ভোলায় মুগ ও ফেলন ডালের বাম্পার ফলন, কৃষকদের মুখে হাসি

Share the post

মোঃ সামিরুজ্জামান,ভোলা প্রতিনিধিঃ ভোলা জেলায় চলতি রবি মৌসুমে মুগ ও ফেলন ডালের বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, রোগ-বালাই ও পোকার আক্রমণ না থাকায় কৃষকরা স্বস্তিতে ডাল চাষ করেছেন। বর্তমানে মাঠে চলছে ডাল সংগ্রহ, শুকানো ও বীজ সংরক্ষণের কাজ।

ডালের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগের পাশাপাশি পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর কৃষি ইউনিটের সহযোগিতায় গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা (জিজিইউএস) প্রদর্শনী প্লট ও নিয়মিত পরামর্শের মাধ্যমে তাদের সদস্য কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে অনেক কৃষক আধুনিক পদ্ধতিতে ডাল চাষে উৎসাহী হয়েছেন এবং ভালো ফলন পেয়েছেন।

জিজিইউএস-এর কৃষি ইউনিটের টেকনিক্যাল অফিসার কৃষিবিদ মুরাদ হাসান চৌধুরী বলেন,
“আমরা শুরু থেকেই আমাদের সদস্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে উৎসাহ দিয়ে আসছি। উন্নত জাতের বীজ, সঠিক সময়ে বপন ও পরিচর্যার ফলে তারা এখন অনেক বেশি ফলন পাচ্ছেন। এ বছর মুগ ও ফেলন ডালের ফলন আশানুরূপ হয়েছে এবং কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। আমাদের লক্ষ্য ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং কৃষকদের আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা।”

দৌলতখান উপজেলার কৃষক রাসেল জানান, “এই বছর ডালের ফলন ভালো হয়েছে। যদি ভালো দাম পাই, তাহলে আগামী বছরও ডাল চাষ করব।”

উত্তর জয়নগরের কৃষক শেখ ফরিদ বলেন, “আগে ছোট ডাল করতাম, লাভ হত না। এবার অফিস থেকে বড় জাতের ডাল দিয়েছে, সেটা করে আমরা লাভবান হয়েছি। সেই ডালের বীজ রেখে দিয়েছি, আগামী বছর সেটা দিয়েই চাষ করব।”

স্থানীয় কৃষাণী আসিয়া বেগম জানান, “এ বছর ডাল ভালো হয়েছে। তুলে শুকিয়ে রাখছি। আগামী বছর এই ডাল দিয়েই আবার চাষ করব।”

একই এলাকার বিলকিস বেগম বলেন, “নিজের জমিতে চাষ করলে পুরো ফসল নিজেই পাই। আর অন্যের জমিতে কাজ করলে দশ ভাগে এক ভাগ বা কখনো বারো ভাগে এক ভাগ ডাল পাই।”

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ খায়রুল ইসলাম মল্লিক জানান, “এই রবি মৌসুমে ভোলা জেলায় ২৮,৬৫৫ হেক্টর জমিতে ডাল চাষ হয়েছে। উন্নত জাতের মধ্যে বারি মুগ-৬ সবচেয়ে জনপ্রিয়, যা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জমিতে ব্যবহার হয়েছে। এছাড়া কিছু জায়গায় বিনা মুগ-৮ ও বারি মুগ-৭ চাষ হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ১.৪ মেট্রিক টনের মতো হতে পারে। যদিও সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে, তবে যদি তা আরও আগে হতো, ফলন আরও ভালো হতে পারত। মাঠ পরিদর্শনে দেখা গেছে, অধিকাংশ কৃষক একাধিকবার ফসল তুলেছেন। দামও সন্তোষজনক—প্রতি কেজি মুগ ৯০ থেকে ১০০ টাকা, এবং বড় দানা হলে ১০৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি আগামীতে ভোলায় ডালের চাষ আরও বাড়িয়ে ৩০ হাজার হেক্টর বা তার বেশি করা সম্ভব হবে। কৃষক যেন আরও লাভবান হয়, সে লক্ষ্যে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে মার্কেট লিংকেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

চরফ্যাশনে দুই ভাইকে পুড়িয়ে হত্যা: তিনজনের মৃত্যুদণ্ড, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি

Share the post

Share the postমোঃ সামিরুজ্জামান, ভোলা প্রতিনিধি:  ভোলার চরফ্যাশনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুই সহোদরকে গলা কেটে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার মতো ভয়াবহ ও নৃশংস ঘটনায় তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘ তিন বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটলো নিহতদের পরিবারের। বুধবার দুপুরে চরফ্যাশনের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক শওকত হোসাইন এই চাঞ্চল্যকর […]

জোয়ারের পানিতে ভাসছে ভোলা: ২০ গ্রাম প্লাবিত, হাজারো মানুষ পানিবন্দি

Share the post

Share the postমোঃ সামিরুজ্জামান, ভোলা প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ এবং অমাবস্যার সম্মিলিত প্রভাবে ভোলার মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়েছে, বিশেষ করে বাঁধের বাইরের অন্তত ২০টি গ্রাম এখন পানির নিচে। আকস্মিক এই বন্যায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট, […]