সাজিদের রহস্যজনক মৃত্যু: সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রো-ভিসি’র ব্রিফিং

Share the post
ইবি প্রতিনিধি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রেস ব্রিফিং করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর) প্রফেসর ড. এম. এয়াকুব আলী।
রবিবার (২০ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা প্রো-ভিসি এই প্রেস ব্রিফিং করেন। ভিসি অফিসের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. শাহীনুজ্জামান, ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মো. ওবায়দুল ইসলামসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহীনুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে সার্চলাইট ও স্ট্রিটলাইট বসানো হয়েছে এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ট্রেজারার প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সক্ষমতা আছে, তবে যোগাযোগ ঘাটতি বা তথ্যপ্রবাহে দুর্বলতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে কিছুটা ঘাটতি থাকতে পারে। তার মতে, অর্থের কোনো অপব্যবহার হয়নি।
তিনি আরও জানান, সাজিদের মৃত্যুর খবর পেয়েই প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা দল কুষ্টিয়ায় ফিরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
প্রো-ভিসি ড. এম. এয়াকুব আলী সাজিদকে একজন মেধাবী, সজ্জন ও সংস্কৃতিমনা শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “তার মৃত্যুতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় শোকাহত। প্রশাসনের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করছি। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা সাজিদকে হারিয়েছি।”
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে যাতে কোনো সন্দেহ না থাকে, সে জন্য সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাজিদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি।” শিক্ষার্থীদের দাবিকে যৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি সকলকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
প্রো-ভিসি আরও জানান, প্রতিটি আবাসিক হলে একজন হাউস টিউটর ও একজন সহকারী প্রক্টর প্রতিরাতে দায়িত্বে থাকবেন। ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি, শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের জন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের সমন্বিত সহযোগিতা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এর আগে, গত ১৭ জুলাই বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি শহিদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে থাকতেন এবং তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়।
মৃত্যুর পরদিন (১৮ জুলাই) প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এমতাজ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়। একইসঙ্গে হল প্রশাসন শহিদ জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. আব্দুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। উভয় কমিটিই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
এদিকে, ১৯ জুলাই সাজিদের মৃত্যুকে ‘হত্যা’ দাবি করে ক্যাম্পাসে টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। তারা তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এবং পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ৬ দিনের মধ্যে প্রকাশ, সিসিটিভি স্থাপন, হলে এন্ট্রি-এক্সিট মনিটরিং, ক্যাম্পাসে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও বহিরাগত নিয়ন্ত্রণসহ ১৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন। পরে প্রশাসনের লিখিত আশ্বাসে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলেও ৬ দিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

আনুগত্য মানে অন্ধ অনুসরণ নয়- অধ্যাপক মাসুদুর রহমান গিয়াস

Share the post

Share the postফাহাদুল ইসলাম, সোনারগাঁ : “আনুগত্য মানে অন্ধ অনুসরণ নয়; বরং সঠিক নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বাস, দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করা এবং দলীয় লক্ষ্য অর্জনে ঐক্যবদ্ধ থাকা” বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নারায়ণগঞ্জ জেলার তারবিয়াত সেক্রেটারি অধ্যাপক মাসুদুর রহমান গিয়াস। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সোনারগাঁ উপজেলা উত্তরের আয়োজনে রুকনদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা, কার্যকারিতা ও সদস্যদের ব্যক্তিগত উন্নয়নের […]

নাইক্ষ্যংছড়িতে স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত হাতিকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে ১৫ জন আহত: ৩ জনকে ঢাকায় প্রেরণ

Share the post

Share the postমীর কাশেম আজাদ,কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত হাতিকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে আহত হয়েছেন চিকিৎসকসহ বন বিভাগের ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতরা হলেন- কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের রাজারকুল রেঞ্জ কর্মকর্তা আলী নেওয়াজ, ডুলাহাজরা সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন হাতেম সাজ্জাদ জুলকারনাইন ও গাজীপুর সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মো. […]