

সোহেল খান দূর্জয়,নেত্রকোনা প্রতিনিধি : নেত্রকোনা জেলার ইটভাটা গুলোতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে স্বল্প পারিশ্রমিকে শিশু-কিশোরদের সম্পৃক্ত করে একদিকে যেমন মজুরি বৈষম্যের সৃষ্টি করছে অন্যদিকে শিশুশ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে চলেছে ভাটা মালিকরা। এ বিষয়টি দেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষও অজ্ঞাত কারণে নিরব ভূমিকা পালন করায় দিন দিন শিশুশ্রমিক বৃদ্ধি পাচ্ছে এ সেক্টরে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দুয়া উপজেলার গন্ডা ইউনিয়নের আটারো বাড়ি রোডের পাশে অবস্থিত ফাইভ একতা ব্রিকস্ ফিল্ডে কাজ করছে স্কুল পড়ুয়া ১০/১৫ জন শিশু। তারা কাচা ইটের পাইয়ে থাকা ইটগুলো রোদে শুকানোর কাজ করা। প্রতিটি পাইয়ে প্রায় ২ হাজার থেকে ২২ শ’ কাচা ইট থাকে। এ পরিমান ইট উল্টিয়ে দিয়ে শুকানোর জন্য প্রতিটি শিশুকে দেওয়া হয় মাত্র ২০ টাকা। অথচ এ কাজ করানোর জন্য একজন বয়স্ক শ্রমিক নিয়োগ করা হলে তাকে দিতে হতো ন্যুনতম ৪ থেকে ৫ শ’ টাকা। শিশু শ্রমিকের মাধ্যমে মজুরি সাশ্রয় করার পাশাপাশি দেশের শিশুশ্রম বিষয়ক আইনকে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চলেছে নেত্রকোনা জেলার ইটভাটার মালিকেরা।
একই রকম দৃশ্য দেখা যায় কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নে সম্পূর্ণরুপে কৃষি জমিতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ইটভাটায়। এই ইটভাটা গুলোতে নিয়মিত কাজ করে এমন কিছু শিশু শ্রমিকের সাথে কথা হলে। তারা বলে আমরা ২শত টাকা দৈনিক হাজিরা পাই।
এরকম অসংখ্য শিশু জেলার প্রায় ৪৬ টি ইটভাটায় সচরাচর কাজ করছে। অনেক শিশুকে দেখা গেছে ইটভাটার মূল প্লাটফরমের উপরিভাগে কাজ করছে। তাছাড়া অনেকে চুল্লিতে কয়লা বা কাঠ দেওয়ার কাজও করছে। যা খুবই ঝুঁকিপুর্ণ। অনেক সময় তারা মাটির গাদা তৈরীর জন্য মাটি ভর্তি ট্রলি ঠেলে নিয়ে যাওয়ার কাজ করতেও বাধ্য হয়।
এ ব্যাপারে কথা হয় একতা ব্রিকস এর স্বত্বাধিকারী মোঃ বাদল ভূইয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শিশুরা কাজ করছে তাতে কি হয়েছে। তারা কি খুব কষ্টদায়ক কোন কাজে নিয়োজিত। গরীব মানুষ এখানে কাজ করার বিনিময়ে যতটুকু আয় করছে তাতে তাদের পরিবারের ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে সহযোগিতাই তো হচ্ছে। আর এ বিষয়টা তো সাংবাদিকদের দেখার কথা নয়। এগুলো যারা দেখবে তাদের কে গিয়ে বলেন।
হিমালয় ব্রিকস্ ফিল্ড এর মালিকদের একজন প্রতিনিধি জানান, শিশুরা স্কুল ছুটির সময় ইটভাটায় কাজ করে। এতে তো কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া শিশুরা তো এখানকার নিয়মিত শ্রমিক নয়। তাই এ ব্যাপারে কারো নাক গলানোর কোন প্রয়োজন নেই।
একটি সূত্র মতে ইটভাটা মালিকদের সাথে মহিলা ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, শ্রম বিষয়ক কর্মকর্তা, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট সকল প্রশাসনের সাথে রয়েছে তাদের যোগাযোগ। এ কারণে ইটভাটা মালিকরা শিশুশ্রম সহ সকল ক্ষেত্রে আইনের কোন তোয়াক্কাই করেন না।
পরিবেশ দূষণ, কৃষি জমির মাটি ইচ্ছেমত কেটে নেওয়া, কৃষি জমিতে ইটভাটা গড়ে তুলে আশপাশের জমির আবাদ ধ্বংস করে চললেও কোন কর্তৃপক্ষই তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়না। আর তাই এ ব্যাপারে যারা আইন সম্মত কোন কথা বলতে যায় তাদের সাথে ইটভাটা মালিকরা চরম উদ্ধতপূর্ণ আচরণ করেন। তারা ধরা কে সরা জ্ঞান করে প্রশাসনের সাথে সাথে সংবাদকর্মীদেরও বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করেন না।
এ ব্যাপারে কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মইনউদ্দিন খন্দকার জানান, এ সংক্রান্ত আইন রয়েছে তবে তা এখনও গ্যাজেটভুক্ত না হওয়ায় সে অনুযায়ী আইন প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। কিন্তু তারপরও যদি আমরা ইটভাটার বিরুদ্ধে আইন অমান্যের কোন অভিযোগ পাই তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। বিশেষ করে শিশু শ্রম বিষয়ে।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজি আবদুর রহমান জানান, নির্দিষ্ট করে ইটভাটার নাম থাকলে। যেখানে শিশু শ্রমিকেরা কাজ করছে। তাহলে আমরা ব্যবস্থা সহজ হবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি শিশু শ্রম প্রতিরোধ করার জন্য।