বাবার কোলে থাকা শিশুকে গুলি করে হত্যা, আটক তিন
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বাবার কোলে থাকা শিশু তাসফিয়া আক্তার জান্নাতকে (৩) গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত বেগমগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জের একাধিকস্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামের মৃত নুরনবীর ছেলে এমাম হোসেন ওরফে স্বপন (৩০), উপজেলার লফিতপুর চৌধুরী মাস্টার বাড়ির সামছুদ্দিনের ছেলে জসিম উদ্দিন বাবার (২৩) ও লফিতপুর গ্রামের ছাদেক মেম্বারের পুরান বাড়ির দেলেয়োর হোসেনের ছেলে দাউদ হোসেন রবিন (১৭)।
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি এ ঘটনায় তিনজনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় ১৬জনকে এজাহারভুক্ত আসামি এবং ১০-১২জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এর আগে বুধবার (১৩ এপ্রিল) বিকেল চারটার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর গ্রামের মালেকার বাপের দোকান নামক স্থানে মাওলানা আবু জাহের (৩৭) ও তার কোলে থাকা ৩ বছরের শিশু তাসফিয়া আক্তার ওরফে জান্নাতকে লক্ষ্য করে স্থানীয় রিমন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই শিশু তাসফিয়ার মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত মাওলানা আবু জাহের এখনও চিকিৎসাধীন। তিনি উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রাসাদ মিয়ার বাড়ির মৃত জানু সরদারের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত রিমন (২৫) একই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনারায়ণপুর গ্রামের দানিজ বেপারী বাড়ির মমিন উল্যার ছেলে। রিমন এলাকার চিহিৃত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
নিহতের মামাতো ভাই ব্যবসায়ী আবদুল্যাহ আল মামুন অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েক দিন আগে আমাদের বাড়ির আল আমিন নামে এক ব্যক্তি জমিনের মাটি বিক্রি করে সন্ত্রাসী রিমনের কাকা বাদশার কাছে। বাদশা ওই জায়গা থেকে ৬ ফুট মাটি কাটে। এরপর আরও মাটি কাটতে গেলে আমাদের বাড়ির লোকজন তাকে বাধা দেয়। কারণ এভাবে মাটি কাটতে গেলে তাদের জায়গা ভেঙ্গে পড়বে। একপর্যায়ে মাটি কাটতে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে সন্ত্রাসী রিমন ও তার সহযোগী রহিম, মহিন, সুজনসহ আরও কয়েকজন গত দুই দিন একাধিকবার আমাদের বাড়িতে এসে গোলাগুলি করে এবং আমার গর্ভবতী ভাগ্নিকে পেটে লাথি দেয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ ওই নারীকে প্রথমে চিকিৎসা দিতে বলে।
মামুন অভিযোগ করে আরও বলেন, মাটি কাটার বিরোধের জের ধরে বুধবার বিকেল ৪টার দিকে সন্ত্রাসী রিমনের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য রহিম, মহিন, সুজনসহ ১০-১৫জন অস্ত্রধারী মালকার বাপের দোকানে এলাকায় অবস্থিত আমার দোকানে এসে আমাকে গালিগালাজ করে। ওই সময় আমার মামা জাহের তার শিশু মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে দোকানে আসে চিপস আর চকলেট কিনে দেয়ার জন্য। সন্ত্রাসী রিমন আমার মামাকে আমার দোকানে দেখে গালমন্দ করে বলে, তোর শেল্টারে এরা এসব করছে। এ কথা বলার সাথে সাথে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোঁড়ে এবং জান্নাতকে ইট দিয়ে আঘাত করে। এরপর মামা দোকান থেকে বের হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে রিমন ও তার বাহিনীর সদস্যরা পিছন থেকে পুনরায় জান্নাতকে এবং মামাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে জান্নাত কানে,মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় এবং মামা চোখে গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ৮টার দিকে জান্নাত মারা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বেগমগঞ্জ সার্কেল নাজমুল হাসান রাজিব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।