সেই বিদেশি নাগরিককে বাঁচাতে একযোগে লড়ছেন ফিল্ড হাসপাতালের কর্মীরা
চট্টগ্রাম প্রতিবেদক : হার্টের সমস্যা নিয়ে শনিবার রাত ৯টা থেকে রোববার সকাল ১০ টা পর্যন্ত টানা ১৩ ঘণ্টা ক্লিনিক থেকে ক্লিনিকে ঘুরেছেন চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়া বিদেশি জাহাজের স্টাফ উইন এইচ টুট (৫৫)।
করোনা-সন্দেহে কোথাও তার জায়গা হলো না। সবাই দূর দূর করে ফিরিয়ে দিলো। এভাবে চিকিৎসার সব দরজা যখন বন্ধ তখনই দরজা খুলে দিলো সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটস্থ দেশের প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল।
চিকিৎসাপ্রাপ্তির চেষ্টা কিংবা যুদ্ধে নেতিয়ে পড়া সেই বিদেশি নাগরিককে সারিয়ে তুলতে এখন সম্মিলিতভাবে লড়ছেন ফিল্ড হাসপাতালের চিকিৎক-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা।
হাসপাতালের সিইও ডা. বিদ্যুত বড়ুয়া জানালেন, আমাদের একটু সময় দিন। প্রাণপণ লড়ছি মানুষকে কিছুটা হলেও স্ট্যাবল করার জন্য। তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতাল করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল। কিন্তু বিদেশি নাগরিকটির কার্ডিয়াক সমস্যা। কোনো হাসপাতাল যেহেতু নেয়নি, আমরা তো আর চুপ করে থাকতে পারি না। অনেকের মতো চোখমুখ বন্ধ করে বলতে পারি না আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। আমরাও যদি এমনটা বলে ফেলি তাহলে ওই রোগীকে রাস্তায় মারা যেতে হবে।
তাই মানবিক বিবেচনায় সাধ্যের বাইরে গিয়ে মুমূর্ষু এই রোগীকে নিতে আমরা বাধ্য হয়েছি। এখন আমরা ইসিজি ও এক্সরে করে রোগ নির্ধারণ এবং সেই আঙ্গিকে ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রয়োজনে কার্ডিওলজিস্টের পরামর্শ নেবো। তাকে বাঁচিয়ে রাখতে শেষপর্যন্ত লড়ছি, প্রাণপণ লড়ছি। যোগ করেন ডা. বিদ্যুত বড়ুয়া।
জানা যায়, মারসক বাংলাদেশ লিসিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের শিপিং এজেন্ট এর একটি জাহাজে কাজ করেন মিয়ানমার নাগরিক উইন এইচ টুট। শনিবার রাতে হঠাৎ হার্টঅ্যাটাক করলে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩ নং জেটি থেকে তাকে চিকিৎসার জন্নিয য়ে আসা হয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে। সেখানে নানা অজুহাতে তাকে ফিরিয়ে দিলে সারারাত একে একে সিএসসিআর, ম্যাক্স হাসপাতাল, পার্কভিউ হাসপাতাল, সার্জিস্কোপ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু কোনো হাসপাতালই তাকে ভর্তি করাতে রাজি হয়নি। এই অভিযোগ তার সহকর্মী আলী আকবরের।
তিনি জানান, হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর চট্টগ্রামের কোনো হাসপাতাল তাকে নিতে রাজি না হওয়ায় অবশেষে আজ সকালে মালিকের পরিচিত ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের অভিমত, সরকারের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ প্রায় প্রতিদিনই অমানবিকভাবে চিকিৎসাসেবা না দিয়ে মুমূর্ষুদের ফিরিয়ে দেওয়া বেসরকারি ক্লিনিক মালিকদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন, দিচ্ছেন বড় বড় বক্তৃতা-বিবৃতি। কিন্তু বাস্তবে কেউ কথা রাখছেন না, শুনছেন না। কোথাও নেই কোনো জবাবদিহিতা কিংবা সংশ্লিষ্টদের শাস্তির মুখোমুখি করার ব্যবস্থা। ফলে পরিস্থিতিতে যা হবার তাই হয়েছে। গুমড়ে ফিরছে মানবতা।
বন্দর সম্পর্কিত একজন বিদেশি নাগরিকের চিকিৎসা-বঞ্চনার বিষয়ে জানতে চািইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ একুশে পত্রিকাকে বিষয়টি জানেন না বলে জানান এবং এ ব্যাপারে বন্দর সচিবের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
এরপর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।