করোনাভাইরাসের বিশ্বমহামারীতে সৃষ্ট চ্যালেন্জ মোকাবেলা করার তিন দফা কর্মসূচী

Share the post

ইয়াসমিন আক্তার ।। লন্ডন প্রতিনিধি

ব্যারিস্টার নাজির আহমদ- করোনাভাইরাসে সৃষ্টি হওয়া বিশ্ব মহামারী গোটা বিশ্বকে লকডাউন করে ঘরের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়েছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া সাধারণত কেউ বাহিরে বের হচ্ছেন না। অন্তত: বাহিরে বের না হয়ে ঘরে থাকার জন্য সরকার ও দায়িত্বশীল সংস্থা থেকে বারবার আহবান করা হচ্ছে। রাস্তাঘাট ফাঁকা। আকাশে বিমান উড়ছেনা। মধ্যপাচ্যের অনেক এয়ারপোর্টে গ্রাউন্ডেড বিমানগুলো রাখতে এয়ারপোর্টের ভিতরে জায়গা না হওয়ায় মরুভূমিতে অনেক বিমান রাখতে হচ্ছে!

বিশ্বের এই অবস্থা অভাবনীয় ও অকল্পনীয়। কোন দেশ বা বিশ্ব ছয় মাস আগেও এই অবস্থা অনুধাবন (কন্টেমপ্লেট) করতে পারেনি। এই নজীরবিহীন অবস্থায় অনেকে দিশাহারা। কি করবে ভেবে পাচ্ছেন না! আমার অনেক সহকর্মী, বন্ধু ও পরিচিতজন ঘরে বসে থাকতে থাকতে বোরিং ফিল করছেন এবং অনেকে আবার ডিপ্রেশনেও ভূগছেন। অনেকে লম্বা ঘুম আর নাটক ও ফিল্ম দেখে দেখে এবং অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘ ফোনালাপ করে করে সময় পার করছেন।

অনেকে আবার দারুন আতংকিত ও ভীতসন্ত্রস্থ! না জানি কি হয়? মৃত্যু অতি সন্নিকটে – এই ভেবে চিন্তায় অনেকের নিয়মিত ঘুমও হচ্ছে না। অনেকে ফোনে জিজ্ঞেস করেন এবং জানতে চান: কি হচ্ছে? এই অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকবে? আমাদের কি হবে? আমাদের কিইবা করা উচিত!

আমার সোজা সাফটা জবাব যা অনেককে বলেছি এবং অনেক মিডিয়ায় (ইলেক্ট্রনিক ও সোসাল মিডিয়ায়) বিভিন্ন সময় ভিন্নভাবে বলার চেষ্টাও করেছি – করোনাভাইরাসের বিশ্ব মহামারীতে সৃষ্ট চলমান অচিন্তনীয় ও অভাবনীয় চ্যালেন্জ মোকাবেলা করার আমার ব্যক্তিগত তিন দফা কর্মসূচী। আর তা হলো: ১. যেহেতু করোনাভাইরাস প্রতিরোধের কোন ঔষদ এখনও বের হয়নি, সেহেতু করোনাভাইরাস নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত আতংকিত, ভীতসন্ত্রস্থ বা অভার স্ট্রেস করে নিজের কোনই লাভ বা উপকার করতে পারবো না। বরং অতিরিক্ত আতংক, ভয় বা স্ট্রেস নিজের অজান্তে নিজের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তাই আতংকিত না হয়ে বরং এই আনপ্রেসিডেন্টেট (নজীরবিহীন) চ্যালেন্জের প্রাক্বালে অনিচ্ছাকৃতভাবে বাধ্য হয়ে ঘরে আটক পড়ে পাওয়া দীর্ঘ ও অপুরন্ত সময়কে সঠিক এবং যথাযথভাবে কাজে লাগাবার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।

