শিক্ষা প্রতিস্ঠান খোলার ঘোষণায় খুশি মোরেলগঞ্জের শিক্ষার্থীরা সন্তানদের স্বাস্থ্যবিধি কতটা রক্ষা হবে প্রশ্ন অভিভাবকদের
মেজবাহ ফাহাদ মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি (বাগেরহাট): বাংলাদেশে গত কিছুদিন ধরেই করোনা সংক্রমণের হার বেশ কমে এসেছে এবং ধারাবাহিক ভাবেই এ হার নিম্নমুখী থাকার পাশাপাশি, ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলছে, তারই প্রেক্ষাপটে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্হ্যবিধি মেনে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষা প্রতিস্টান খোলার খবর শুনে মোরেলগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে।পড়ার টেবিলে থাকা পাঠ্য বইগুলো এতোদিন পরে গুছাতে শুরু করেছে,স্কুল ব্যাগটিও পরিস্কার করছে।কেউ কেউ অভিভাবকদের কাছে বায়না করছে নতুন স্কুল ড্রেস,স্কুল ব্যাগ কিনে দেয়া জন্য,কারন এতোদিনে তাদের পাঠ্যবই বহনকারী ব্যাগ, স্কুল ড্রেসটি বেশ পুরানো হয়ে গিয়েছে।
সরকারের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে যে আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্কুলগুলোকে পাঠদানের উপযোগী করতে হবে,মোরেলগঞ্জ উপজেলাতে রয়েছে ৩০৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।অনন্য উপজেলার চেয়ে এই উপজেলাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাটা একটু বেশি।প্রস্ন থেকে যায় এই উপজেলার ৩০৯ টি বিদ্যালয়ের মধ্যে কয়টি বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম পাঠদানের উপযোগী,বলা যেতে পারে দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকার কারনে স্রেনীকক্ষগুলো পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে ।১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোরেলগঞ্জের গ্রামীণ এলাকার এই স্কুলগুলোর স্রনীকক্ষগুলো কি পাঠদানের উপযোগী করা হবে তো ! করোনা সংকটে স্কুল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন শুধুমাত্র তাদের বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে বসে তড়িঘড়ি করে তাদের কার্যক্রম সেরেছেন।কোন কোন শিক্ষক স্রেনীকক্ষের দিকে ফিরেও তাকায় নি।আমরা জানি সরকার প্রতি বছর দেশের শিক্ষাখাতে একটু বেশি অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে,কোরোনা দুর্যোগের মধ্যেও থেমে থাকেনি সরকারের দেয়া এসব অর্থ বরাদ্দ । দেশের অনন্য উপজেলার মত মোরেলগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিস্টানে বাৎর্ষরিক স্লিপের অর্থ ছাড়, বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র মেরামত সহ অনন্য খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেয়ে থাকে।প্রশ্ন হলো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য দেয়া এসব অর্থ বরাদ্দ স্কুল ম্যানেজিং কমিটি বা সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঠিকভাবে শিক্ষাপ্রতিস্টানের উন্নয়নে ব্যায় করছেন তো ? সেই অর্থের কাজের কিছু ভুয়া বিল/ ভাউচারে দেখিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কতিপয় কর্তাদের ম্যানেজ করে নিজেরাই নিজেদের মতো খরচ করছেন না তো। এমনও অভি্যোগ আছে যে সরকারের পক্ষ দিয়ে করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য দেয়া মাস্ক,হ্যান্ড – স্যানিটাইজার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বয়ং নিজে এবং তার পরিবারের সদস্যরা ব্যাবহার করছেন।তাহলে তো বলা যায় যে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানের স্বাস্থ্য সুরাক্ষা নিয়ে চিন্তিত থাকারই কথা।
আমরা জানি প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকার একজন নৈশ প্রহরী নিয়োগ দিয়েছেন,এসব নৈশ্য প্রহরীরা করোনাকালীন সময়েও সঠিক নিয়মে সরকারের বেতন,বোনাস সহ অনন্য সকল সুবিধাদি পেয়েছেন।প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগন যদি সহকারী শিক্ষকদের সাথে নিয়ে এসব নৈশ্যপ্রহরীদের দিয়ে সপ্তাহে অন্তত একটি দিন বিদ্যালয়ের প্রতিটি স্রেনীকক্ষ পরিস্কার করতো তাহলে এখন প্রতিটি স্রেনীকক্ষ নতুন করে ধুয়েমুছে পরিস্কার করতে হতো না। সরকার কোমলপ্রাণ শিশুদের শুরুতে ক্লাসে ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে বাস্তবতায় দেশজুড়ে অসংখ্য স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি আদৌ নিশ্চিত করা যাবে কি-না।মোরেলগঞ্জের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মাঝে এ নিয়ে রীতিমতো সংশয় দেখা দিয়েছে।তারা বলছেন স্কুলের স্রেনীকক্ষের পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে করোনা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে তো শিক্ষকরা।সরকারি নির্দেশিকায় স্কুল খোলার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে বলা হয়েছে, এরমধ্যে রয়েছে শ্রেণিকক্ষে বেঞ্চ সাজাতে হবে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে। ৫ ফুটের কম দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে একজন শিক্ষার্থী এবং ৫ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের বেঞ্চে দুজন শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করতে পারবে। স্কুলে ঢোকার আগেই তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। সবাইকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। আমাদের মোরেলগঞ্জে এটি কতটা কার্যকর হবে সেটাই এখন দেখার বিষয় !
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ প্রতিবেদককে জানালেন সরকারের গাইডলাইন অনুযায়ী স্কুলকে প্রস্তুত করতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতিই তারা নিচ্ছেন।পুরো বিদ্যালয়ই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ থেকে শুরু করে বাগান, টয়লেটসহ সব কিছু ক্লিন করা হচ্ছে। প্রতি শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে দুটি করে মাস্ক দেয়া হবে।কিন্তু এসব বাস্তবায়ন করতে হলে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের সঠিক মনিটরিং দরকার।মোরেলগঞ্জের প্রতন্ত গ্রামের এমন কিছু স্কুল রয়েছে যোগাযোগ ব্যাবস্হা ভালো না থাকার কারনে সেসব শিক্ষাপ্রতিস্টানে আজ অবদি কোন শিক্ষা কর্মকর্তা পরিদর্শনে যান নি,ফলে ওইসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন খেয়াল খুশি মতই তাদের প্রতিস্টান চালাচ্ছেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি বিষয়ে মোরেলগঞ্জের একটি সনামধন্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বলেন স্কুল খোলার নির্দেশনা পেয়েছি,আমরা চাই প্রতিটি অভিভাবকদের সচেতন করতে তারা যেন তাদের সন্তানদের পরিছন্ন ভাবে স্কুলে পাঠায়,আমরা তাদের জন্য তাপমাত্রা মাপার মেশিন, স্যানিটাইজার, সাবান ইত্যাদির ব্যবস্থা করবো । এতোদিন স্কুলের আঙিনা ও শ্রেণিকক্ষ, বাথরুম, বারান্দা পরিষ্কার করে রেখেছি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন করছি।
মোরেলগঞ্জের সনামধন্য একটি শিক্ষা প্রতিস্টান এ সি লাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক সদস্য মোঃ শহিদুল ইসলাম খান জানান, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীর পড়ালেখার প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। বাচ্চারা একদম পড়াশোনা করতে চায় না। যদিও স্কুল থেকে কোনরকম অনলাইন ক্লাস হয়েছে। কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত