পিলখানা হত্যা দিবস আজ

Share the post

আবার ফিরে এলো শোকাবহ সেই ২৫ ফেব্রুয়ারি। পূর্ণ হলো পিলখানা বিদ্রোহ আর হত্যাযজ্ঞের ১১ বছর। যা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কলঙ্কময় দিন। আজ কান্নায় ভারি হয়ে উঠবে সেই সব পরিবার যারা হারিয়েছে স্বামী, সন্তান। দেশ হারিয়েছে স্বর্ণ সেনাদের যারা এক এক জন ছিলেন দেশের সম্পদ।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় সকাল ৯টার দিকে বনানী সামরিক কবরস্থানে মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানরা (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

২০০৯ সাল এই দিনে বাংলাদেশ রাইফেলস বা তৎকালীন বিডিআরের জওয়ানরা (বর্তমানে বিজিবি) সশস্ত্র বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে। নৃশংস এই ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো দেশ। আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে বিশ্ব জুড়ে।

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। বুধবার সকাল ৯টা ২৭ মিনিট। পিলখানার ভেতর থেকে ভেসে আসে গুলি বর্ষনের শব্দ।  প্রথমে সেখানে বসবাস করা অনেকেই ভেবেছিলেন নিয়মিত মহড়া। কিন্ত ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই জানা যায় বিদ্রোহের ঘটনা। এলাকা জুড়ে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক।

সেদিন বর্তমান বিজিবি সদর দফতরে ছিল বার্ষিক দরবার। দরবার চলাকালীন একদল বিদ্রোহী সৈনিক ঢুকে পড়ে। এদের একজন তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালকের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। বিদ্রোহী সৈনিকরা সেনা কর্মকর্তাদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুখে লাল কাপড় বেঁধে, বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে জওয়ানরা ছড়িয়ে পড়ে পুরো পিলখানায়। তারা সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করে তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে। চারটি প্রবেশ গেট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশেপাশের এলাকায় গুলি ছুড়তে থাকে বিদ্রোহী সৈনিকরা। তাদের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়তে থাকে মেধাবী সেনা কর্মকর্তারা।

সেইদিন সকাল পৌনে ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর প্রথম আর্মড পার্সোনাল ক্যারিয়ার বা এপিসি পৌঁছায় ধানমন্ডিতে। বিকেলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীসহ দুইজন সংসদ সদস্য শান্তির পতাকা নিয়ে পিলখানায় ঢোকেন। বিদ্রোহী সদস্যরা তাদের দাবির কথা জানাতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যান। চলে বৈঠক। রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র সমর্পন করে কিছু সদস্য। জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হয়ে আসেন কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। পরদিন রাতে রেডিও-টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে বিদ্রোহের পথ থেকে সরে আসার জন্য বিদ্রোহী সদস্যদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বিদ্রোহী জওয়ানেরা অস্ত্র সমর্পণে সাড়া দেয়ার পর ২৭শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পিলখানার ভেতরে ঢোকে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাসহ অন্যদের মরদেহ। পাওয়া যায় গণকবর। একটি রক্তাক্ত অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় শ্বাসরুদ্ধকর তিনটি দিন।

এ হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, ১ জন সৈনিক, দুই জন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ জন বিডিআর সদস্য ও পাঁচ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়। পিলখানায় এ  বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআরের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে যায়।

বিডিআরের নাম, পোষাক লোগো, সাংগঠনিক কাঠামো, পদোন্নতি ইত্যাদি ব্যাপারে পুনর্গঠন করা হয়। নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পরিবর্তন করা হয় বিডিআর বিদ্রোহের আইন। বর্ডার গার্ড আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা রাখা হয় মৃত্যুদণ্ড। বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় বিশেষ আদালত ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন।

সরকার বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাটিকে ‘পিলখানা হত্যা দিবস’ হিসেবে প্রতি বছর পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিবসটি পালন উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি।

মঙ্গলবার বিকেলে বাদ আছর সাড়ে ৪টায় শহীদ ব্যক্তিদের রুহের মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে পিলখানা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দফতরসহ সব রিজিয়ন, সেক্টর, প্রতিষ্ঠান ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় খতমে কোরআন, বিজিবি’র সব মসজিদে এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Releated

ইসরায়েল এর পণ্য বর্জনে ছাত্রদলের বিক্ষোভ”

Share the post

Share the postমাহমুদুল ইসলাম সাগর জেলা প্রতিনিধি ঃফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সাভার সরকারি কলেজ ছাত্রদল বিক্ষোভ করে ইসরাইলি পণ্য বর্জনের  আহবান জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করের নেতাকর্মীরা।  (৮ এপ্রিল) বেলা  প্রায় ১১টায় সাভার সরকারি কলেজ মাঠ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ইয়ামিন চত্বরে গিয়ে  মাধ্যমে শেষ হয়। এ কর্মসূচিতে […]

আশুলিয়ায় “গাজায়” ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল

Share the post

Share the postমাহমুদুল ইসলাম সাগর জেলা প্রতিনিধি :ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সাধারণ মুসলিম জনতা। সোমবার (৭এপ্রিল) দুপুরের আশুলিয়ার জামগড়া রাস্তা থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি শিমুলতা মহাসড়ক পর্যন্ত প্রদক্ষিণ  করে এই কর্মসূচী পালন করেন এলাকাবাসী। বিক্ষোভকারীদের কণ্ঠে শোনা যায়, ‘ইসরায়েলের কালো হাত, […]