হালদা এখন থেকে ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’, নিষিদ্ধ হল যা যা

Share the post

সরকার চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদীকে ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর ফলে এই নদী থেকে মাছ কিংবা জলজ কোনো প্রাণী আর ধরা যাবে না। তবে প্রতি বছর প্রজনন মৌসুমে মৎস্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে নির্দিষ্ট সময়ে নিষিক্ত মাছের ডিম আহরণ করা যাবে। অন্যদিকে রুই মাছের জন্য প্রাক-প্রজনন ও প্রজনন মৌসুমে (মার্চ-জুলাই) হালদা নদীতে ইঞ্জিনচালিত কোনো নৌকা চলাচল করতে দেওয়া হবে না।

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) হালদা নদীকে ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ’ ঘোষণা করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে ঘোষণা করা হয়েছে, হালদা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ১৭টি খালে প্রজনন মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি-জুলাই) মাছ ধরা যাবে না।

খাগড়াছড়ির রামগড় ও মানিকছড়ির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৯৪ কিলোমিটার দীর্ঘ হালদা নদীর তীরের ২৩ হাজার ২২ একর জমিসহ চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি, রাউজান, হাটহাজারী ও পাঁচলাইশ ‘বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজের’ অধীনে রয়েছে। এই নদীতে যে কোনো ধরনের বর্জ্য ফেলা এখন থেকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, হালদা নদীতে রুই মাছ জেনেটিক্যালি বিশুদ্ধ। তাই এপ্রিল-জুন মাসে প্রজনন মৌসুমে রুইয়ের পর্যাপ্ত নিষিক্ত ডিম নদীতে পাওয়া যায়।

হালদা নদীতে রয়েছে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। এছাড়া হালদা নদী হলো সারা বিশ্বে স্বাদু পানির মাছের জন্যও একমাত্র স্বাভাবিক তথা প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। হালদা নদী এছাড়াও বিপন্ন গাঙ্গেয় ডলফিনের বাসস্থান। তবে দূষণ ও বাঁধের কারণে হালদা হারিয়েছে তার নিজস্ব চরিত্র।

এই নদীকে বিপন্ন করার কারণগুলো প্রায় তিন বছর আগে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিচালিত একটি গবেষণার সময় চিহ্নিত করা হয়। ওই গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষি ও এলজিইডি মৎস্য দপ্তরের সাথে আলোচনা না করেই হালদায় দুটি রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, উজানের পানি সেচের কাজে লাগলেও, ভাটিতে শুকনা মৌসুমে নদীপ্রবাহের মৃত্যু ঘটছে।

নদীর উৎস এবং কারখানার বর্জ্য তামাক ক্ষেতও হালদা নদীর জন্য বড় বিপদ। নদীর মাটি এবং পানি ব্যবহার করে ইটভাটা পরিচালনা করা হচ্ছে।

হালদা নদীর উৎসমুখের দুই পারের তামাক চাষের দূষণ, আরও ভাটিতে অজস্র শিল্পকারখানার বর্জ্যও বড় হুমকি। এই কারখানাগুলোর বেশিরগেরই ইটিপি (তরল বর্জ্য শোধনাগার) নেই। ট্যানারির দূষিত বর্জ্যও সরাসরি নদীতে গিয়ে পড়ছে। নদীর মাটি ও পানি ব্যবহার করে চলেছে ২২টি ইটভাটা। চট্টগ্রামের কিছু এলাকার বর্জ্যও খাল দিয়ে এই নদীকে নিরন্তর দূষিত করে চলেছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুবল বসু মনি বলেন, ‘হালদার দূষিত শিল্পকারখানা চিহ্নিত করতে এবং তাদের তরল ও কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলা থেকে বিরত রাখতে কিছু সময় লাগবে। আমাদের অবশ্যই হালদাকে মৎস্য হেরিটেজে ফিরিয়ে আনতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হালদা নদী এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত এলাকাকে রুই মাছের জন্য একটি নিরাপদ প্রজননক্ষেত্র, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পরিবেশগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে গাঙ্গেয় ডলফিনদের জন্য একটি আবাসস্থল হিসেবে সুরক্ষিত করা হবে।’

মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নদীর ওপর রাবার বা কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ নিষিদ্ধ। এছাড়াও নদীর বাঁক সোজা করা যাবে না। এছাড়া এমন কোনো কাজ করা যাবে না যা ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে। বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ তত্ত্বাবধান কমিটির অনুমতি ছাড়া হালদা নদীতে নতুন পানিশোধন কেন্দ্র ও সেচ প্রকল্প স্থাপন করে পানি নিষ্কাশন করা যাবে না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

৭ বছর আগে গুম হওয়া কোচিং শিক্ষককে জীবিত ফেরতের দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম

Share the post

Share the post ইয়াসিন আরাফাত,চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিশেষ প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেবিনগরে সাত বছর আগে ২০১৭ সালে কোচিং সেন্টার থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া শিক্ষককে ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলার দেবিনগর ইউনিয়নের ধূলাউড়ি হাটে মানববন্ধনের আয়োজন করে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও গ্রামবাসী। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেবিনগর […]

ইবিতে তরুণ কলাম লেখক ফোরামের নতুন কমিটি গঠন

Share the post

Share the post নূর ই আলম,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া : বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ২০২৪-২৫ কার্যবর্ষের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে সভাপতি মনোনীত হয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খায়রুজ্জামান খান সানি এবং সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন আল-ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুর […]