মডার্নার টিকাসহ গ্রেপ্তার ফার্মেসি মালিক কারাগারে
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সাঈদ এই আদেশ দেন।একই সঙ্গে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনের শুনানির দিন ২৩ অগাস্ট নির্ধারণ করেছেন আদালত।এরআগে রাজধানীর দক্ষিণখান থানায় দায়ের করা বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় আসামিকে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই (নি.) আব্দুল আজিজ। তবে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত না থাকায় আদালত তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।
এর আগে বুধবার (১৮ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণখানের চালাবন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফার্মেসির মালিককে আটক করা হয়।
এসময় তার ফার্মেসি থেকে মডার্না টিকার দুটি অ্যাম্পল এবং ২০টি ফাঁকা বক্স জব্দ করা হয়। সাধারণত প্রতি বক্সে ১০টি করে অ্যাম্পল ইনজেকশন থাকে।পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন খবরের ভিত্তিতে রাত ১২টার দিকে ওই এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখানে এক দম্পতিকে করোনা টিকা দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। এছাড়া ফার্মেসিটি থেকে আরও অনেককে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে।
ফার্মেসি মালিক বিজয় ৫০০ টাকার বিনিময়ে এক ডোজ টিকা দিচ্ছিলেন বলেও জানা গেছে। দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক আফতাব উদ্দিন গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ফার্মেসি মালিক কীভাবে মডার্নার এসব টিকা পেলেন, তা জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে।
এদিকে ফার্মেসিতে টিকা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, তদন্ত করে এ ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, তা বের করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আর বিশেষজ্ঞদের মত, ব্যবস্থাপনা সংকটেই এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, টিকা চোরাকারবারিদের ধরতে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। খোঁজা হচ্ছে টিকা পাচারকারীদেরও।
দেশে কোভিড টিকার ক্ষেত্রে দিনকে দিন বাড়ছে চাহিদা। নিবন্ধনের পরও এসএমএস না পাওয়ার কারণে বাড়ছে প্রতিক্ষার প্রহর। কারণ ভাণ্ডারে টিকা স্বল্পতায় কৌশলগতভাবেই চালানো হচ্ছে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম।
গত সাত মাস ধরে দেশে টিকার কার্যক্রম চললেও এ প্রথম ভ্যাকসিন বাইরে পাওয়ার নজির পাওয়া গেছে। খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও এ ঘটনায় স্পষ্ট কিছু না জানিয়ে বলছেন, তদন্ত করা হচ্ছে কারা ভ্যাকসিন স্টোরেজের বাইরে নিয়েছে।
কোভিড টিকা ব্যবস্থা কমিটির সদস্য সচিব ড. শামসুল হক বলেন, প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। অবশ্যই তদন্ত কমিটি হয়েছে, তদন্ত চলছে।এদিকে দক্ষিণখানে ভ্যাকসিনের অবৈধ মজুত পাওয়া নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নড়েচড়ে বসছেন।ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, এ নিয়ে গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।তিনি আরও বলেন, টিকা যাতে কেউ চুরি করে কোনোভাবে বা ভেজাল টিকা বিক্রি বা বাজারজাত করতে না পারে বা পুশি করতে না পারে এ জন্য পুরো রাজধানীতে আমাদের নজরদারি আছে।
তবে, স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কাজ করা বিশ্লেষকদের দাবি, ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি নাকি গাফিলতি সেটি দ্রুত উদঘাটন করা জরুরি।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রিদওয়ান উর রহমান বলেন, এটা অবশ্যই আমাদের ভ্যাকসিন স্টোরেজ ব্যবস্থাপনার মধ্যে দুর্বলতা আছে। এটা যেন আর না ঘটে তার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
দেশে এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করেও টিকা না পাওয়া ব্যক্তি প্রায় পৌনে দুই কোটি। অথচ দিনে প্রথম ডোজ দেওয়া হচ্ছে দুই লাখেরও কম। এ হারে টিকা দেওয়া হলে বর্তমানে নিবন্ধন করা সব ব্যক্তির প্রথম ডোজ নিশ্চিতেই সময় লেগে যাবে ৩ মাসের বেশি সময়।
প্রসঙ্গত রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার ফার্মেসি থেকে দেওয়া হচ্ছে করোনা টিকা। এ তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাত ৯ টার দিকে অভিযানে নামে দক্ষিণখান থানা পুলিশ।
ক্লিনিকে তল্লাশির একপর্যায়ে রোগী বহনের স্ট্রেচারের মধ্যে পাওয়া যায় মডার্নার টিকা। পরে প্রতিষ্ঠানের মালিক বিজয় কৃষ্ণ তালুকদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। প্রতিষ্ঠানের ওষুধের দোকান থেকে মেলে মডার্না টিকার খালি ২০টি বক্স। ক্লিনিক মালিকের তথ্য অনুযায়ী অভিযান চালানো হয় তার বাসাতেও। ফ্রিজ থেকে মেলে আরো কয়েক ডোজ টিকা। পরে আটক করা হয় চিকিৎসক দাবি করা ক্লিনিক মালিক তালুকদারকে। এ ঘটনায় মামলাও করা হয়েছে। বিক্রির জন্য ফার্মেসিতে কীভাবে গেল করোনার টিকা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাও করা হয়েছে।
রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় ‘দরিদ্র পরিবার সেবা সংস্থা’ নামের একটি ক্লিনিকে ৫শ’ টাকায় দেওয়া হচ্ছিল মহামারি করোনারোধক মডার্নার টিকা।