চট্টগ্রামের মানুষ এতো ভালোবাসেন বোধগম্য ছিলো না

Share the post

চট্টগ্রাম :  রাজনীতি ও খেলাধুলা-এ দুটোকে এবাদত হিসেবে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের হাতে স্মারক তুলে দেন প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস

   

আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চরম দুঃসময়ে রাজনীতি শুরু করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড আমাকে নাড়া দিয়েছিলো। ৭৫ এর পর সর্বপ্রথম জানুয়ারি মাসে আমরা চার-পাঁচজন ছেলে একত্রিত হয়ে মিছিল করেছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে চন্দনপুরা দিয়ে চলে গেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী এসে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছিলো।

আমার কোনো অভিমান, ক্ষোভ, রাগ নেই। আমি রাজনৈতিক কর্মী, মাঠের কর্মী। মাঠ থেকে আজ এ পর্যায়ে এসেছি। অনেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম। চট্টগ্রাম কলেজকে শিবিরমুক্ত করতে গিয়ে নির্মমভাবে আক্রান্ত হয়েছিলাম। নির্যাতন ছিলো নিত্যদিনের সঙ্গী। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী আমাকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। এরপর মেয়র পদে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, মনের কষ্টের কথা যদি বলেন একটা বিষয়ে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। যেখানে আমি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর চট্টগ্রাম কলেজে প্রতিবাদ মিছিল করেছি, বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুকের সভা পণ্ড করেছি এবং এ শহরে তাদের কোথাও কোনো সভা-সমাবেশ করতে দিইনি সেই জায়গায় খুনির কোন এক ভাইয়ের ছবি ফেসবুকে দিয়ে চরম অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করা হয়েছে।

যে ছবিটি দেখানো হয়েছে সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আমার দুঃসময়ে পাশে থাকা আকরাম খানের আহ্বানে অক্সিজেন এলাকায় একটি দোকান উদ্বোধনে গিয়েছিলাম। অপপ্রচারকারীরা যে বঙ্গবন্ধুর খুনির ভাইয়ের ছবি দাবি করছে তাকে আমি চিনিও না, কোনো দিন দেখিওনি। হয়তো আকরাম খান বলতে পারবে। মেয়র পদের মনোনয়ন আটকে দেওয়ার জন্য এ ধরনের ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেওয়া খুবই দুঃখজনক। কারও মেয়র পদ লাগলে আমাকে সরাসরি বলতে পারতো। প্রয়োজনে আমি মনোনয়ন সংগ্রহ করতাম না। কিন্তু এ রকম এ অপপ্রচার কিছুতেই কাম্য নয়। যার সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। আমি শতভাগ চ্যালেঞ্জ করে বলছি।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে জয়ী করতে শতভাগ কাজ করবেন জানিয়ে মেয়র বলেন, আমি সবাইকে বলছি-‘তোমরা আমাকে নির্বাচিত করার জন্য যেভাবে কাজ করতে, সেই ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থীর জন্য কাজ করবে। আমি শতভাগ উজাড় করে দেবো।’

বিগত দিনে এ শহরের প্রতিটি নির্বাচনে প্রত্যেকটি প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য কী করেছি সেটা আপনারা (সাংবাদিকরা) জানেন।

তিনি বলেন, আমার বড় প্রাপ্তি হচ্ছে সততা। স্বচ্ছতার মধ্যে চসিকের দায়িত্ব পালন করেছি। চট্টগ্রামবাসী এতো ভালোবাসেন এটা আমার বোধগম্য ছিলো না।আমি জানি মানুষের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা আছে। আমাকে কাজ পাগল বলা যায়। আমার বাবাও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। খেলাধুলা আমার রক্তের সঙ্গে মিশে আছে।  

১৯৯০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ২৫ বছরে ২৫৫০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাবো। অনেক প্রকল্প দেওয়ার কারণে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি কাজ বাস্তবায়ন করেছি। আরও অনেক প্রকল্পের কাজ বাকি আছে। এলইডি লাইটের আওতায় আসছে পুরো শহরে। আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, এখানে সড়কবাতি ছিলো না। অন্ধকার থাকতো। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর লাইটিংয়ের আওতায় এনেছি। ময়লা-আবর্জনা মাসের পর মাস দুর্গন্ধ ছড়াতো। এখন সেই অবস্থায় আছে?

