ভোলায় পরীক্ষামূলক মুক্তা চাষে সাফল্য, সম্ভাবনার নতুন দিগন্তের সূচনা
মোঃ সামিরুজ্জামান প্রতিনিধি, চ্যানেলে ২১, ভোলা: ভোলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চর গাজী গ্রামে ঝিনুকে মুক্তা চাষে সাফল্য দেখিয়েছে গ্রামীণ জনউন্নয়ন সংস্থা (জিজেইউএস)। রূপকথার মতো মনে হলেও বাস্তবে পরীক্ষামূলক এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে।
ভেলুমিয়া ইউনিয়নের জিজেইউএস এর কৃষি খামারে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতেএকটি পুকুরে মুক্তা চাষ শুরু করে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। যশোর থেকে সংগ্রহ করা অল্প কিছু ঝিনুক দিয়ে যাত্রা শুরু হয় এই প্রকল্পের। পুকুরের মাটি ও পানির গুণগত মান পরীক্ষা করার পর শুরু হয় ঝিনুকে প্লাস্টিকের নিউক্লিয়াস বা কৃত্রিম মুক্তা প্রতিস্থাপনের কাজ। এরপর ঝিনুকগুলো ঝুড়িতে রেখে নির্দিষ্ট গভীরতায় পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়।
প্রতিদিনের যত্ন এবং সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার ফলে ঝিনুকের অভ্যন্তরে ধীরে ধীরে গঠিত হতে থাকে মুক্তার স্তর। প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সময় লাগে প্রায় ৯ থেকে ১২ মাস। তবে জিজেইউএর খামারের ঝিনুক গুলো ৭ মাসের মাথায় তুলেই সফলতা পাওয়া গেছে। নিয়মিত পরিচর্যার অংশ হিসেবে প্রতি ১৫ দিন পর পর ঝিনুকের জন্য প্রাকৃতিক খাবার তৈরিতে পুকুরে ইউরিয়া, পটাশ, ড্যাব ও খৈল ছিটানো হয়। সেই সঙ্গে চলে নিয়মিত পানি ও মাটির মান পরীক্ষা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, যত্ন আর মনোযোগের পাশাপাশি সঠিক প্রযুক্তি ও পর্যবেক্ষণ থাকলে এ ধরনের চাষে অতিরিক্ত শ্রমিক প্রয়োজন হয় না।
জিজেইউএস এর পরিচালক লিগ্যাল এডভোকেসি ও প্রোগ্রাম এডভোকেট বীথি ইসলাম বলেন আমাদের এই পাইলটেন্ট প্রজেক্টটির সফল হয়েছে ভবিষ্যতে আমরা এই কাজ আমাদের সদস্য পর্যায়েও ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি।
এভাবেই জিজেইউএস কৃষি খামারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই চাষাবাদ এখন স্থানীয়দের আগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বহু মানুষ এখন নিজেরাও ঝিনুক চাষে যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
ভোলা মৎস্য অধিদপ্তরের খামার ব্যবস্থাপক এ এইচ এম জাকির হোসেন বলেন, “মুক্তা চাষে এই সফলতা অব্যাহত রাখা গেলে একদিকে যেমন দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাড়বে, তেমনি বিদেশে রপ্তানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।”
এই উদ্যোগ শুধু নতুন কর্মসংস্থানের পথই খুলছে না, বরং বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে এক নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।