রোগী ভর্তির মধ্য দিয়ে করোনা আইসোলেশন সেন্টারের স্বাপ্নিক যাত্রা
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: মাত্র ২০ দিনের প্রস্তুতিপর্ব শেষে তীব্র করোনা-সঙ্কটে আলোর মুখ দেখছে তারুণ্যের স্বপ্ন চট্টগ্রাম করোনা আইসোলেশন সেন্টার। আজ রোববার (১৪ জুন) রোগী ভর্তির মধ্য দিয়ে শুরু হলো এই আইসোলেশন সেন্টারের স্বাপ্নিক যাত্রা। অথচ শুরু হওয়ার কথা ছিল আগামিকাল সোমবার থেকে।
ইতোমধ্যে হালিশহরের প্রিন্স অব চিটাগাং এ অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠা আইসোলেশন সেন্টারে সার্বক্ষণিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, পর্যাপ্ত অক্সিজেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ, লজিস্টিক, সাজানো শয্যা, খাবারসামগ্রী, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর সম্মিলন-সবই শেষ হয়েছে।
শুরুর দিকে ১শ’ শয্যার আইসোলেশন সেন্টারের কথা থাকলেও প্রাথমিকভাবে ৫০ শয্যা দিয়েই শুরু হচ্ছে করোনা-আক্রান্তদের সেবাকার্যক্রম। শনিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন আয়োজক সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা বঙ্গবন্ধু শিশুকিশোর মেলা চট্টগ্রাম মহানগর এর সভাপতি মো. সাজ্জাত হোসেন জানান, শুভ কাজে দেরি করতে নেই। তাছাড়া যেভাবে করোনা চট্টগ্রামে ডেঞ্জার জোনে পরিণত হয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে আমরা আর বসে থাকতে পারছি না। তাই আপাপত ৫০ শয্যা দিয়েই কাল থেকে আমরা শুরু করছি।
পর্যায়ক্রমে ১০০ শয্যায় রূপান্তরের চেষ্টা থাকবে জানিয়ে সাজ্জাত বলেন, ‘আমরা যে কোনো মূল্যে কোয়ালিটি সেবা দিতে চাই, যেখানে ভালোবাসা, পরম মমত্ববোধের ছোঁয়া থাকবে। রোগীদের কাছ থেকে একটা টাকাও এক্ষেত্রে খরচ হবে না। কোনো রোগী শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ভর্তির জন্য বিবেচিত হওয়ার পর সুস্থ করে তোলা পর্যন্ত ওই রোগীর সমস্ত দায়-দায়িত্ব আমরাই নেবো।’
এই স্বাপ্নিক যাত্রার শুরুর প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে সাজ্জাত বলেন, ঈদের রাতে একটি ছোট্ট ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে এর যাত্রারম্ভ। সেখান থেকেই আজকে এ পর্যন্ত আসা। যে কোনো মহতী উদ্যোগ, ভালো কাজে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা এগিয়ে আসেন সেটা আমি আবারও উপলব্ধি করতে সক্ষম হচ্ছি। তা না হলে মাত্র ২০ দিনে এমন একটি উদ্যোগের বাস্তবায়ন চারটিখানি কথা নয়। এই মহতী উদ্যোগে শুরু থেকে যারা সহযোগিতা করেছেন, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদার, মানবিক ব্যবসায়ী আবুল বাশার আবু, বাবলু মানিকসহ বিভিন্নভঅবে সাহায্যের হাত যারা প্রসারিত করেছেন সংশ্লিষ্ট সকলকে আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা স্মরণ করছি, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যোগ করেন সাজ্জাত হোসেন।
এদিকে, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের মুষ্টিবদ্ধ সহযোগিতায় খুব দ্রুততম সময়ে গড়ে উঠা করোনা আইসোলেশন সেন্টার আশা ও উচ্ছ্বাস তৈরি করেছে চট্টগ্রামবাসীর মনে। প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ আইসোলেশন সেন্টারটির অগ্রগতি দেখতে যাচ্ছেন, বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
শুরুর দিকে এই হাসপাতাল পরিদর্শন করে আয়োজকদের সাহস জুগিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেযর আ জ ম নাছির উদ্দীন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম চৌধুরী বাবুল, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চট্টগ্রামের প্রধান সমন্বয়কারী নারীনেত্রী অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরীসহ বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতা করছেন এবং করে যাবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে, শুক্রবার বিকেলে আকস্মিক করোনা আইসোলেশন সেন্টার পরিদর্শনে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগের ভূযশী প্রশংসা করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এসময় তিনি নগদ ৩ লক্ষ টাকা এবং পিপিই ও মাক্স প্রদান করেন।
শনিবার বিকেলে সার্বিক প্রস্তুতি দেখতে যান আইসোলেশন সেন্টারটির অন্যতম সুহৃদ ও অন্তরালের মানুষ, একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদার। তিনি সংশ্লিষ্টদের উদ্যম এবং একাগ্রতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং অতীতের মতো ভবিষ্যতেও আইসোলেশন সেন্টারের অগ্রযাত্রায় পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এসময় উদ্যোক্তা মো. সাজ্জাত হোসেন, বেসরকারি কারাপরিদর্শক অ্যাডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।