আমার মূল লক্ষ্য ছিলো টেকসই উন্নয়ন। জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রকল্প দেওয়া হয়েছে। দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী ড্রেন, খাল প্রশস্ত করছে, গভীর করছে। প্রকল্পগুলো যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে জনগণ এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে। আগে সড়ক ছিলো ফুটপাত ছিলো না। নালা ছিলো না। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে আগে ফুটপাত, ড্রেন, লাইটিং ছিলো? এখন সবই করা হয়েছে। পোর্ট কানেকটিং রোড করা হচ্ছে। বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামের গুরুত্ব ও প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে নগরটা ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেছি।  

আমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- আমি মানুষকে ভালোবাসার চেষ্টা করি। মানুষের আর্থিক অবস্থা আমার কাছে বিবেচ্য নয়।

তিনি বলেন, আমি সাংবাদিক সমাজের পক্ষে। আমি যেখানে থাকি, যে অবস্থানে থাকি সাংবাদিকদের পাশে থাকবো। সাংবাদিকদের কাছে আমি ঋণী ও কৃতজ্ঞ। আমরা যে কাজগুলো করেছি তার সুফল নগরবাসী পেতে শুরু করেছেন। কাজের মধ্যে সময় অতিবাহিত করেছি। রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত অফিস করেছি। কোনো ফাইল জমে থাকেনি। দিনের কাজ দিনে করার চেষ্টা করেছি। এরপরও ভুল ত্রুটি হলে চুল চেরা বিশ্লেষণ করবেন আপনারা।

যত ব্যস্ততা থাক, স্টেডিয়াম ছুটে যাই। স্টেডিয়াম এলাকা আগে কোন অবস্থায় ছিলো, এখন কোন অবস্থায় এসেছে। অবকাঠামো থেকে শুরু করে খেলাধুলায় পরিবর্তন এসেছে। চট্টগ্রামের দুইজন ক্রিকেটার আছেন আন্ডার ১৯ দলে। তারা বিরল সম্মান বয়ে এনেছে দেশের জন্য।

বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কলিম সরওয়ার, বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. শামশুল ইসলাম, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলাম।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বঙ্গবন্ধু টানেল

Share the post

Share the postনিউজ ডেস্ক , চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম চেম্বারের গোলটেবিল বৈঠকে এফবিসিসিআই সভাপতি পরিপূর্ণ সুফল পেতে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে গুরুত্ব আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২৩  বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর এবং ভারতের সেভেন সিস্টারস–এর মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করবে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা বঙ্গবন্ধু টানেল নিয়ে গতকাল নগরীর আগ্রাবাদ […]

মানবতার ফেরিওয়ালা চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে শীতকালীন কম্বল বিতরণ

Share the post

Share the postচট্টগ্রাম সংবাদ: মানবতার ফেরিওয়ালা চট্টগ্রাম মহানগর শাখার পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম নগরীর মধ্যরাতে নগরের জামালখান,চকবাজার,চট্টগ্রাম মেডিকেল,ওয়াসা,কাজির দেউড়ি,সিআরবি,দেওয়ানহাট সহ বিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। রাতের আঁধারে এই তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছে, তাদের কষ্টকে লাঘব করতে এই শীতকালীন কম্বল বিতরণ করা হয়। মানবতার ফেরিওয়ালার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মশিউর রহমানের নির্দেশনা মোতাবেক মানবতার ফেরিওয়ালার চট্টগ্রাম […]