ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নৌকাডুবির ঘটনায় ২২ মরদেহ উদ্ধার
বালুবাহী ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষের পর আরেক ট্রলারের ধাক্কায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে শতাধিক যাত্রী নিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। নিখোঁজ আছেন আরো অনেকে। নিখোঁজদের সন্ধানে লইসকা বিলে শনিবার সকাল থেকে আবার উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে।
রাতে উদ্ধার কাজ বন্ধ থাকার পর সকাল ৮ টার দিকে তা আবার শুরু হয়েছে অভিযান। তবে এখনো ডুবে যাওয়া নৌকাটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধারকৃতদের মরদেহ রাতেই নিজ নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের পৈরতলা এলাকার আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫) ও ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজলা বেগম, দাতিয়ারা এলাকার মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মিম (১২), সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের সাদেকপুর গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে তানভীর (৮) ও চিলোকুট গ্রামের আবদুল্লাহ মিয়ার শিশুকন্যা তাকুয়া (৮), নরসিংসার গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (৭), ভাটপাড়া গ্রামের ঝারু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮), বিজয়নগরের ফতেহপুর গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে আরিফ বিল্লাহ (২০), বেড়াগাঁও গ্রামের মৃত মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪৭) এবং তাঁর মেয়ে মুন্নি (১০), আবদুল হাসিমের স্ত্রী কমলা বেগম (৫২), নূরপুর গ্রামের মৃত রাজ্জাক মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম (৫০), আদমপুর গ্রামের অখিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনী বিশ্বাস (৩০) ও পরিমল বিশ্বাসের মেয়ে তিথিবা বিশ্বাস (২), বাদেহাড়িয়ার কামাল মিয়ার শিশুকন্যা মাহিদা আক্তার (৬), মনিপুরের মৃত আবদুল বারীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৫৮) এবং ময়মনসিংহের খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম (৪৫)। বাকি তিনজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় লোকজন, প্রত্যক্ষদর্শী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চম্পকনগর ঘাট থেকে ১৫০ থেকে ২০০ জন যাত্রী নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের উদ্দেশে রওনা করে নৌকাটি। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তিতাস নদের উপজেলার লইছকা বিলে বালুবাহী একটি স্টিলের নৌকার সঙ্গে যাত্রীবাহী নৌকার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
সে সময় যাত্রীবাহী নৌকাটির পেছনে আরেকটি বালুবাহী নৌকা ছিল। এটিও যাত্রীবাহী নৌকাটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে যাত্রীবাহী নৌকাটি উল্টে ডুবে যায়। সামনে থেকে ধাক্কা দেওয়া নৌকাটি ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। নৌকার যাত্রীদের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে উদ্ধারকাজে নামেন। খবর পেয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
মরদেহ পরিবহনের জন্য পরিবারপ্রতি ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। এদিকে দুর্ঘটনার পর ধাক্কা দেয়া বালুবাহী ট্রলারের ৩ কর্মীকে আটক করা হয়। ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন ।
শুক্রবার বিকেলে চম্পকনগর ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে আনন্দ বাজার ঘাটে যাচ্ছিল নৌকাটি। সোয়া ৫টার দিকে লইসকা বিলে বালুবাহী ট্রলারের ধাকায় ডুবে যায় সেটি। এর পর পরই উদ্ধার কাজে নামেন স্থানীয়রা। পরে যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
বেশির ভাগ যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠলেও, এখনও নিখোঁজ বেশ কয়েকজন। আহতদের নেয়া হয়েছে ব্রহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে। এদিকে নিহতদের পরিবারপ্রতি ২০ হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।