পদ্মায় চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন
তালুকদার রাসেল,স্টাফ রিপোর্টার: ঈশ্বরদীতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বালু ও মাটি উত্তোলন । প্রতিদিন রাত থেকে ভোর পর্যন্ত পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর দিনের আলোতেই পদ্মা নদীর পার থেকে খনন করা হচ্ছে মাটি। মাটি বিক্রি করা হচ্ছে লক্ষীকুন্ডার অবৈধ ইটভাটাসহ বিভিন্ন এলাকার ক্রেতাদের কাছে। প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার মাটি ও বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে বছরে কয়েক শত কোটি টাকার ব্যবসা করছে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলনকারীরা । অথচ সরকারকে দেওয়া হচ্ছে না কোনো রাজস্ব। তবে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন ও নদীর পার থেকে মাটি খনন বন্ধের জন্য পাকশী নৌ পুলিশ ফাঁড়ি দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও অবৈধ ব্যবসায়ী চক্রের বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না নৌ পুলিশের দাবি, তারা বলছেন তাদের প্রয়োজনীয় লোকবল ও পরিবহন ব্যবস্থা নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদ্মা নদীর ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের প্রায় ছয়টি পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
একই ইউনিয়নের পদ্মাপারের শত শত একর ফসলি জমির মাটি এক্সকাভেটর দিয়ে কেটে ইটভাটাগুলোতে বিক্রি চলছে। ফলে প্রতিনিয়ত এই অঞ্চলে কমছে আবাদি জমি। অন্যদিকে উপজেলার সাঁড়া থেকে লক্ষ্মীকুণ্ডা পর্যন্ত পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে রাতের আঁধারে ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। পরে এসব বালু নেওয়া হচ্ছে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পারে স্থাপিত বালুখোলাগুলোতে। আর বালু ও মাটি চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নৌ পুলিশ ফাঁড়িসহ উপজেলা প্রশাসনের কেউ কেউ লাভের অংশ পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় প্রশাসনকে ভাগ দেওয়ার মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন ও নদীর পার থেকে মাটি খনন করে তা বিক্রি করে আসছে। এই চক্রের গোটা পদ্মা নদীই যেন তাদের দখলে। তাদের চুক্তিমতো টাকা দিয়েই এই চক্র বালু ও মাটি উত্তোলন করছে। এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের অধীন পাকশী ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগে বিগত ১৫ বছর ধরে পদ্মা নদীতে আধিপত্য বিস্তারকারী কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবে সেই অভিযোগ থানা থেকে পরবর্তী সময়ে গায়েব হয়ে যায়। এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদীতে তেমন কোনো জোড়ালোভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। সূত্রগুলো মতে আরো জানা যায়, বালুখাদকরা দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করে আসছেন। কিন্তু এ কাজে প্রভাবশালী লোকজন জড়িত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। তবে বেশ কিছুদিন আগে পাবনা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জেলা ও ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাঁড়ার মাঝদিয়া বালুমহাল, লক্ষ্মীকুণ্ডার বালু ও মাটিমহালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেসব অভিযানে কয়েকটি ড্রেজার মেশিন ভেঙে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। আর বেশ কিছু ড্রাম ট্রাক, ট্রাক্টর ও এক্সকাভেটর জব্দ করে তা স্থানীয় ইউপি সদস্যদের জিম্মায় দেওয়া হয়। গভীর রাতে পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন ও লক্ষ্মীকুণ্ডায় নদীপারের মাটি অবৈধভাবে বিক্রয়ের বিষয়ে পাকশী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল জলিল বলেন, ‘পদ্মা নদী থেকে গোপনে বালু উত্তোলন করার খবর জানতে পেরেছি। প্রয়োজনীয় পরিবহন ও জনবলের সংকটের কারণে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তারপর যখন যাওয়া হয় তখন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কারীরা নৌকা নিয়ে মাঝনদীতে চলে যায়। বাধ্য হয়ে তখন আমাদের ফিরে আসতে হয়। তবে কারা বালু উত্তোলন করছে তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।