মানহীন অক্সিজেন সিলিন্ডারের রমরমা বাণিজ্য, ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড
চট্টগ্রাম : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাজারে অক্সিজেন সিলিন্ডারের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে দামের পাশাপাশি সিলিন্ডারগুলোর মান নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানে উঠে আসছে নিম্ন মানের সিলিন্ডারের ভয়াবহ চিত্র।
বুধবার (১০ জুন) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরীর নেতৃত্বে নগরীর আন্দরকিল্লা মোড় ও এনায়েত বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অক্সিজেন সিলিন্ডার দুই ধরনের হয়ে থাকে- ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড ও মেডিকেল গ্রেড। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য ব্যবহৃত অক্সিজেন শতভাগ বিশুদ্ধ হতে হয়, যা ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রেড অক্সিজেন সিলিন্ডারের ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা হয় না। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে জাহাজ থেকে পাওয়া মানহীন সিলিন্ডারগুলোতেও কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া অক্সিজেন রিফিল করছে এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এই ধরনের অনিয়মের দায়ে আজ বুধবার এনায়েত বাজার এলাকার বিসমিল্লাহ মেরিন স্টোরকে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারী অক্সিজেন সিলিন্ডার আমদানির কোন ধরনের ইনভয়েস ও প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক কাগজপত্র ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে দেখাতে পারেননি।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী বলেন, নিজেদের মতো করে দাম বৃদ্ধি করে এসব মানহীন অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করে আসছে বিসমিল্লাহ মেরিন স্টোর। প্রতিষ্ঠানটির ফায়ার এক্সটিংগুইশার আমদানির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলেও অক্সিজেন সিলিন্ডার আমদানি ও মজুদের জন্য বিস্ফোরক অধিদপ্তর প্রদত্ত লাইসেন্সসহ অন্যান্য কাগজপত্র নেই। এমনকি তার বিক্রয় ক্যাশ মেমোতে থাকা কার্বন কপিতে ক্রেতার নাম ঠিকানা লেখা ছিল না।
তিনি আরো বলেন, কাগজপত্র ঘেটে দেখা যায় গত ৩০ মে থেকে ৬ জুনের মাঝে প্রতিষ্ঠানটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের বিক্রয় মূল্য প্রায় আড়াই গুণ বৃদ্ধি করেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি থেকেই নগরীর মেডিকেল মোড়, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, আসকর দিঘীর পাড়ের অক্সিজেন সিলিন্ডারের মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সিলিন্ডার সংগ্রহ করে থাকেন।
এদিকে অভিযানে নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ের এবি সার্জিক্যালকে অধিক মূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রয় করায় ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. বদিউল আলম বলেন, কয়েকদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রামে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অক্সিজেন সিলিন্ডারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে অধিক মুনাফার আশায় মানুষকে জিম্মি করে অতিরিক্ত দাম আদায় করছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও সাধারণ ক্রেতাদেরকে ফিরিয়ে দিয়ে তারা বেশি দামে বিক্রয় করার জন্যে ব্যক্তিগত মুঠোফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা অক্সিজেন সিলিন্ডারের গুণগত মানের বিষয়টি নিশ্চিত করছেন না। মানহীন এসব সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে যে কোন সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।