হাজি সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল
দুর্নীতি মামলায় সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের দশ বছরের সাজা বহাল রেখেছে উচ্চ আদালত। মঙ্গলবার বিচারপতি মঈনুল ইসলাম ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেছেনএছাড়াও ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তবে, আরেক মামলায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে হাজি সেলিমকে তিন বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
তবে সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে বিচারিক আদালত হাজী সেলিমকে যে তিন বছরের যে কারাদণ্ড দিয়েছিল, দুর্নীতি দমন কমিশন সেই সেই অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় উচ্চ আদালত সে অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দিয়েছে।
দুর্নীতির এ মামলায় হাজি সেলিম এখন জামিনে আছেন। তবে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে পুরান ঢাকার এই আওয়ামী লীগ নেতাকে বিশেষ জজ আদালত-৭ এ আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা করে।
আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে দণ্ডিত হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরার আপিলটি বাতিল করা হয়েছে।
আদালত রায়ে বলেছে, বিচারিক আদালতে রায়ে দণ্ডিত হাজি মোহাম্মদ সেলিমের আপিল সংশোধন করে (আংশিক গ্রহণ ও আংশিক খারিজ) দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ ধারা সংক্রান্ত আপিল গ্রহণ করা হল। আর এই আইনের ২৭ (১) এ আপিলের অংশ খারিজ করা হল।
আদালতে হাজী সেলিম ও তার স্ত্রীর আপিলের পক্ষে শুনানি করেন আব্দুল বাসেত মজুমদার ও আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান মনির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তামান্না ফেরদৌস।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই কিংবা ততধিক বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হল সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবে না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।
তবে হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, তারা হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। সম্পদের উৎসের বিষয়ে বিচারিক আদালতের রায়ে যে সাজা দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু উৎস থেকে যে সম্পদ অর্জিত হয়েছিল, সে সম্পদের কারণে তার সাজা বহাল রাখা হল। মূলত এই গ্রাউন্ডেই এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিচারিক আদালতের দেয়া ১৩ বছরের দণ্ডের মামলার আপিলের ওপর শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৯ মার্চ দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজি সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে লালবাগ থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে ২০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।
২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজি সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট তার সাজা বাতিল করেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক।
ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্টে ওই আপিল (হাজি সেলিমের) পুনরায় শুনানি করতে বলা হয়। এরপর প্রায় পাঁচ বছর ওই আপিলের শুনানি হয়নি। তবে সম্প্রতি আপিলটি শুনানির উদ্যোগ নেয় দুদক।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ নভেম্বর হাইকোর্ট বিচারিক আদালতে থাকা মামলার যাবতীয় নথি (এলসিআর) তলব করেন। এরপর কয়েক দিবস শুনানি শেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিলটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।