মাধবপুরের আলোচিত লিজা হত্যার মামলার রহস্য উদঘাটন করল পিবিআই
মোঃজাকির হোসেন,মাধবপুর হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের মাধবপুরের আলোচিত লিজা হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই । এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় পিবিআই অফিস কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিং করা হয়েছে ।
প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে পিবিআই জানায়, গত বছরের ২১ জুলাই ২১ ঈদ-উল-আযহার দিন সকাল প্রায় সাড়ে ৬ টার সময় নিহত তাহমিনা আক্তার লিজার মা সেলিনা বেগম তার মেয়েকে পাশের গন্ধব্যপুর গ্রামের একটি দোকান থেকে নুডুলস ও প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্য সামগ্রী কিনে আনার জন্য পাঠান।
পরবর্তীতে তার মেয়ে নুডুলস নিয়ে বাড়ীতে ফিরে না আসলে আশেপাশের সম্ভাব্য সকল স্থানে ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়ীতে খোঁজাখুজি করে মেয়ের কোন সন্ধান না পেয়ে সেলিনা বেগম মাধবপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রী করেন।
গত বছরের ২৫ জুলাই সকাল প্রায় ১১ টার সময় ওই গ্রামের ২ জন মহিলা গ্রামের বাঁশ ঝাঁড়ের ভিতরে লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে নিহত লিজার অর্ধ-গলিত মৃতদেহ দেখতে পান । পরে নিহত লিজার মা সেলিনা বেগমকে খবর দেন। তাৎক্ষনিক ভাবে সেলিনা বেগম ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে তার মেয়ের অর্ধ-গলিত মৃতদেহ শনাক্ত করেন।
এই মর্মে লিজার বাবা বাদী হয়ে মাধবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে অতিরিক্ত আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার) পিপিএম এর সঠিক দিক নির্দেশনায় পিবিআই হবিগঞ্জ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোঃ আল মামুন শিকদার এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শাহনেওয়াজ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে অভিযুক্ত প্রেমিক বাহার উদ্দিন (২১) প্রেমিকা খাদিজা আক্তার তাজরীন (২৭) প্রেমিকার মা আমেনা খাতুন আঞ্জুদেরকে (৫০) গ্রেফতার করে সিবিআই।
মামলাটি তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য প্রমানে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামী খাদিজা আক্তার তাজরীন এর ছোট ভাই তাকবীর হাসান (২০) এর সাথে পার্শ্ববর্তী বাড়ীর সিরাজের মেয়ে শান্তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক চলাকালীন সময় একদিন সন্ধ্যায় তাদের বাড়ীর পাশে শান্তা এবং তাকবীর দেখা করার সময় নিহত লিজা তাদের দেখে ফেলে।
পরবর্তীতে নিহত লিজা উক্ত ঘটনাটি শান্তার মাকে জানায়। শান্তার মা বিষয়টি জানার পর শান্তাকে গালি-গালাজ করে এবং শান্তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। একপর্যায়ে শান্তার সাথে প্রেমিক তাকবীরের প্রেমের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।
এরই প্রেক্ষিতে তাকবীর ক্ষিপ্ত হয়ে লিজাকে শায়েস্তা করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। পরে গত বছরের ২১ জুলাই সকাল প্রায় ৭টার সময় লিজা পাশের গন্ধব্যপুর গ্রামের দোকান থেকে নুডুলস ও জর্দ্দার কৌটা কিনে বাড়ি ফেরার পথে তাকবীর নির্জন জায়গায় নিহত লিজাকে মামা ওয়েফার নামক চকলেট এর লোভ দেখিয়ে ভুলিয়ে তাদের বাড়ির মাটির ঘরে নিয়ে যায় এবং সেখানে লিজাকে গলা টিপে হত্যা করে।
হত্যার পর লিজার লাশ সে তার পরিবারের সহায়তায় বস্তাবন্দি করে বসতঘর সংলগ্ন গোয়ালঘরে লুকিয়ে রাখে। হত্যার ৪ দিন পর অর্থ্যাৎ ২৪ জুলাই লিজার মৃতদেহ থেকে দূর্গন্ধ বের হলে তাকবীর তার পরিবারের লোকজন ও আসামী বাহার উদ্দিন-এর সহায়তায় রাতের আঁধারে লিজার মৃত দেহটি আইলাবই গ্রামের একটি বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে ফেলে দেয়।
গ্রেপ্তারকৃত প্রেমিক বাহার গন্ধব্যপুর গ্রামের শপু মিয়ার পত্র এবং প্রেমিকা খাদিজা আক্তার তাজরীন আইলাবই গ্রামের সাইদুর রহমান ওরফে মোহন মিয়ার মেয়ে ও প্রেমিকার মা আমেনা খাতুন এর স্বামী। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে।