ব্যাটারিচালিত অটো সিন্ডিকেটের কবলে নেত্রকোনা পৌর শহর
সোহেল খান দূর্জয়,নেত্রকোনা : নেত্রকোনা পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড-শহীদ মিনার,তেরী বাজার, আখড়ার মোড়, রাজুর বাজার,সরকারি কলেজ রুটে চলাচলকারী ব্যাটারিচালিত হ্যালোবাইক-অটোরিকশায় এলাকার যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেয়ার কারণে জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এতে সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন পৌর শহরের স্থানীয়রা। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নেত্রকোনা বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে সাতপাই রেল ক্রসিং এলাকার দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। এসময় অধিকাংশ যাত্রীরা আধঘন্টা দাড়িয়ে থেকেও গাড়িতে উঠলে চালককে দিতে হয় দ্বিগুণ ভাড়া। এই ভাড়া নেয়ার ঘটনা দেখা যায়। ঢাকা বাস টার্মিনাল থেকে নেত্রকোনা সরকারি কলেজ পর্যন্ত বহু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বিশেষ করে পৌরসভা কার্যালয় ও হাসপাতাল রয়েছে। যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেয়ার কারণে এই পথগামী যাত্রীরা, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাদিমা হোসেন নাবিলা বলেন, ‘গতকাল প্রায় আধঘন্টা দাঁড়িয়ে ছিলাম স্বাবলম্বী হাসপাতালের সামনে। কোনো অটোবাইক আমায় নেয়নি। তারা এই রাস্তা দিয়েই যায়। কিন্তু, বেশি ভাড়া ছাড়া কোনো যাত্রী নেয় না। বেশিরভাগ সময় হেটেই যেতে হয় শহরের ভিতরে। অতিরিক্ত ইমার্জেন্সি থাকলে রিকশা ছাড়া উপায় নেই। এতে তিনগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হয়। এরা সিন্ডিকেট করেছে। যাত্রী উঠায় না কিন্তু ভাড়া বেশি দিলে ঠিকই নেয়। একজন অভিভাবক বলেন, ‘এই এলাকার মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। শহরের ভিতরে যাওয়ার সময় দুই একটা গাড়ি পাওয়া যায়, বাহিরে যাওয়ার সময় কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু, ফেরার পথে কোনো গাড়িই যেন নিতে চায় না। এর চূড়ান্ত সমাধান প্রয়োজন। সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আফরোজা খাতুন বলেন, ‘নেত্রকোনা পৌরসভার সবচেয়ে কাছে পুকুরিয়া এলাকা। পৌরসভা প্রতিষ্ঠানটি মোক্তারপাড়া মৌজায়। কিন্তু পৌরসভার জন্য সবচেয়ে বড় লজ্জা এটা যে নেত্রকোনা বেশিরভাগ এলাকার উন্নয়নে পৌরসভা কখনোই চেষ্টা বা কোনো কাজ করে নি। শুধু গাড়ির বিষয়ই নয় প্রায় অধিকাংশ দিকেই পৌরসভার মানুষ বঞ্চিত। পৌরসভার সবচেয়ে কাছের এলাকা হরিখালির হয়েও দুর্ভাগ্য যেন আমাদের পিছু ছাড়ে না। দখল-দূষণ লেগেই থাকে। খেয়াল করলেই দেখবেন একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা, পানি দূষণ এই এলাকার নিত্যকার বিষয়। আর গাড়ির যে বিষয়টা, গাড়ি চালকরা তো এই এলাকাকে এলাকাই মনে করেন না। এর প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া উপায় নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অটোচালক সালমান বলেন, ‘আসলে যাত্রি পেলে বেশি ভাড়া পাওয়া যায়। তখন আর কেউ যাত্রি উঠায় না। তবে হ্যাঁ, এটা সত্যি যে অনেক সময় যাত্রীদের দাড়িয়ে থাকতে হয়। গাড়ি খালি থাকলেও যাত্রি না ওঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে নাম পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অটোচালক বলেন, ‘আসলে শহরের ভিতরে ভাড়া ১০ টিকা। আবার ১৫/২০ টাকা যে যেমন পারে নেয়। কিন্তু, যাত্রি উঠাইলে মাত্র ৫ টাকার ভাড়া। তখন আর কেউ নিতে চায় না। এইটা সত্য যে ভাড়া বেশি দিলে উঠিয়ে নিই। ১০ টাকা দিলে যাওয়া যায়। এইটা সবাই করে, তাই আমিও করি। এ বিষয়ে চালক সমিতির সাথে যোগাযোগ করার জন্য চেষ্টা করা হলে ইজিবাইক চালকদের মাধ্যমে জানা যায়, বর্তমানে কোনো পরিচালনা কমিটি না থাকায় যে যার মতই চলছে। শহরের ইজিবাইক চলাচলে প্রশাসনেরও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বলে জানা যায়।তবে বর্তমানে দেশের এই সেন্সিটিভ সময়ে যে সকল সুবিধাভোগীরা ও সুযোগ সন্ধানীরা লুটপাট চালাচ্ছে তাদের প্রতিহত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রশাসনকে সোচ্চার হতে হবে।
এ বিষয়ে হাসান শিকদার বলেন, ‘দেশে একটি নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার সুযোগে বিভিন্ন সেক্টরে অস্থিরতাসহ নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে যদি কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে চায়, তাহলে তা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রশাসনের উচিত হবে এই বিষয়ে অতিদ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা ও জনদূর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করা। এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়করা বলেন, ‘ নেত্রকোনা পৌরসভা এলাকায় বিভিন্ন অনিয়ম ইতোমধ্যে আমাদের নজরে এসেছে। পৌরসভার সকল কার্যক্রমকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব। জনগণের ভোগান্তি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা এখন প্রশাসনের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। পৌরসভা কতৃপক্ষের নিকট দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইজিবাইক এর রুট প্রনয়ণ, ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের সমাধান, ভাড়ার তালিকা প্রনয়ণ ও যত্রতত্র পার্কিং এর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।