সুন্দর শরৎ মানেই প্রকৃতি,নেত্রকোনায় নদীর তীরে কাশফুলের সাদা হাসি

Share the post
সোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : প্রকৃতিতে এখন ঋতুরানী শরৎ। ভাদ্র ও আশ্বিন দুই মাস মিলে বাংলা ষড়ঋতুর তৃতীয় ঋতু এই শরৎকাল। প্রকৃতির রূপ-বৈচিত্রের পরিবর্তন ঘটলেও শরৎকাল ধরা দেয় তার আলাদা রূপ-বৈচিত্রে। শরৎ এলেই নেত্রকোনায় নদ-নদীর পাড়ে ফুটতে শুরু করে কাঁশফুল। এই কাশফুলের শুভ্র হাসিই জানান দেয় শরৎ এসেছে। ভ্যাপসা-অস্বস্তিকর গরমের অবসান ঘটিয়ে আসতেছে শীত। তাই কাশফুল আর শরৎকাল যেন মিলেমিশে একাকার। কাশফুলের সৌন্দর্য দোলা দেয় মানুষের মনেও। আর এই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য মানুষ ছুটে আসেন নদ-নদীর পাড়ে, বালুর চরে ফুটে থাকা কাশবনে।নেত্রকোনা জেলার প্রতিটি নদ নদীর পাড়েই বিস্তীর্ণ বালুর চরে ফুটতে শুরু করেছে কাশফুল। দূর থেকে দেখে মনে হয় সাদা মেঘ নেমে আসছে মাটিতে। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে কংশ নদীর তীরে অবস্থিত স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে,কংশ নদীর পাড়ে প্রতি বছরই কাশফুল ফোটে। তবে দিন দিন কাশফুলের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর ফুল কম। পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছর কংশ নদী খনন করে বালু নদের পাড়ে জমা রাখে। এতে করে মূল জমি ঢাকা পড়ে যায়। এবার ওই বালুর মধ্যেই কাশফুলের গাছ জন্মেছে। তবে পরিমাণে কম। এজন্য ফুলও কম দেখা যাচ্ছে। তারপরও নদীর পাড়ে যেন সাদা ফুলের মেলা। বিকেল হলে অনেক লোকজন আসে এটা উপভোগ করতে। কাশফুলের সঙ্গে ছবি তোলে, ঘুরে বেড়ায় তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাশফুল মূলত ছন গোত্রীয় বহুবর্ষজীবী এক ধরনের ঘাস। এরা উচ্চতায় তিন থেকে ছয় ফুটেরও বেশি হয়। ছনের কচি পাতা গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবেও পরিচিত। নদ-নদীর পাড়, জলাভূমি, চরাঞ্চল ছাড়াও রুক্ষ এলাকাতেও কাশ জন্মে। তবে নদ-নদীর পাড়ে এদের বেশি দেখা যায়। নদীর তীরে পলি মাটির স্তর থাকায় খুব সহজেই এর কাশের মূল সম্প্রসারিত হয়। এদিকে নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলায় ধনু নদীর চর এলাকার, খালিয়াজুরী এলাকার উপশহর, ধনু নদীর পাড় ঘেঁষে প্রচুর পরিমাণে কাশ জন্মে। শরতে ফুল ফুটলে মোহনীয় সৌন্দর্যে রূপ নেয় এসব এলাকা। অন্যদিকে দূর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত স্থানীয় কৃষকেরা জানায়, কাশের পাতা এবং ফুলের ডাটা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া কচি পাতা শুকিয়ে পানের বরজের ছাউনি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও অনেকে শৌখিনভাবেও ঘরের ছাউনিতে কাশপাতা ব্যবহার করে।
দূর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর পাড়ে ঘুরতে আসা ইশরাত জাহান নামে এক কলেজছাত্রী বলেন, কাশফুলের সৌন্দর্য দেখতে সোমেশ্বরী নদীর পাড়ে ছুটে আসা। আগে বিভিন্ন খালের পাড়ে প্রচুর কাশফুল ফুটতো। এখন খুব একটা দেখা যায় না। সোমেশ্বরী নদীর তীরে এখন কাশফুলের দেখা মিলে। খুব ভালো লাগে। কাশফুল মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতিতে এখন শরৎকাল। নাজমুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, বিকেলে সোমেশ্বরী নদীর পাড়ে, ব্রিজে লোকজন ঘুরতে আসে। এখানে বাতাস থাকায় বেশ ভালো লাগে। আর এখন কাশফুল ফুটতে শুরু করেছে। এর সৌন্দর্য অন্যরকম। বেশ ভালো লাগে। শরতের প্রকৃতি বলতে ঝকঝকে নীলাকাশে ছোপ ছোপ মেঘের ভেসে বেড়ানো, মৃদু-মন্দ বাতাস প্রবাহিত হওয়ার কথা থাকলেও ইদানীং আর তেমনটা মিলছে না। গত কয়েকদিন আগে টানা বৃষ্টিপাতের পর এখন আবার ভ্যাপসা গরম। মাঝে মধ্যে আকাশে মেঘলাভাব। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাওয়া প্রকৃতিতে এই শুভ্র কাশফুলই জানিয়ে দেয় শরৎ এসেছে। পৃথিবীর চারটি প্রধান ঋতুর একটি হচ্ছে শরৎকাল। উত্তর গোলার্ধে সেপ্টেম্বর মাসে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মার্চ মাসে শরৎকাল গ্রীষ্মকাল ও শীতকালের মধ্যবর্তী ঋতু হিসেবে আগমন করে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

নেত্রকোনায় বাপ দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে চায় শীতল পাটির কারিগররা

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : শীতল পাটি বাংলার সুপ্রাচীন এক কুটির শিল্পের নাম। শীতল পাটি আমাদের সভ্যতা, কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের অংশ। এছাড়া বাংলাদেশের শীতল পাটি এখন বিশ্ব ঐতিহ্যেরও অংশ। জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো আনুষ্ঠানিক এ স্বীকৃতি ঘোষণা দেয়। এক সময় সারাবিশ্বে ছিল শীতল পাটির খ্যাতি। আমাদের গৃহস্থালির নানা দরকারি জিনিসের […]

নেত্রকোনায় বন্যায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার আমন ফসলের ক্ষতি, অন্যদিকে ছয়শ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক ডুবে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি

Share the post

Share the postসোহেল খান দূর্জয়, নেত্রকোনা : নেত্রকোনায় টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর আমন ফসলের জমি নষ্ট হয়েছে। যেখানে উৎপাদিত ধানের মূল্য সাড়ে ৩শ কোটি টাকা। এই বন্যায় নষ্ট হয়েছে নানা জাতের সবজি খেত। চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। কিছু অঞ্চলে পানি নামলেও নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে ভাটি এলাকার […]