২. এই পৃথিবীর সব সুপার পাওয়ারদের সুপার পাওয়ার, আকাশ ও জমিনের মালিক মহান প্রভুর উপর ১০০% নির্ভর করে চলছি। মহান আল্লাহ পাক বলেছেন ‘‘আর আল্লাহর ওপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত।’’ [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ১১]। সত্যিই তাঁর ঈশারা, অনুমোদন বা সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছুই হয় না – একথা সত্যিকার অর্থে ও আক্ষরিক অর্থে বিশ্বাস করি। যদি মহান প্রভুর সিদ্ধান্ত হয় করোনাভাইরাসে মৃত্যু দেয়ার তাহলে এই পৃথিবীতে কেউ তা ঠেকাতে পারবেনা। আর যদি তাঁর সিদ্ধান্ত হয় করোনাভাইরাসে মৃত্যু না দেয়ার, যত কঠিন বেগেই আসুক এই মহামারীর ভাইরাস এ ধরা থেকে কোনভাবেই নিতে পারবে না। আর মহান মা’বুদ বলেন ‘‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্যে যথেষ্ট’’। [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ৩]। মনে রাখবেন আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সময় ইব্রাহীম (আঃ) -এর শেষ কথা ছিল, “হাসবিয়াল্লাহ অনি’মাল অকীল।” অর্থাৎ, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক। [বুখারী, হাদিস নং: ৪৫৬৩-৪৫৬৪, ইবনে আব্বাস বর্নিত] ৩. তবে হ্যা, সহিহ হাদিস (তিরমিযি শরীফের সহিহ হাদিস) অনুযায়ী উট ভাল করে বেঁধেই মহান মা’বুদের উপর পূর্ন নির্ভর করছি। হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, “এক বেদুইন ব্যক্তি প্রিয় নবীর (স:) সাথে সাক্ষাত করতে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উট না বেঁধে আল্লাহর উপর ভরসা করে বাহিরে রেখে এসেছি। প্রিয় নবী (স:) তাকে বললেন, না প্রথমে উট ভাল করে বেঁধে নাও, অতঃপর আল্লাহর উপর ভরসা কর” [তিরমিযী, হাদিস নং: ২৬১৭]। এই হাদিসের আলোকে নিজে যথাসম্ভব সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি এবং পরিস্কার থাকছি ও ওজুর আদলে সময় সময় ও ঘন ঘন সাবান দিয়ে comprehensively নিজের হাত ও মূখ পরিস্কার করছি। তার সাথে সাথে নিজের শরীরের ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বোস্টিং (বৃদ্ধি) করার জন্য যা যা করার দরকার তা করার সাধ্য মত চেস্টা করছি।

মনটাকে কাজ দিন: পরিশেষে বলব, আজ প্রায় ছয় সপ্তাহ হয়ে গেল গোটা ইউকে (প্রায় গোটা বিশ্বও বটে) লকডাউন হবার। আর এই ছয় সপ্তাহ ধরে ঘরে বন্দি। জরুরী প্রয়োজনে সপ্তাহে ২/১ বার অল্প সময়ের জন্য বাহিরে যাই। এছাড়া ঘরের মধ্যেই ২৪ ঘন্টা। বিশ্বাস করুন – এক মুহুর্তের জন্যও ঘরে থাকাকে আমি বোরিং ফিল করিনি। রুটিন করে বিভিন্নভাবে সময়টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। বর্তমানের অপ্রত্যাশিত ও অভাবনীয় চ্যালেন্জকে মহান মা’বুদের পক্ষ থেকে দেয়া অপরচুনিটি হিসেবে নিয়ে তা কাজে লাগাবার চেষ্টা করছি।

ছোটবেলা থেকে পরিকল্পনা, রুটিন ও ডিসিপ্লিনে অব্যস্ত থাকায় এই সময়ে এই অভ্যাসগুলো দারুন কাজ দিচ্ছে। খামোখা এখানে ওখানে অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘ ফোনালাপ বা অযথা ফিল্ম/নাটক দেখে সময় নস্ট করতে হচ্ছে না। বাচ্চাদেরকে শক্ত রুটিন করে সময় ব্যয়ে উদ্বুদ্ধ করছি। মনটাকে প্লিজ ভাল, সুস্থ ও বিবেকসম্মত কাজ দিন দেখবেন আপনি সময়ই পাবেন না অযথা সময় নস্ট করার। লেখক : বৃটেনের প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী, কমিউনিটির সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব, গবেষক, নিউহ্যাম বারার ডেপুটি স্পিকার।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

২৮ বছর পর যেকারণে হামাসের সাথে যোগাযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র

Share the post

Share the post২৮ বছর পর প্রথমবারের মতো হামাসের সাথে যোগাযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার এই চঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। হামাসকে শেষবারের মতো সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেছেন, যদি অনতিবিলম্বে ইজরায়েলের সমস্ত বন্দিদের মুক্তি দেওয়া না হয় তাহলে, গাজায় নারকীয় পরিস্থিতি তৈরি হবে। নিষিদ্ধ ঘোষণা করা কোন সংগঠনের সাথে সাধারণত যোগাযোগ করে না […]

নার্স ভারতীয় শুনেই, মেরে নার্সের মুখের হাড় গুঁড়িয়ে দিল রোগী!

Share the post

Share the postযুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার পামস ওয়েস্ট হাসপাতালে সম্প্রতি একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৬৭ বছর বয়সী নার্স লীলাম্মা লালকে আক্রমণ করেছেন ৩৩ বছর বয়সী রোগী স্টিফেন স্ক্যান্টলেবুরি। আক্রমণের সময় স্ক্যান্টলেবুরি লীলাম্মাকে মারধর করে তার মুখের হাড় ভেঙে দেন। মেরে মুখের হাড় গুঁড়ো করে দিয়েছেন। চোখের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। দৃষ্টিশক্তি কার্যত হারাতে বসেছেন। আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন […]