

জলিলুর রহমান জনি,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : উত্তরের জেলা সিরাজগঞ্জে মাত্র ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদী থেকে ১২ হাজার বিঘা জমি উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। উদ্ধার করা জমির আয়তন সিরাজগঞ্জ শহরের প্রায় তিন গুণ। উদ্ধার করা জমির বেশির ভাগ সরকারি। তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিও রয়েছে অনেক।
বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, ওই ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে চারটি স্পার নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ২৫০ কোটি আর নাব্য ফেরাতে ড্রেজিং করতে ব্যয় হয়েছে আরও প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। ড্রেজিং ও স্পার নির্মাণ প্রকল্প সফলভাবে শেষ হওয়ায় যমুনা নদীর ডানতীরে ৩ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন বন্ধ হয়েছে স্থায়ীভাবে।
কর্মকর্তারা জানান, ব্রহ্মপুত্র নদ আর যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন প্রতি বিঘা জমি যেকোনো জেলায় উদ্ধারে ব্যয় হবে এলাকাভেদে গড়ে ২ থেকে ৩ লাখ টাকায়। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদী খনন আর চারটি স্পার নির্মাণের ব্যয় বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পেয়েছেন বোর্ড কর্মকর্তারা। সিরাজগঞ্জে উদ্ধার করা জমিতে বড় বড় শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১০ লাখ মানুষের, দাবি বোর্ড কমকর্তাদের।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বগুড়া সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. অরিফুল ইসলাম বলেন, ‘২০১৪ সালে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি স্পার তৈরির কাজ শুরু হওয়ার আগেই ৩৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেজিং বা নদী খননে পাওয়া বালি আর মাটি দিয়ে ভরাট করা হয় যমুনা নদীর ডান তীরের বিস্তীর্ণ এলাকা। আর ২০১৭ সালে স্পার নির্মাণ শেষ হলে পুরো এলাকা রক্ষা পায় নদীভাঙন থেকে। ফলে ১২ হাজার বিঘা জমি এখন চাষাবাদ ও বিভিন্ন কাজের উপযোগী হয়েছে।’ তিনি জানান, ২০১৮ সালে স্পার তৈরির কাজ শেষ হওয়ার পর প্রকল্প এলাকায় নতুন করে আর নদীতীর ভাঙনের মুখ পড়েনি।
হিমালয়ের কৈলাশ পর্বতমালায় ব্রহ্মপুত্র নদের সৃষ্টি। খরস্রোতা এ নদ উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ও রৌমারী উপজেলার সাহেবের আলগা এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গাইবান্ধা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ মাইল এ নদের নাম ব্রহ্মপুত্র আর ভাটিতে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পর্যন্ত যমুনা নদী নামে পরিচিত। গড়ে ১০ মাইল প্রশস্ত আর প্রায় ২১৯ মাইল দৈর্ঘের ব্রহ্মপুত্র নদ ও যমুনা নদীর দুই তীরই ভাঙনপ্রবণ। তবে ডান তীরে অরক্ষিত এলাকায় বছরে ভাঙে প্রায় সাড়ে ৪০০ ফুট এলাকা। অরক্ষিত এলাকাগুলোর মধ্যে শুধু বগুড়াতে যমুনা নদীভাঙনে বছরে বিলীন হয় গড়ে ১ হাজার বিঘা জমি।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বেলোটিয়া গ্রামের মোজাফ্ফর হোসেন ও তার আত্মীয়-স্বজনদের প্রায় ৫০ বিঘা জমিভাঙনে হারিয়ে যায় যমুনায়। তীর সংরক্ষণ কাজের পাশাপাশি ভূমি উদ্ধারের কাজ শেষ হওয়ায় ২২ বিঘা জমি ফিরে পেয়েছেন। তার দাবি আটটি মৌজায় উদ্ধার হওয়া জমির প্রায় সবই সাধারণ মানুষের।
মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, সাধারণ মানুষের জমিগুলো অধিগ্রহণ করে পুরো এলাকায় শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বিলোডিয়া গ্রামের মো. নুরুজ্জামান। পানি আর শরবত বিক্রি করেন বিরোডিয়া বাজারে। দিনে আয় গড়ে ৫০০ টাকা। কারা এত পানি ও শরবত পান করেন এ প্রশ্নের জবাবে নুরুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিদিনই বাঁধে বেড়াতে আসেন অনেক মানুষ, মূলত তারাই আমার ক্রেতা।’
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, নদীভাঙনের কারণে আগে সিরাজগঞ্জ শহরে অনেকেই পাকা বাড়িঘর তৈরি করতেন না। কিন্তু নদীভাঙন বন্ধ হওয়ার কারণে এখন বড় বহুতল ভবন তৈরি হয়েছে।’
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, পরিবেশ মনোরম হওয়ায় প্রতিদিন বেড়াতে আসেন ৫-৬ হাজার মানুষ। তাদের কারণে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান।