

সোহেল খান দূর্জয়,নেত্রকোনা প্রতিনিধি : মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতি বৃষ্টির কারণে খালিয়াজুরীর ধনু নদীর পানি হঠাৎ করেই আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে হাওরের ফসল রক্ষা বাধেঁর কাছাকাছি চলে আসেছে ঢলের পানি। আতঙ্কিত হয়ে পরেছে হাওর পাড়ের কৃষকরা।
ইত্যেমধ্যে খালিয়াজুরী উপজেলায় কয়েকটি হাওরের অধিকতর নিচু জমির প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ একর পরিমাণ বোরো ফসল ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। এভাবে ঢলের পানি বাড়তে থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই উপজেলার ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসলই তলিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় কৃষকরা।
জেলার মদন মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী হাওর বেষ্টিত উপজেলায় এ বছর ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। একমাত্র ফসলের ওপর নির্ভরশীল ঐ হাওরাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ। আগাম বন্যার এমন আশঙ্কায় অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পরছেন কৃষকরা ভেসতে চলেছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। সবে মাত্র ধানের শীষ এসেছে জমিতে,কাটার উপযুগী হতে সময় লাগবে আরো অন্তুত ১৫/২০ দিন।
এমতাবস্থায় ফসল রক্ষা বেরী বাঁধের প্রতি বিশেষ নজর রাখাতে সকল পিআইসি সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানিয়েছেন খালিয়াজুরী উপজেলা প্রশাসন। এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে এমন আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেন খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএইচএম আরিফুল ইসলাম।
এ ছাড়াও এর আগে সময় মতো পানি ও বৃষ্টির অভাবে আগাম লাগানো জমিতে ধান চিটা হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। সবকিছু মিলে একমাত্র ফসলের ওপর নির্ভরশীল মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যার এমন আশঙ্কায় অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পরছেন ঐসব অঞ্চলের কৃষকরা।
জেলার হাওরাঞ্চলের খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের কীর্তনখলা হাওর, চুনাই হাওর, বাদিয়ারচর হাওর, টাকটারের হাওর, মনিজান হাওর, লেবরিয়া হাওর, হেমনগর হাওর চাকুয়া ইউনিয়নের গঙ্গবদর হাওর, নয়াখাল হাওর, গাজীপুর ইউনিয়নের বাগানী হাওর ও ডাকাতখালি হাওরের অধিকতর নিম্নস্থানে ও ফসলরক্ষা বাঁধের বাইরে আবাদ করা ওই সব তলিয়ে যাওয়া জমির ফসল দুধ ও দানা পর্যায়ে তাও কাটছে কৃষক।
খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, ইতোমধ্যে ক্ষতি হয়েছে ১১৩ হেক্টর জমির ফসল। গত ০১ এপ্রিল থেকে পানি বাড়ায় এসব জমি তলিয়েছে।
খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এএইচএম আরিফুল ইসলাম বলেন, ১লা এপ্রিল থেকে ধনু নদীর পানি ব্যাপক হারে বাড়ায় এসব জমি তলিয়ে গেছে, তবে ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও সুরমা নদী দিয়ে খালিয়াজুরির ধনু নদীতে ঢল আকারে নামছে,১লা এপ্রিল থেকে আজ পযর্ন্ত ধনু নদীর পানি বেড়েছে প্রায় ১০ ফুট। আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে হাওরের ফসল রক্ষা করা যায়।
ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও সুরমা নদী দিয়ে খালিয়াজুরীর ধনু নদীতে ঢল আকারে নামছে। ১ এপ্রিল থকে আজ পর্যন্ত ধনু নদীর পানি বেড়েছে ১০ ফুট। নির্দিষ্ট একটি নিয়মের উচ্চতায় প্রতি বছর হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এবারও নিয়ম অনুযায়ীই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এখন অতিরিক্ত মাত্রায় পানি বেড়ে গেলেও সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বালু ভর্তি বস্তা দিয়ে পানি ঠেকিয়ে উঠতি ফসল বাঁচাতে জানান নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজি মোঃ আবদুর রহমান জানান, পানি বৃদ্ধির খবর পেয়ে হাওরাঞ্চলে ছুটে গিয়ে কৃষক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রশাসনের সাথে মতবিনমিয় করেছেন। সেইসাথে বাধ ক্ষতিগ্রস্থের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে মাঠি ভর্তি ৮ হাজার বস্তা জিয়ো ব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক খালিয়াজুরীরর গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ কৃর্তনখোলা, গাগলাজুর, তেতুলিয়া, নাউটানাসহ বিভিন্ন বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করছেন।