নেত্রকোনার বারহাট্টায় যুগের পর যুগ ধরে অবহেলিত পরিচ্ছন্ন কর্মীরা
সোহেল খান দূর্জয়,নেত্রকোনা : নেত্রকোনার বারহাট্টায় রেল স্টেশনের পশ্চিম পাশে ভাঙ্গা একটি পরিত্যক্ত ভবনে বসবাস করে আসছে বারহাট্টা উপজেলার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। জানা যায় যুগের পর যুগ ধরে তারা এখানে বসবাস করে আসছেন কিন্তু তাদের খবর কেউ রাখে না,সবাই তাদের মেথর বলে ডাকে। ধীরে ধীরে তাদের পরিবার বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৮ পরিবার হয়ে যাওয়ায় জায়গা সল্পতার কারনে বসবাস করতে অসুবিধা হচ্ছে। ছোট্ট একটি জায়গার চতুর্দিকে পানি। অল্প বৃষ্টি হলেই উঠানে ও ঘরের ভেতর পানি জমে যায়। তাই বর্ষাকাল এলেই তারা স্টেশনের প্লাটফর্মে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। স্টেশনেই তাদের শেষ আশ্রয়স্থল।
বারহাট্টা উপজেলার এসব মেথরদের দুরবস্থা দীর্ঘদিনের। প্রতিনিয়ত তারা চোখের সামনে থাকলেও এই সব ছিন্নমূল পরিবার গুলোর খবর কেউ রাখে না।আরো জানা যায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের চাকরীর কোটা থাকলেও তারা চাকরি পায় না। ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারগুলো আশ্রয়নের ঘর পেলেও তারা ঘর পায় না। প্রাইমারী স্কুলের উপবৃত্তি সিস্টেম চালু থাকলেও তাদের সন্তানদের পড়াশোনার সুযোগ মিলে না। কাগজে কলমে সুযোগ থাকলেও তাদের সন্তানরা স্কুলে গেলে সকলেই তাদের ঘৃণার চোখে দেখে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এই ৮টি পরিবারের প্রধানরা হলো গোপাল হরিজন, লালচান হরিজন, মালা হরিজন, সুমন হরিজন,সাগর হরিজন, মানিক হরিজন, জয় হরিজন ও সৈকত হরিজন। তারা বর্তমানে খুব অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
তারা বলেন, আমাদের কোনো চাকরী নেই। আমরা মেথর, এখন এই মেথরের কাজ মুসলমানরা করে ফেলে। হাসপাতালে, স্কুল কলেজে আমাদের চাকরি থাকার কথা কিন্তু আমাদের চাকরি নেই। আমাদের থাকার ঘর নেই। একটু ঝড়বৃষ্টি হলেও আমরা দৌড়ে গিয়ে স্টেশনে আশ্রয় নেই। আমরা কি জনপ্রতিনিধিদের ভোট দেই না। আমাদের ভোটের কি কোনো দাম নাই। তাহলে আমাদের খবর কেউ রাখে না কেন? কত মানুষ সরকারি ঘর পেয়েছে আমাদের ঘর নাই কেন। আমাদের সন্তানদের পড়াশোনা করাতে পারি না কেন। সকলেই আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের ঘৃণার চোখে দেখে। এবিষয়ে গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু ছালেক বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবৎ এদের কষ্ট দেখছি। এরা খুব কষ্টে জীবনযাপন করে। একটু বৃষ্টি হলেই এদের ঘরে পানি জমে যায়। এর পর তারা এই স্টেশনে আশ্রয় নেয়। আমাদের সরকারের কাছে অনুরোধ রইলো এই পরিবার গুলোকে যেনো একটু থাকার পরিবেশ করে দেয়।
বারহাট্টা সদর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন,আমি এই বছর তাদের যাতায়াতের রাস্তায় মাটি কেটে দিয়েছি। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের জন্য কিছু করার ব্যবস্থা করবো। আমি জানি তারা অনেক কষ্টে আছে। একটু বৃষ্টি হলেই তাদের ঘরে পানি জমে যায়। তাদের চলতে ফিরতে নানান রকমের কষ্টের শিকার হতে হয়। তাই আমি সকলের কাছে অনুরোধ করবো তাদের প্রতি একটু খেয়াল রাখার জন্য। তারা মেথর হলেও তো মানুষ।
এবিষয়ে বারহাট্টা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বারহাট্টা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মানিক আজাদ বলেন, আমি বিগত সময় একটি পরিবারকে থাকার জন্য ঘর করে দিয়েছিলাম। সেই ঘরটি এখন ভেঙ্গে গেছে। আমি এখন সরকারের দায়িত্বে যারা আছেন তাদেরকে অনুরোধ করছি তারা যেনো দ্রুত সময়ের মধ্যে এই পরিচ্ছন্ন কর্মীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বারহাট্টা উপজেলা পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ খবিরুল আহসান বলেন, তাদের অনেক সরকারি সহযোগিতা করা হয়েছে, এতো সহযোগিতা করার পরও তারা স্টেশনে থাকতে পছন্দ করে।