিয়েছে। লাইনের পানির বিকল্প হিসেবে পুকুরের পানি ব্যবহার করেও তাদের দুর্ভোগ কমছে না। তাই অতিদ্রুত পৌরসভার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃক স্থাপিত গভীর নলকূপগুলো পুরোনো জানিয়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা বলেন,পানিতে যে ময়লা ও দুর্গন্ধ এ বিষয়টি আমরাও জানতে পেরেছি।এছাড়া শহর এলাকায় সুপেয় পানির সংকট ও ৩ গভীর নলকূপের পানির সাথে বালি চলে আসছে।এসব সমস্যা গুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন,বাঁকখালী নদীর তীরে একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে।পৌরবাসীর ভোগান্তি দূরীকরণের লক্ষ্যে পৌরসভা সর্বোচ্চ কাজ করছে।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে একটি প্রকল্প চলমান আছে জানিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আবুল মনজুর বলেন,পুরো শহরকে ৪ টি ভাগে বিভক্ত করে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাঁকখালী নদীর মাধ্যমে শহরের পানি সংকট বা পানির সমস্যা দূরীকরণে কাজ চলছে। বর্তমানে হাউস নেটওয়ার্কিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে।
তবে শহরবাসীর ভোগান্তির বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আবুল মঞ্জুর বলেন, সব এলাকায় জরীপ কার্য শেষে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে পানির সমস্যা দূর করা হবে।
অন্যদিকে কক্সবাজার শহরে ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কবে এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে তা নিয়ে শঙ্কিত শহরবাসী।